২০ জুন,বাবা দিবস।তো এইদিনে অন্য কোনো বিষয় নিয়ে লেখার কি কোনো দরকার আছে?যেখানে আমার বটবৃক্ষই আমার পাশে আছে।তবে আমার এই জীবনে তার অবদানের এক ভাগও আর্টিকেলে তুলে ধরতে পারবো বলে মনে হয়না।
আমার বাবাকে নিয়ে যতটা বলা যায়, কম হয়ে যায়।সে যা হোক, এটুকু বলতে পারি আমার বাবা পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বাবা। বড় বড় মানুষেরা বলে গেছেন, পৃথিবীতে খারাপ মানুষ থাকতে পারে, কিন্তু খারাপ বাবা একটিও নেই। বাবারা বোধ করি এমনি হন—সেলফলেস, সন্তানকে বুক দিয়ে আগলে রাখা। বাবা শব্দটা যতটা সহজ মনে হয় ঠিক ততখানি সহজ না, তার থেকে অনেক বেশি অর্থ বহন করে। বাবা যেন ছায়া দানকারী বিশাল মহিরুহের স্বরূপ। নিজের কথা ভাবার আগে পরিবারের সবার কথা ভাবেন।সব তো বলতে পারবোনা,সামান্য কয়টা মুহূর্তই নাহয় বলি।
এই যে আমার সেই বটবৃক্ষ,আমার বাবা।ছবিটি যথাসম্ভব ২০১৪ এ তোলা।
ছোট থেকেই অসুখ আমার পিছে লেগেই আছে।রাত নেই দিন নেই,যেকোনো সময় হানা দেয়।সালটা যথাসম্ভব ২০০৮/২০০৯।রাত ১২ টা পার হইছে।ঘুমের মধ্যেই ক্যানজানি আমার তীব্র পেটব্যাথা শুরু হইছিল।ওতো রাতে কই পাব ডাক্তার,বা যাওয়ার জন্য রিকশাই বা কই পাব?ওসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে আমায় কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা দিল বাবা।খানিক যাওয়ার পরে অবশ্য রিকশা পাওয়া গিয়েছিল।তারপর হাসপাতালে জরুরী বিভাগে নিয়ে গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আবার বাসায় নিয়ে আসে বাবা।
আমার বাবার একটা বদ অভ্যাস ছিল।তা হলো,রাত ১২ টা কিংবা ১ টার আগে বাসায় আসতো না।যদিও এখন সেই অভ্যাস আর নেই।আমি ছোট থেকেই বাবা ভক্ত ছিলাম।হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গেলে যদি বাবাকে দেখতে না পাইতাম আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাইতো।প্রচন্ড কাঁদতাম,এটা সেটা বলতাম মানে আমার পুরো পাগল অবস্থা হচ্ছিলো।আম্মু সহ্য করতে না পেরে বাবাকে ফোন করে বলতো,যদিও কাজের কাজ হইতো না।ছোট মানুষ জেদ করবে এটাই তো স্বাভাবিক।তাই নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে তারপরেই আসতো বাবা।তবে আসার সময় কোনো না কোনো খেলনা আনতোই।আম্মুর সাথে ঐ রাতে বাসার রাস্তায় দাঁড়ায় থাকতাম,বাবা এসে কোলে তুলে নিয়ে একটা চুমু দিয়ে হাতে খেলনাটা তুলে দিতো।তারপর বাসায় এসে কবিতা,বাঘ- সিংহের গল্প শুনিয়ে ঘুম পারাতো।
সাল ২০১৩,ক্লাস ৩ এ ভর্তির জন্য বগুড়া জিলা স্কুলের ফর্ম তুলতে হবে।যেদিন ফর্ম তোলার লাস্ট ডেট সেদিন সারা দেশব্যাপি হরতাল।গাড়ি চলাচল বন্ধ জন্য ভোর ৫ টা কিংবা ৬টা নাগাদ বাসা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল বাবা।যদিও তার এ কষ্টের মর্যাদা দিতে আমি ব্যর্থ হয়েছিলাম।
২০১৬,তখন আমি বগুড়ায় ক্যাডেট কোচিং করতাম।আমাদের এখানে উজ্জ্বল নামের এক আঙ্কেল আছেন,যার দোকানের নুডুলসের জন্য পাগল ছিলাম আমি।তো সেই খাতিরে হঠাত করেই একদিন তার হাতের নুডুলসের কথা মনে হয় এবং বাবাকে জানাই।দোকানে গিয়ে বাবা নুডুলস তৈরি করে নিয়ে ঐদিন রাতেই বগুড়া আসে আর আমায় খাওয়ায়।
১৬ সাল তো পুরোটাই বাবার কাছে থেকে দূরে ছিলাম।সেজন্য যখন তখন আমার কথা বাবার মনে পড়ত।না বলে হঠাত করেই চলে আসতো।আমার সাথে দেখা করার জন্য একদিন কোচিঙে গিয়ে বাবা শোনে একটু আগেই ছুটি হইছে আমিও চলে গেছি।কোচিং শেষ করে আমি সিএনজিতে উঠেছি ,মাত্র সিএনজিটি চলা শুরু করে একটু গেছে আরকি নাই গেছে,কোত্থেকে জানি বাবা এসে সিএনজি থামিয়ে আমায় বের করে নিলো।তারপর নিয়ে গিয়ে আকবরিয়া হোটেলে বিরিয়ানি খায়িয়ে বাসায় পৌঁছায় দিয়ে বাবা চলে আসে ।
আফছা আফছা যা মনে ছিলো তা বললাম।আমার বয়স এখন ১৮ ছুই ছুই।বাবা এখোনো বিয়ে বাড়িতে গেলে আমার খাওয়ার সময় আমার জন্য মুরগীর রান চেয়ে নেয়।যদিও এখন আমি একটু লজ্জা পাই সেই সময়। তবে বাবার জন্য সেসময় চোখে পানি এমনি আসতে ধরে।
এই সামান্য কয়টা কথা বলে কখোনোই বাবার গুরুত্ব,তার মমত্ববোধ বোঝান সম্ভব না।একজন বাবা যে একটা সন্তানের জন্য কতবড় উপহার তা আশা করি সবাই জানেন।বলার মতো তেমন কোনো ভাষা খুজে পাচ্ছিনা।শুধু এটুকুই চাই,ভালো থাকুক পৃথিবীর সব বাবা।ভালোবাসি তোমায় বাবা,খুব ভালোবাসি। আশা করি তোমায় দেওয়া কথা রেখে তোমার মুখে হাসি ফোটাতে পারবো বাবা।
Happy fathers day,
Thanks for sharing your memories 😀