সত্যজিৎ রায় ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের মধ্যে অন্যতম।এই মহান মানুষটিকে এই দেশ ও দেশের মানুষ ভারতরত্ন প্রদান করেছিল।যোগ্য লোককে যোগ্য পুরস্কারে ভূষিত করতে পেরে জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত।এক উচ্চশিক্ষিত সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সত্যজিৎ রায়।তাঁর বাবার নাম সুকুমার রায়।পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।তিনি বাংলা সাহিত্যের সেরা শিশু সাহিত্যিক।পিতা সুকুমার রায় ছিলেন অসামান্য প্রতিভাধর।
মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি যক্ষা রোগে মারা যান।এই অল্প বয়সে তিনি যা সাহিত্য কর্ম রচনা করেছেন তা বাংলা সাহিত্যের মূল্যবান সম্পদ।বাংলা সাহিত্যে ননসেন্স কবিতা লেখায় তিনি অদ্বিতীয়।এমন কি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত বলে গিয়েছেন তিনি অনেক চেষ্টা করে ও সুকুমার রায়ের মত অসাধারণ ননসেন্স কবিতা লিখতে পারেন নি।সেই যোগ্য বাবা সুপুত্র সবার প্রিয় মানিক।সত্যজিৎ রায়ের ডাক নাম ছিল মানিক।সবাই তাকে ভালোবেসে মানিক বলে ডাকতেন।
সত্যজিৎ রায় ছিলেন মাস্টার অফ পারফেক্শান।সব বিষয়ে ছিল ওনার প্রচুর পড়াশোনা।এক বিজ্ঞাপন কোম্পানিতে তিনি চাকরি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকে তাঁর সময় কেটে যেত।সেই সময় তিনি বিদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করতেন।একদিন তাঁর মনে হলো তিনি নিজেই সিনেমা বানাবেন।যেই ভাবনা সেই কাজ।নিজের কিছু সঞ্চয় নিয়ে তিনি শুরু করেন ছবি নির্মাণের কাজ।ছুটির দিনে দিনে তিনি শুটিং করতেন।কিন্তু অর্থের অভাবে সিনেমার কাজ এগোচ্ছিলো না।এরপর তিনি দেনা করেন এমনকি স্ত্রীর গয়না ও বিক্রি করেন।তবুও অর্থের অভাবে সিনেমাটি ৩ বছর লেগে যায় সম্পন্ন হতে।অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই সিনেমাটি সম্পন্ন হয়।সত্যজিৎ রায়ের এই সিনেমা ছিল বাংলা সিনেমা জগতে সবচেয়ে বড় বিপ্লব।সিনেমা যে এমন হতে পারে সেটা "পথের পাঁচালি" দেখে বাঙালি বিস্মিত হয়ে গেছিলো।
সত্যজিৎ রায় ছিলেন অসাধারণ প্রতিভার একজন শিল্পী।সেই প্রসঙ্গে প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় একটি গল্প বলেছিলেন সেটা আমি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিচ্চি।সবাই চলে এসেছেন আউটডোর এ ছবির শুটিং এ।হঠাৎ সত্যজিৎ রায় দেখলেন একটি চিঠির উপর একটি কোম্পানির সিল থাকার কথা কিন্তু নেই।তিনি এসিস্টেন্ট কে সিল টা দিতে বললেন চিঠির উপর লাগানোর জন্য।কিন্তু দুঃখের বিষয় সিলটা ভুল করে সঙ্গে আনা হয়নি।কিন্তু ওটা খুব দরকার আর ওটা ছাড়া মানিকদা শুটিং ও করবেন না।কারণ ১০০% নিখুঁত না হলে মানিকদা শুটিং করেন না।কেউ গিয়ে সিলটা নিয়ে আসবে সে সময় ও হাতে নেই।তখন সত্যজিৎ রায় নিজে একটা সিল এঁকে দিলেন চিঠির উপর।শুটিং ওদিনের মতো সম্পন্ন হলো।
পরবর্তীতে সৌমিত্র ও আরো কয়েক জন্য মিলিয়ে দেখেছিলেন যে মানিকদার আঁকা সিল আর অরিজিনাল সিল একইরকম ,এমনকি মাপটা ও ছিল একদম সঠিক।এমনি ছিল বিশাল পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা।তাই তো তিনি বিশ্বসেরা চলচ্চিত্রকার।