কুমিল্লা নগর উদ্যানের ‘চড়কি বাবুলের’ গল্প
হুমায়ূন কবীর জীবন
নাম তার বাবুল মিয়া। বাড়ি- কাপ্তান বাজার। এক মেয়ে দুই ছেলেসহ স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। গতকাল দৈনিক কুমিল্লার কাগজে এই প্রতিবেদকের সাথে লুকিয়ে থাকা কষ্টের দিনের কথা বলেছেন আবেগ ও কান্নাকণ্ঠে জড়িত করুণ কথাগুলো স্পর্ষ করে আগত বিনোদনের দর্শনার্থীদের। তিনি জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে পৌর পার্কে এসেছিলেন। সেই সময়ে চড়কি নিয়ে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। আজও তিনি চড়কির মায়ায় এখানেই পড়ে আছেন।
বাবুল মিয়া জানান অনেক শিশুর প্রতি ভালোবাসার কথা। ‘বিভিন্ন স্কুলের ছেলেমেয়েরা আসে, তাদেরকে আমি চড়াই। অনেকে টাকা দেয় আমার অনেকে টাকা না দিলেও কিছু বলিনা। কারণ আমিও তো কারোর সন্তান ছিলাম। বর্তমানে আমার ছেলেমেয়েও আছে। তাই অসহায়দেরকেও আমি চড়তে দেই।’
তিনি বলেন, জীবনের পুরো সময়টাই এই পার্কে কাটিয়ে দিলাম। সবার ভাগ্য পরিবর্তন হলেও আমার ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ের আগে আমি প্রবেশ করি। আমার এই চড়কি উপর দিয়ে ওই সময় যুদ্ধকালীন যুদ্ধবিমান গিয়েছিলো। তখন আমি চড়কি নিচে ছিলাম। ওই সময়ে পৌর পার্ক সবুজের হাতছানিতে ঢাকা ছিল। কিছু খেলনাও ছিল। তার মধ্যে দোলনা, স্লিপার, আমার চড়কি, আর কিছু মাটি-সিমেন্টের তৈরি নির্মিত পশু পাখি। সেই স্মৃতির পৌর পার্ক এখন আর নেই। যুগের সাথে পরিবর্তন হয়ে গেছে। আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে। কিন্তু আমার চড়কি এখনো আমি হাতেই চালাই এবং যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চালাচ্ছি। ১৯৭১ সালের আগে ও পরে এক টাকা দুই টাকা করে নিতাম। সারাদিনে ৬০-৭০ টাকা হতো। ওই সময়ে ওই টাকার খুব মূল্য ছিল। বর্তমানে ১০ টাকা ৫ টাকা কিংবা অনেক গরিবকে বিনামূল্যে চড়াই। এখন ২০০-২৫০ টাকা পাই। এক মেয়ে ও দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। সারাদিন পৌর পার্ক থেকে রাতে চলে যাই কাপ্তান বাজার বাড়িতে।
বাবুল বলেন, আমি এই চড়কি ছাড়া জীবনে অন্য কিছু শিখি নাই। প্রাইমারি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। টাকার অভাবে লেখাপড়া করতে পারি নাই। আধুনিক যুগের খেলনার সাথে আমার চড়কির চাহিদা কমে গেছে। কষ্টই করেই যাচ্ছি। সুখের ছোয়া লাগেনি আমার জীবনে। জীবনটা পাড় হয়ে গেল চড়কির সাথে। আমার বাড়িতে পানি খাওয়ার কল (টিউবওয়েল) নাই, রান্না করার গ্যাস নাই। পাতা-লাড়কি সংগ্রহ করে রান্না করি। খুব বড় টেনশনে আশি। ছেলেমেয়েদেরকে মানুষ করতে পারবো কিনা জানিনা। একটা না একটা সমস্যা লেগে আছে আমার জীবনে। নিজেরও এখন বড় অসুখ হয়ে আছে। এক বছর ঘরে ছিলাম অসুস্থ হয়ে। কেউ খবর রাখেনি। তাই জীবিকার তাগিদে আবারও আসছি। চড়কি ঘুরলে আমার জীবন ঘুরে। চড়কি না ঘুরলে ঘুরেনা আমার সংসারের চাকা।
Congratulations @hjum! You have completed some achievement on Steemit and have been rewarded with new badge(s) :
Award for the number of upvotes received
Click on any badge to view your own Board of Honor on SteemitBoard.
To support your work, I also upvoted your post!
For more information about SteemitBoard, click here
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP