ঘড়ির কাটা টক টক করে এগিয়ে যাচ্ছে নিজ নিয়মে। রাতের আধার কাটিয়ে সূর্যটা পূর্ব আকাশে মুচকি হাঁসি দিয়ে জানান দেয় সকাল হয়েছে ও দক্ষিণ আকাশ পারি দিয়ে পশ্চিম আকাশে অদৃশ্য হয়ে জানান দেয় সন্ধ্যা হয়েছে, ঘনিয়ে আসছে রাতের অন্ধকার। এভাবেই দিন যাচ্ছে, সপ্তাহ যাচ্ছে, মাস যাচ্ছে, বছর যাচ্ছে, যুগ যাচ্ছে। সময়ের সাথে পরিবর্তন হচ্ছে অনেক কিছু, আফগানিস্তান ক্রিকেট পেয়েছে টেস্ট খেলার স্বীকৃতি। তবে পরিবর্তন হয়নি শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভাগ্য। দেখতে দেখতে পার হয়ে গেল দুই দশক। সেই দুই দশক আগেও আমাদের দোয়া করতে হত বৃষ্টি আসার জন্য এখনও দোয়া করি বৃষ্টি নামার জন্য। কেন আমাদের বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে হয় এই প্রশ্নের উত্তর কি আছে?
এইতো কয়েকবছর আগের কথা। আমরা নিয়মিত চারজন পেসার নিয়ে মাঠে নামতাম। যেখানে সবসময় স্পিনেই ছিল আমাদের একমাত্র ভরসা সেখানে আমরা চারজন পেসার নিয়ে খেলতে নামতাম। এটা কল্পনার বাহিরেই বটে। এবার জানা যাক হঠাৎ এমন পরিবর্তন কিভাবে আসল। তখনকার সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পেস বোলিং কোচ ছিলেন হিথ স্ট্রিক। তার জাদুর ছোঁয়ায় এক আকস্মিক পরিবর্তন দেখা দেয় পেস বোলারদের মাঝে। অভিজ্ঞ মাশরাফি বিন মর্তুজা অবশ্য শুরু থেকেই ভাল খেলে আসছিলেন। তিনি ছাড়া পেস বোলিংয়ে হাল ধরার মত কেউই ছিলেন না। রুবেল হোসেন মাঝে মধ্যে চমৎকার দেখালেও নিয়মিত পারফর্ম করতে পারতেন না তিনিও। হিথ স্ট্রিক তাদেরকে আরও ধারালো করে তোলেন। তাদেরকে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলেন। তাছাড়াও এই দুজন পেসারের পাশাপাশি আরও দুজন পেসারকে যুক্ত করেন তিনি। তারা হলেন মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ। তখনকার সময়ে বাংলাদেশের বোলিং এটাক হয়ে উঠেছিল বিশ্বের জন্য আতংক। এর পাশাপাশি ব্যাটসম্যানরাও হয়ে উঠেছিলেন বেশ ভাল পারফর্মার। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ হঠাৎ চমক দেখাতে শুরু করলে সবাই সেটাকে মিরাকেল হিসেবেই ভেবে নিত। তবে যখন তারা নিয়মিতই ভাল পারফর্ম করতে শুরু করে তখন আর কারো সন্দেহ রইলো না যে বাংলাদেশ ক্রিকেটে এক নতুন সূর্যের উদয় হয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০১৮, বাংলাদেশ ক্রিকেটের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছে বিশ্বের সকল পরাশক্তিরা। তবে হঠাৎ হিথ স্ট্রিকের বিদায়ের পর থেকেই বাংলাদেশ পেস বোলিংয়ে নেমে আসে অন্ধকার। তার সাথে ক্রিকেট বোর্ডের নানা অনিয়ম ও অবহেলার মত কারণও রয়েছে। বাংলাদেশ পেস বোলিংয়ের আকাশ থেকে ঝড়ে যেতে থাকে একেকটি নক্ষত্র। তাসকিন, রুবেলের পরে এবার মুস্তাফিজুর রহমান। যার ভয়ে কাঁপত পুরা বিশ্ব আজ তিনিই হারিয়ে খুঁজছেন নিজেকে।
এ দায় কার?
বাংলাদেশ ক্রিকেটের এমন বেহাল দশার জন্য কারা দায়ী?
আছে কি কারো কাছে এমন প্রশ্নের উত্তর?
কারণটি অবশ্য স্পষ্ট সকল ভক্তদের কাছে। ক্রিকেট বোর্ডে রাজনীতির অন্তর্ভুক্তি, দূর্ণীতি, দায় হীনতা ও জবাবদিহিতার অনিচ্ছা মূলত এর জন্য। সাবেক বিসিবি বোর্ড সদস্য সুজন মাহমুদ একাই নিযুক্ত ছিলেন ১১ টি পদে যেখান থেকে প্রতি মাসে তিনি স্যালারি পেতেন ৩০ লক্ষ টাকা। এটা কি দূর্ণীতি, অনিয়ম, নাকি অন্য কিছু?
একই প্রতিষ্ঠানের ১১ টি পদে একজন ব্যাক্তি কিভাবে নিযুক্ত থাকেন সেটা আমার বোধগম্য নয়। তাছাড়া তিনি যে পুরোপুরি অযোগ্য ছিলেন সেটা তিনি প্রতিদিনই প্রমান দিয়ে যেতেন। এছাড়াও বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপনের দায়হীনতা ও জবাবদিহিতার অনিচ্ছা ও বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকারের দিকে। যেখানে প্রতিটি দেশের ক্রিকেট বোর্ড তরুণ ক্রিকেটার তৈরি করার জন্য খরচ করছেন কোটি কোটি টাকা সেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট রেডিমেট ক্রিকেটারের জন্য। নিজ প্রচেষ্টায় মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেনের মত তরুণ ক্রিকেটাররা উঠে আসলেও তারা আবার হারিয়ে যাচ্ছে বোর্ড প্রেসিডেন্টের অবহেলার কারণে।
পরিশেষে এটাই বলা যায় যে, বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আরও দুই দশক পিছিয়ে নেওয়ার জন্য এই বোর্ড প্রেসিডেন্ট ই দায়ী।