আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে কঠোর পরিশ্রম করছেন,পরামর্শদাতার সাথে আলোচনা করছেন এবং সব ধরণের যোগ্যতা থাকার পরেও আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারছেন না। চিন্তার কোন কারণ নেই, সব সমস্যার মত এই সমস্যারও সমাধান আছে। কর্মজীবনে উন্নতি করা যেমন একজন কর্মী জন্য গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনই একটি প্রতিষ্ঠানের জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিষ্ঠানের কর্মী ধরে রাখা ও তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সকল প্রতিষ্ঠানের উচিত তাদের কর্মজীবনে উন্নতি করার সুযোগ করে দেয়া। হয়তো আপনি আপনার পছন্দের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কিন্তু এক পদে তো সবসময় থাকতে চান না। আপনার কঠোর পরিশ্রম ও যোগ্যতা থাকার পরেও আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত পদে পৌছাতে না পারেন তাহলে তাহলে বুঝতে হবে আপনার চাকরিটি ক্যারিয়ারের উন্নতি জন্য মানানসই নয়।
সবাই কর্মজীবনে উন্নতির জন্য কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করে থাকেন।এর মধ্যে কিছু লক্ষ্য আছে যা বাস্তবায়ন করা কঠিন ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার এবং যার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। একটি বাস্তবসম্মত ক্যারিয়ার পরিকল্পনা আপনার পথপ্রর্দশক হতে পারে যার সাহায্যে ক্রমান্বয়ে আপনার সকল লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন।এছাড়াও আর কি করলে আপনি দ্রুত গতিতে আপনার লক্ষ্যে পৌছাতে পারবেন তা নিয়ে আলোচনা করা হল।
নিজের পছন্দের দিকে নজর রাখা
আমরা অনেক সময় নিজের পছন্দের কথা বিবেচনা না করেই এমন ক্যারিয়ার বেছে নেই যা থেকে আমরা বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবো। অর্থের জন্য আমরা অনেক সময় অপছন্দের পেশা বেছে নেই। কিন্তু আপনি যদি আপনার কাজকে ভালবাসতে না পারেন তাহলে আপনি যতই পরিশ্রম করুন না কেন সফলতা লাভ করতে পারবেন না। তাই আমাদের উচিত নিজের পছন্দের কর্মক্ষেত্রে কাজ করা যেখানে কাজ করে আপনি সন্তুষ্ট থাকবেন আপনার মধ্যে আত্নতৃপ্তি বোধ থাকবে। তাহলেই আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারবেন।
কঠোর পরিশ্রম
আমরা সবাই জানি, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। সাফল্যের সিড়ি উঠতে হলে কঠোর পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। সুতরাং কর্মজীবনে উন্নতি করতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতেই হবে।
ইতিবাচক মনোভাব
আপনাকে যদি এমন কাজ দেয়া হয়ে থাকে যা আপনার যোগ্যতা থেকে নিচে, তারপরেও কাজটি করতে থাকুন। অধিক যোগ্যতাসম্পন্ন হয়েও যদি আপনি সব কাজ সমান দৃষ্টিতে দেখেন তাহলে আপনার এই ইতিবাচক মনোভাবের কারণে আপনি সবার কাছ থেকে স্বীকৃতি পাবেন।এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যদি আপনার কাজের প্রতি নজর রেখে থাকেন তাহলে তারা আপনাকে অন্যান্য কাজের ও দায়িত্ব প্রদানের জন্য একজন উপযুক্ত প্রার্থী মনে করবেন।
কাজের প্রতি নিজেকে উৎসর্গ করা
আপনাকে সকল পরিস্থিতিতে সর্বদা প্রতিষ্ঠানের সাথে থাকতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অতিরিক্ত দায়িত্ব নেয়ার মন মানসিকতা থাকতে হবে।কাজের প্রতি আপনার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা এবং নিজেকে উৎসর্গ করাও একটি দক্ষতা যা সকল নিয়োগকর্তা কর্মীদের কাছ থেকে আশা করেন।
পরামর্শদাতা খুজে বের করা
আমাদের সবার জীবনে একজন পরামর্শদাতা থাকা উচিত যাদের কাছ থেকে আমরা প্রয়োজন অনু্যায়ী বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারি। আপনি যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে কাউকে পরামর্শদাতা হিসেবে খুঁজে নিলে ভালো হয়।অনেকেই পরামর্শদাতাদের সাথে শুধু প্রয়োজনের সময় যোগাযোগ করে থাকেন যা মোটেই ঠিক নয়। তাদের সাথে সবসময় সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে এবং তাদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।এছাড়া আপনার যদি পরামর্শদাতা খুজে পেতে সমস্যা হয় তাহলে অনলাইনে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদানকারী গ্রুপ আছে,এসব গ্রুপে জয়েন করতে পারেন।
দক্ষতা বৃদ্ধি করা
আপনার যত বেশি দক্ষতা থাকবে, আপনার কর্মজীবনে উন্নতির পথ তত মসৃণ হবে। বর্তমানে আপনাকে দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রচুর টাকা এবং অনেক সময় ব্যয় করার কোন প্রয়োজন নেই। অনলাইনে বিভিন্ন ধরণের কোর্স রয়েছে যা থেকে আপনি আপনার প্রয়োজন ও পছন্দ অনু্যায়ী কোর্স করতে পারবেন।কোর্স সম্পন্ন করার পর আপনাকে সার্টিফিকেট দেয়া হবে যা আপনি আপনার জীবন বৃত্তান্ততে যোগ করতে পারবেন।এ কোর্সগুলো আপনার দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করবে এবং আপনার কর্মজীবনে উন্নতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
নেটওয়ার্কিং
কর্মজীবনে নেটওয়ার্কিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষেত্রে সিনিয়র,জুনিয়র,কলিগ সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। শুধু প্রতিষ্ঠানের ভেতরে নয়, এর বাইরেও নেটওয়ার্কিং গড়ে তুলতে হবে।আর যারা এখনও চাকরিপ্রার্থী তাদের সবসময় মনে রাখা উচিত বেশিরভাগ চাকরি ব্যক্তিগত যোগাযোগ বা সুপারিশের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাই নেটওয়ার্কিংকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আপনি আপনার বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারেন। এছাড়াও লিংক ইনড,বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নেটওয়ার্কিং করতে পারেন। নতুন কারো সাথে যোগাযোগের পূর্বে নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিন। কীভাবে কথা শুরু করবেন,কোন বিষয়ে আলাপ করবেন তা আগে থেকে ঠিক করে রাখুন।
পেশাগত ইভেন্টে অংশগ্রহণ
শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার আরেকটি উত্তম উপায় হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের পেশাগত ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণ করা।যেখানে সব পেশার মানুষ একত্রিত হয়ে থাকেন। এভাবে আপনি অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারবেন এবং তাদের অর্থপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন। ভবিষ্যতে এ সম্পর্কগুলো আপনার কাজে লাগতে পারে।
কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো হাতে নিন
আপনি নিজে থেকে কোম্পানির কিছু গুরুত্বপুর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব গ্রহন করুন। যে প্রকল্পগুলো তুলনামূলকভাবে একটু কঠিন,যা সাধারনত সবাই হাতে নিতে চায় না। আপনি যদি প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারেন তাহলে কর্মক্ষেত্রে আপনার মর্যাদা অনেকাংশে বেড়ে যাবে। এবং আপনার নিয়োগকর্তা বুঝতে পারবেন যে তিনি একজন উপযুক্ত প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়েছেন। সেইসাথে আপনার উচ্চ পদে নিয়োগের সম্ভাবনাও বাড়বে।
নিজে থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করা
আপনার নিয়োগকর্তা যদি আপনাকে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব না দেন, তাহলে আপনি নিজে থেকে দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করুন।এবং আপনি যদি দায়িত্বটি সফলতার সাথে সম্পন্ন করেন তাহলে নিয়োগকর্তা ধীরে ধীরে আপনাকে আরো দায়িত্ব দিতে শুরু করবেন।
সফলতা অর্জনের অনেক শর্টকাট পন্থা রয়েছে,কিন্তু তা দীর্ঘমেয়াদী নয়। সবসময় মনে রাখবেন,পরিশ্রমের মাধ্যমে সত্যিকারের সফলতা অর্জন করা যায়। তাই পরিশ্রম করতে থাকুন এবং সেইসাথে উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন।আশা করি,সফলতা জলদি আপনার হাতে ধরা দেবে।