আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি। ভালো না থাকলেও আমাদেরকে ভালো থাকার চেষ্টা করতে হবে। আর এই ভালো থাকার জন্য আমাদেরকে সময় পেলেই ঘুরাফেরা করতে হবে। ঘুরাঘুরি, ভ্রমন আমাদের দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্লান্তি দূর করে দেয়। শরির স্বাস্থ্য এবং মনকে রিফ্রেশ করে দেয়।
বন্ধুরা আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার ঘুরাঘুরির কিছু অভিজ্ঞতা এবং অনুভুতি শেয়ার করতে এসেছি।
১৮/১২/২০২২ তারিখে হুট করে আমার বান্ধবি তারানা ফোন দিয়ে বলে দোস্ত ভালো লাগছেনা চল একটু বের হই আশে পাশে কোথাও ঘুরা যাক।
বললাম...বের'তো হওয়া যায় কিন্তু যাবো কোথায়? ইট পাথরের এই ঢাকা শহরে ঘুরার মত জায়গা কোথায়?
চিন্তা করতে করতে ফোন দিলাম আরেক বন্ধু রাব্বিকে। বললাম...বন্ধু চল আজকে একটু ঘুরতে বের হই। বন্ধু ও সায় দিয়ে বললো চল আজকে একটু বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে যাই। ইদানিং মানুষজন দেখছি ওখানে যাচ্ছে।
যাই হোক ঘুরার গন্তব্য ঠিক হলো। তিন বন্দবু মিলে চলে গেলাম বাসে করে ঢাকার বিজয় স্মরণি, তেজগাঁও তে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে।
যদিও উদ্দেশ্য জাদুঘর ছিলো কিন্তু সেখানে গিয়ে আমরা জাদুঘরে না ঢুকে পাশেই অবস্থিত থ্রিডি আর্ট গ্যালারিতে ঢুকে গেছি। আর্ট গ্যলারিতে ঢুকার জন্য জনপ্রতি ২০০ টাকা করে টিকেট কাটতে হয়েছিলো।
টিকেত প্রাইসটা একটু বেশিই মনে হয়েছে আমার কাছে।
থ্রিডি আর্ট গ্যালারি ঢাকার বিজয় স্মরনীতে বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের এক্সিবিশন হলে অবস্থিত। বন্ধের দিনে একটু রিফ্রেসমেন্টের জন্য পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে দেখার একটা দারুন জায়গা হতে পারে থ্রিডি আর্ট গ্যালারি।
যাই হোক আমরা ঢুকে গেলাম আর্ট গ্যালারিতে। যেখানে দেয়ালে দেয়ালে থ্রিডি পেইন্টিং করা নানান ধরনের ছবি রয়েছে। বিশেষ জরে গ্রামীণ জন-জীবনের ছবি, জাতীয় পশুপাখির ছবি, স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যাবহৃত বিভিন্ন জিনিসের ছবি, প্রাকৃতিক দৃশ্য, পাহাড় ঝর্না সমুদ্র ইত্যাদির ছবি, পুরনো আমলের রাজাদের পোশাকের ছবি, আমাদের প্রধানমন্ত্রি এবং জাতীর জনকের ছবি সহ নানাধরনের ছবি আর্ট করা রয়েছে দেয়ালে দেয়ালে। যা দেখতে হবুহু জীবন্ত মনে হয়।
গ্যালারিতে প্রবেশের প্রথমেই আমাদেরকে হাইজিন মেইন্টেইনের জন্য পায়ে মাস্ক পরে প্রবেশ করতে হিয়েছিলো। ব্যাপারটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। তারপর আমরা একে একে সব ছবি দেখা শুরু করলাম একদিক থেকে এবং প্রতিটা ছবির সাথে ফটোগ্রাফিও করে নিলাম।
থ্রিডি আর্ট গ্যালারিতে মোট তিনটি ফ্লোর রয়েছে এবং তিন ফ্লোর মিলে আনুমানিক প্রায় ৭০ থেকে ১০০ টার মতো ছবি রয়েছে। বুধবার এবং জাতীয় বন্ধ ছাড়া বাকী সব দিনই খোলা থাকে আর্ট গ্যালারি সকাল ১০ টা থেকে রাত ৭.৩০টা পর্যন্ত তবে শুক্রবার বিকেল ৩ টা থেকে ৭.৩০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
আর্ট গ্যালারিতে ঢুকে মনে হলো যেন এক অন্য দুনিয়ায় প্রবেশ করেছি। কখনো চা বাগানে প্রবেশ করেছি তো কখনো সুন্দরবনে বাঘ মামার সাথে বসে গল্প করছি। কখনো আবার চায়নার গ্রেট ওয়ালের পাশে বসে আনমনে ভাবছি আর তার পাশেই আবার আদিম এক গুহার সন্ধান মিলবে যেখানে গুপ্তধনের সন্ধানে কেউ প্রেবেশ করেনি কখনো!
গুহার পরেই রয়েছে বিশাল জলপ্রপাত। আর তার মাঝেই আছে একটা ভেলা। ভেলায় চড়ে পাড়ি দিতে হবে খরস্রোতা নদী। নদী পাড়ি দিতেই দেখা মিলবে কিংকং খ্যাত গরিলার। গরিলার সাথে সাক্ষাৎ শেষ করে দুই বন্ধু চলে গেলাম দেয়ালে আঁকা জীবন্ত চা দোকানে চা ওয়ালা ক্যাটলি থেকে গরম ধোঁয়া ওঠা চা কাপের মধ্যে ঢেলে দেওয়ার দৃশ্য যেন পুরোপুরি বাস্তব।
চলতে চলতে দেখা মিলবে মিশরীয় পিরামিড আর মমির সাথে। মমিদের সাথে দেখা করে বান্ধবির বায়না তাকে গান শুনাতে হবে পিয়ানো বাজিয়ে।
কি আর করা দেয়ালে আর্ট করা সবুজ বনের সেই জীবন্ত পিয়ানো বাজিয়ে বান্ধবির মন রক্ষা করার চেষ্টা। যদিও পিয়ানোর কোনো আওয়াজ বের হয়নি হাহা। যাই হোক গানবাজনা অনেক হলো এবার একটু গ্রামে প্রবেশ করা যাক। আর্ট গ্যালারিতে গ্রামীন দৃশ্যগুলো ছিলো অসাধারন। মনে হয়েছে সত্যি সত্যি গ্রামের ভিতরে চিলে গেছি। জেলেদের কাছ থেকে ইলিশ মাছ সংগ্রহ করা, ফসলের মাঠ থেকে চাষীদের সাথে কাঁধে করে ধান নিয়ে আসা। এগুলা যেন কোনো ছবি নয় সব বাস্তব।
নিজেকে এক অন্য জগতে আবিষ্কার করতে পারবেন আর্ট গ্যালারিতে গেলে। বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় রিকশা খোঁজা। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী বা বিমানবাহিনীর কোন যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিজেকে অবিস্কার করা সবই সম্ভব আর্ট গ্যালারিতে।
আর্ট গ্যালারির সকল ছবিই আর্কষনীয়। বাচ্চাদের জন্যেও রয়েছে ভালো লাগার কিছু ছবি। চাইলে কখনো ওরা দ্যা জঙ্গল বুক এর মোগলির সাথে আনন্দে মাততে পারবে। আবার কখনো আলাদীনের জাদুর পাটিতে উড়ে বেড়াতে পারবে। চাইলেই হয়ে যেতে পারবে জাদুকরের বোতলে বন্দী।
সব চেয়ে মজার এবং দারুন পার্ট হলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথেও সৌজন্য সাক্ষাতের সুযোগ মিলবে এই গ্যালারিতে এসে হাহা।
যাই হোক বঙ্গবন্ধুর সাথে অনেকক্ষন আলাপ করে আমরা তিন বন্ধু আরো কিছু ফটোগ্রাফি করে অবশেষে বের হয়ে গেলাম।
তারপর বাইরে এসে একটা রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে যার যার বাসায় চলে আসলাম।
এই ছিলো আমাদের থ্রিডি আর্ট গ্যালারি ঘুরে আসার আদ্যোপান্ত। আমার এই ব্লগ আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে জানাবেন। আপনারাও সময় সুজোগে ঘুরে আসবেন।
পোস্টটি ভালো লাগলে নতুন নতুন জায়গা নিয়ে আমার ঘুরাঘুরির অভিজ্ঞতা জানানোর আরো অনুপ্রেরণা পাবো।
ধন্যবাদ সবাইকে।