১৪ ফেব্রুয়ারি, সুন্দরবন দিবস। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১লা বসন্ত। তবে বিশ্বব্যাপী আজকের দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তবে কেন যেন মনে হয়, মানুষ ধীরে ধীরে ভালোবাসার চেয়ে অস্থিরতার দিকে বেশি ঝুঁকে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যেসব দূর্ঘটনার ভিডিও/নির্মম ছবি/অডিও বের হয়, সেসব ঘটনাই এখন মানুষকে বেশি মর্মাহত করে, আলোড়িত করে, আন্দোলিত করে। মানুষ ভিডিও না দেখলে ঘটনার মর্মান্তিক পরিণতিকে উপলব্ধি করতে পারে না। একই প্রজাতির অন্য দূর্ঘটনা যার কোনো ভিডিও বা কোনো এভিডেন্স ভাইরাল হয় না, সেসব মানুষকে সামান্যই অস্থির করে।
ভিডিও/এভিডেন্স-ভিত্তিক আত্মপীড়ন এড়াতে আজকাল এসব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। টিভি দেখা বাদ দিয়েছি। ফেসবুকের হোম পেজ স্ক্রল কমিয়ে দিয়েছি। ইউটিউবের অস্থিরতা নির্ভর কন্টেন্ট দেখা বাদ দিয়েছি। মানুষের এই 'সিলেক্টিভ অস্থিরতা' ক্ষণে ক্ষণে পালটায়। একজন অপরাধী প্রকাশ্যে ঘুরলে তার ক্ষমতার জোর মানুষকে অস্থির করে। মানুষ চায় এসব অপরাধীর ভয়ংকর শাস্তি হোক। ক্রশফায়ার, ব্রাশফায়ার, প্রকাশে মাথা কর্তন হোক, নিদেনপক্ষে গনপিটানি দিয়ে মেরে ফেলা হোক।
আবার ক্রশফায়ারের আগে পিতার আর্তনাদ এবং মেয়ের বলা বাক্য আব্বু কানতেছ কেন - শব্দগুলোও মানুষকে কষ্ট দেয়। মানুষ তখন নতুন ধরণের অস্থিরতায় ভোগে। যাকে ক্রশফায়ার দেয়া হলো, তার সন্তান যে এতিম হয়ে যাচ্ছে, সেই সন্তানের আশ্রয়হীনতা, অসহায়ত্ব মানুষকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অস্থির করে তোলে।
ঘটনাভেদে হিংস্রতা কামনা করা এবং কান্না বিহ্বল হবার লোক সবসময়ই থাকবে। মানুষ সবার জন্য কাঁদে এমনও না। ঘটনাগুলো অনেক সিলেক্টিভ। একই সময়ে দেশে কোনো মহামারী অসুখ কিংবা প্রাকৃতিক দূর্যোগ চললেও সেসবের চেয়েও একজন নিরাপদ অবস্থানে থাকা মানুষকে বেশি নাড়া দিতে পারে একটি অপঘাতে মৃত্যুর ঘটনা। কারণ, অপঘাতে মৃত্যু তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাবোধকে আঘাত করে। মানুষ আর যা-ই হোক, এমন মৃত্যু কখনো নিজের জন্য আশা করে না। সে বৃদ্ধ হতে চায়, দেশ বিদেশ ঘুরতে চায়, অনেকদিন আয়ু পেতে চায়, নিজের জন্ম দেয়া সন্তানের সুখ সমৃদ্ধি দেখতে চায়, ছড়ি ঘোরাতে চায়, নিয়ন্ত্রণ করতে চায় সবকিছু, শখ আহ্লাদ পূর্ণ করে জীবনচক্র পূরণ করেই কেবল ভবলীলা সাঙ্গ করতে চায়।
এই স্বপ্ন সবারই থাকে। একজন অপরাধীও এমন স্বপ্নই দেখে। অপরাধীর সন্তানরা পিতাকে অপরাধী বলে আলাদা করে দেয় না। একজন সাধুর সন্তানের মতো পিতা/মাতার প্রতি আবেগ ভালবাসার অনুভূতি তারও কাজ করে। সবারই জাজমেন্ট করার, ভালবাসার, সহানুভূতিশীল হওয়ার, হিংসা করার নিজস্ব পদ্ধতি আছে। আপনি সবসময় সঠিক এমন না। যার জন্য কাঁদেন সে সবসময় পুণ্যবান এমন না। যার প্রতি হিংস্রতা সে সবসময় অপরাধী এমন না। এতোকিছু ভেবে অবশ্য মানুষ ভালবাসে না, হিংস্র হয় না। নিজের যাপিত জীবনের মূল্যবোধ কিংবা বোধহীনতা তাকে তাড়িত করে। সে সিলেক্টিভ হয়ে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় ভিন্ন রকম রিয়েক্ট করে।
ভাল মন্দের বিচার ছাড়াই কোনো কিছুতে রিয়েক্ট করতে করতে একসময় দেখা যাবে, আপনি সত্যিকার অর্থে অনুভব শূন্যতায় ভুগছেন। এরপরেও আপনি হয়ত কাঁদবেন, হাসবেন, হতাশ কিংবা উল্লসিত হবেন, এসথেটিক হবেন, ডিপ্রেসড হবেন কিন্তু তার সাথে হৃদয়ের যোগ থাকবে না। হৃদয় দিয়ে ভাবার আগেই আপনি রিয়েকশন দেখিয়ে ফেলছেন। আপনার ভেতরে কেবলই রিয়েকশন দেখাতেই হবে - এই অস্থিরতা ভর করে। আপনি এর থেকে বের হতে পারেন না। সব কিছুতেই আপনার হতাশ লাগবে। নিজের নিরাপত্তাহীনতা আপনাকে ভাবাবে, প্রত্যেকটা ঘটনাকে নিজের সাথে আপনি রিলেট করার চেষ্টা করবেন। আপনার মধ্যে আতঙ্ক ছাড়া আর কিছু থাকবে না।
মানুষ আজকাল প্রচুর অনুভূতি প্রকাশ করছে। অনেক কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে অন্যকে। কে ভুল, কি ভুল, কি সঠিক বিভিন্ন রকমের যুক্তি। মানুষের স্বভাবই হলো, নিজের মত কোনোভাবে ঢুকিয়ে দেয়া। এক জায়গায় পাঁচজন বসে থাকলে কেউ একটু বিতর্কিত কিছু বললে, বাকি চারজন এই ব্যাপারে বিরোধিতা করতে নিজের বিশ্বাস চাপিয়ে দিয়ে বক্তব্য রাখা শুরু করবে। এখন যেহেতু মানবিক যোগাযোগ আলগা, ভার্চুয়াল জগতে এই ব্যাপার ঢুকে গেছে।
একটা খারাপ খবর বার বার দেখতে দেখতে আপনার সেই ব্যাপারটা মাথায় যন্ত্রণার কারণ হয়ে যাবে। সেই ঘটনায় অনেকে অনেক রকম কথা বলবে। কারো বক্তব্য দলীয় হবে, কেউ বাম চিন্তা থেকে কেউ ধর্মীয় চিন্তা থেকে কেউ দার্শনিক জায়গা কিংবা কন্সপিরেসি থিউরি থেকে বক্তব্য দিবে। আপনি চাইলেও চুপ থাকতে পারবেন না। আপনি উশখুশ করবেন। রিয়েকশন দেখাবেন। কে ভুল, কি সঠিক, কে সমস্যা এসব আবিষ্কার করার আনন্দ এবং বিষাদ ছড়িয়ে দিবেন।
ফলে একটা ঘটনা মূল ঘটনার গুরুত্ব প্রেক্ষাপট ছাড়িয়ে হয়ে উঠে আপনার আমার তর্কের বিষয়বস্তু। আমরা হয়ে যাই ভার্চুয়াল ডিবেটর। যে ডিবেটের কোনোদিন শেষ হয় না, যেহেতু বিষয়েরও কোনো অভাব হয় না আমাদের। ঘটনাগুলো চাপা পড়ে, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা একদিন খেয়াল করে তাদের নিয়ে আর কোনো খবর নেই কোথাও, নতুন কেউ আসে, কান্নার রঙ বদলায়, 'অভিনন্দন' জানানোর মানুষ বদলায়, ভালবাসার অনুভূতি বদলায়, পৃথিবী থেমে থাকে না। শুধু কিছু মানু্ষ রয়ে যায় কিংবা আরো কিছু মানুষ হয়ে যায় বোবা এবং অনুভূতিশূন্য....
Congratulations @abmamun! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 3250 upvotes.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!