পদার্থবিজ্ঞান জগতে এতকাল যাবৎ যতজন বিজ্ঞানী এসেছেন তার মধ্যে এই বিজ্ঞানী একদম প্রথম সারিতে অবস্থান করেন।পদার্থ বিজ্ঞানের উন্নতিকল্পে এই বিজ্ঞানীর অবদান অনস্বীকার্য।সত্যি কথা বলতে আলবার্ট আইনস্টাইন এর আগে এনাকেই সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী বলে মানা হতো।বিজ্ঞানের ছাত্র হন কিংবা না হন এই বিজ্ঞানী সাথে সবার কম বেশি পরিচয় আছে।ওই যে মজা করে বলতাম যার মাথায় আপেল পড়লো আর তিনি মহাকর্ষ তত্ত্ব আবিস্কার করে ফেললেন।হ্যাঁ ,আমি কথা বলছি বিজ্ঞান জগতের বিস্ময় স্যার আইজাক নিউটন কে নিয়ে।আজকে আমি এই বিখ্যাত বিজ্ঞানীর গবেষণা ও তার আবিস্কার নিয়ে কথা বলবো না।আজকে আমি বিজ্ঞানী নিউটন মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন সেটা একটু আলোচনা করবো।আমি একজন বিজ্ঞানের ছাত্র কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ে সেই ভাবে চর্চা করা হয়না।তাই কোনো ভুলত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দেবেন।
আমাদের সবার মোটামুটি স্কুল পাঠ্যে নিউটনের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে বারবার।তার মহাকর্ষ বল ও গতির সূত্র সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি জানি।তার তিনটি গতিসূত্র এর মধ্যে তৃতীয়টি আমি নিজে ক্রিকেট খেলার সময় বারবার অনুভব করতাম।এই তৃতীয় সূত্রের দরুণ কত যে ক্যাচ মিস করেছি তা আর মনে করতে চাই না।বন্ধুরা মনে পড়ছে ,কি সেই তৃতীয় সূত্র?হ্যাঁ একদম সঠিক-
প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।
যখন ব্যাটসম্যান সজোরে বল মেরে দেয় কিন্তু ভাগ্য খারাপ তাই সেটা ক্যাচ হয়ে যায় কিন্তু আমার ও ভাগ্য খারাপ বলটি যে বেগে আমার তালুতে আঘাত করলো আমার তালু ও সমান বেগে ব্যক্তিকে আঘাত করবে ।আর স্বাভাবিক ভাবে বলটি বেরিয়ে যাবে আর আমাকে আঙ্গুল দিয়ে আটকে দিতে হবে।আর এই আটকানো কাজটি সময় মতো না হলে ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস।
শোনো যায় নিউটন ব্যক্তিগত জীবনে খুব একটা সহজ মানুষ ছিলেন না।পন্ডিত মহলে তার বেশ কুখ্যাতি ছিল।তার জীবনের সেরা কাজ "প্রিন্সিপিয়া ম্যাথেমেটিকা "।এটি নিঃসন্দেহে পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রন্থ।এই একটি আবিস্কার তাকে রয়াল সোসাইটি এর প্রেসিডেন্ট বানিয়ে দেয়।আর প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে পান নাইট উপাধি।কিন্তু এই অসাধারণ বইটি লিখতে নিউটনকে সাহায্য করেছিলন রাজকীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী জন ফ্লামস্টিড।কিন্তু নিউটন তাঁকে কোনো রুপ স্বীকৃতি দেননি।তাই নিজের অধিকার আদায়ের জন্য ফ্লামস্টিড আদালতের শরণাপন্ন হন।আদালত নিউটনকে ওই উপাত্ত প্রকাশ করতে নিষেধ করে।কিন্তু নিউটন ছিলেন খুব চালক প্রকৃতির মানুষ।সে নিজে প্রভাব খাটিয়ে রয়াল সোসাইটি এর একটি অবজারভেটরি পরিচালকমন্ডলী বানিয়ে ফ্লামস্টিড এর শত্রু এডমন্ড হ্যালি কে দিয়ে ওই উপাত্ত গুলো প্রকাশ করে দেন।হেরে যান ফ্লামস্টিড।
এখানেই শেষ নয়।নিউটিন এর হাত থেকে রেহাই পাননি বিজ্ঞানী গটফ্রিড লিবনীজ।গণিত এর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ক্যালকুলাস নিয়ে একই সময়ে গবেষণা করছিলেন নিউটন ও লিবনীজ।কথিত আছে নিউটনের আগে লিবনীজ ক্যালকুলাস আবিস্কার করে ফেলেন।কিন্তু আমরা জানি ক্যালকুলাস এর আবিস্কারক নিউটন।কারণ নিউটন নিজের রয়াল সোসাইটি এর প্রেসিডেন্ট পাওয়ার খাটিয়ে লিবনীজকে কুম্ভীলক(plagiarist) প্রমান করে দেন।তিনি কে আবিস্কার করেছেন ক্যালকুলাস সেটা তদন্ত করার জন্য যে কমিটি গঠন করেন তাঁর সব সদস্য ছিল নিউটনের বন্ধু ।ফলে তারা নিউটনের পক্ষয়েই রায় দেয়।
এও শোনে যায় নিউটন বলেছিলেন যে লিবনীজের মন ভেঙে তিনি খুব আনন্দ পেয়েছিলেন।
Source
কিন্তু এই মানুষটির এই কঠিন অন্ধকার মনের মাঝেও আলো ছিল।একদিন নিউটন একটু বাইরে বেরিয়েছিলেন কোনো কাজে।বাড়িতে তার পড়ার টেবিলে রয়েছে তার ২০ বছরের একটি সাধনার ফল।যেটা একদম সফলতার দোরগোড়ায়।সেই টেবিলে একটি জ্বলন্ত মোমবাতি আর পাশে তার প্রিয় কুকুর ডায়মন্ড।কিছুক্ষণ পরে বাড়ি ফিরে দেখে ডায়মন্ড তার ২০ বছরের সাধনার ফসলকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে তার উপর খেলছে।নিউটন কুকুরটিকে মারা তো অনেক দুরের কথা একটু ও তিরস্কার ও করলেন না।শুধু বলেছিলেন যে তুই কি ক্ষতি করেছিস তা তুই নিজেও জানিস না।
নিজের ভালোবাসার পাত্রের প্রতি এমনিই প্রেম ছিল নিউটনের।সত্যি বৈচিত্র্যময় ছিল নিউটনের চরিত্র।
এরপরের পর্বে নিউটনের মহাকর্ষ বল ও আইনস্টাইন এর সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ অনুসারে মহাকর্ষ এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
ধন্যবাদ।।
Congratulation!
Your post has been manually curated by @zrss.