একবার আমাদের এলাকায় খুবই কম দিনের জন্য একটা মেলার আয়োজন করা হয়। বিশাল মেলা ছিল সেটা ৷ তখনো টেলিভিশনে শুনতাম, বাণিজ্য মেলার কথা। কিন্তু, যাওয়া হতো না। আব্বা মাসের প্রথম দিকে আশা দেখাতেন নিয়ে যাবেন, শেষের দিকে অজুহাত দেখাতেন, বাণিজ্য মেলা ঢাকার আরেকপ্রান্তে৷ এতো দূরে যাওয়ার মধ্যে কোনো ফায়দা নেই৷ তাই গোলাপবাগের মেলাই আমার কাছে বিশাল কিছু তখন!
সেই দশবছর আগের কথা বোধহয়। মেলায় যে স্টলে ম্যাজিক দেখায় আমি প্রতিদিন গিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কি সুন্দর! পৃথিবীতে সবচেয়ে ক্ষমতাবান লোকটাকে আমি তখন চিনে ফেলেছি, সেই ম্যাজিশিয়ানকে আমার খুব হিংসা লাগতো। সবগুলো ম্যাজিক দেখানো শেষ হলে সে ম্যাজিক বিক্রি করতো। মানুষ কিনতো না। খুব কম। আমার মনে হলো, একটা ম্যাজিক আমার শেখা দরকার। তখন একদম স্বস্তার একটা ম্যাজিক কিনেছিলাম। কিনার আগ মুহুর্তে কি প্রবল উত্তেজনা! কিন্তু, সব শেষ হয়ে গেলো, যখন আমি খেয়াল করলাম যে ম্যাজিক দেখে আমি এতো মুগ্ধ হয়েছি, সেটার কৌশল খুব সাধারণ, একেবারেই মামুলি ব্যাপার। এতো নিরামিশ একটা কৌশল দিয়ে মানুষকে কিভাবে ভুলিয়ে রাখা যায়!
মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু, তারপর আমি নিজেই শুরু করলাম ম্যাজিক দেখানো। যাকে দেখাই সে-ই অবাক হয়। আপনার কোনো কিছুতে মানুষ মুগ্ধ হচ্ছে, এই অনুভুতি আপনার সবসময়ই ভাল লাগবে। আমারও লেগেছে। কিন্তু, ভেতরে ভেতরে আমার মনে হলো, আমি কি প্রতারণা করছি নাকি! মানুষ সাধারণ ট্রিকটা ধরতে পারছে না বলে মুগ্ধ হচ্ছে, কিন্তু আমি তো জানি আমি কি করছি! এটা কি ঠিক কিনা? একবার দেখার পর আবারো অনুরোধ করে। আমি দুই তিনবার দেখানোর পর তারা অনুরোধ করে, ম্যাজিকের কৌশলটা যেনো তাদের শিখাই।
মজার ব্যাপার হলো, যখনই আমি ম্যাজিকের কৌশলগুলো বলে দিতাম, ভাবতাম, সেতো আপন, তার কাছে বললে কি আর হবে, তখনই খেয়াল করলাম, তারা এই পুরো ব্যাপারটাকে একটুও আর পাত্তা দিচ্ছে না। এতোক্ষণ যা দেখে অবাক হয়েছে, এখন সেটাকেই নিম্নস্তরের কিছু একটা ভেবে এড়িয়ে যেতে চাইছে। তারা আর মুগ্ধ হবে না জীবনেও, এই ম্যাজিক দেখে।
এটা জীবনের খুব বড় একটা লাইফ লেসন আমার জন্যে। আমি সবক্ষেত্রেই প্রমাণ পেয়েছি। কারো কাছে নিজের গোপন কথা বলে ফেলা উচিত নয়, যত কাছের হোক। কারো কাছেই নিজেকে পুরোপুরি প্রকাশ করে ফেলা উচিত নয়। যখনই আপনি নিজেকে উন্মুক্ত করে দিবেন, মানুষ আপনার দূর্বলতা নিয়ে কথা বলবে, আপনার প্রতি মোহ কেটে যাবে। প্রিয় মানুষেরা আমাদের অপ্রিয় কখন হয়, খেয়াল করলে দেখা যাবে, যখন আমরা তার সম্পর্কে সব জেনে ফেলি, তার সব খুঁত চোখে পড়ে, তার যত অভ্যাস- বদ অভ্যাসের গল্প আমাদের জানা হয়ে যায়, তাকে যতভাবে আবিষ্কার করা সম্ভব সেটা করে ফেলা হয়- তখনই তার কাছ থেকে একটু একটু করে দূরত্ব তৈরি হয়।
মুগ্ধতা ধরে রাখা শিখতে না পারলে কিছুই টিকে থাকে না, দিনের পর দিন ঘর সংসার করে যাচ্ছেন, গতানুগতিক জীবন, মনে হবে সব ঠিকই আছে, মানুষটা আমারই। দিনের পর দিন এক ঘেয়ে ফোন আলাপ, এক ঘেয়ে আড্ডা। এক ঘেয়ে কাজ। নতুন কিছু আবিষ্কার করার জায়গা নেই, আড্ডায় কথা বলার নতুন কোনো টপিক নেই। ভাবছেন সব ঠিকই তো আছে? কিছু ঠিক নেই। আপনার মূল্য আলাদা করে এখন আর চোখে লাগে না কারো! আপনার ম্যাজিকের রহস্য সবাই বুঝে গেছে। আপনিও যেমন বুঝে যান আপনার প্রিয় মানুষদের অপ্রিয় ব্যাপারগুলো! সো! ডোন্ট টেল এনিওয়ান এবাউট ইউর ম্যাজিক ট্রিক্স! ডোন্ট ওয়ান্ট টু নো এভরিথিং এবাউট আদার্স!
সাধারণত অজানা বিষয়ে আমাদের কৌতূহল থাকে। যখন সেটা আমাদের জানা হয়ে যায় আর সাথে সাথে আগ্রহ কমতে থাকে।
Hi @abmamun, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rem-steem!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON