আমি একটি রোবট তৈরির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ভর্তি হয়েই আমাকে আমার ক্যারিয়ার বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য শেখানো হলো। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার হিসেবে আমাকে বলা হলো রোবট বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক হওয়া। তো হয়েই গেলাম রোবট বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার। অনেক রোবট একসাথে ক্লাস করে। সুন্দরী ছাত্রী রোবটরাও শিখতে আসে। তাদেরই শেখার আগ্রহ বেশি। এটেন্ডেন্স এর ব্যবস্থা আছে। তারা নিয়মিত ক্লাস করতে আসে। কেনো আসে জানি না। ছাত্রী রোবটের সাথে ভাবসাব করার জন্য নাকি এটেন্ডেন্স এর কারণে কে জানে!
আমার ছোটকাল থেকে খেপ খেলার অভ্যাস। কলেজে থাকতে আমাকে ডেকে নিয়ে যেতো ফুটবল ম্যাচ হলে, খেপ খেলার জন্য আমি খেলতাম অফসাইড পজিশনে। টাকা পয়শার গন্ধ আমার ভালো লাগে। শিক্ষক হওয়ার পর আবার খেপ খেলার সুযোগ এসেছে। অনেক জায়গায় রোবট পড়ানোর জন্য ডাক আসে। আমি মাঝে মধ্যে তাদের পড়াই। মোটামুটি সব রোবটই সেম। গাধা গরু টাইপের রোবট। কিছু পারে না। এসাইনমেন্ট দিলে উইকিপিডিয়া থেকে কপি করে জমা দেয়।
রোবটদের টিচার হওয়ার সুবিধা হলো, বেশি প্যারা নিতে হয়না। একটা বই খুলে অনুবাদ করে পড়িয়ে গেলেই হয়। সেদিন দেখলাম আমার ক্লাসে একটা রোবট চোখ বন্ধ করে আছে। নিজের প্রতি এতো গর্ব হলো, বলার মতো না। আমার অনুবাদ এতোটাই ভালো যে, শুনতে শুনতে তারা চোখ বন্ধ করে কল্পনার জগতে চলে যায়। রাতে বউয়ের সাথে এই গল্প করতেই বউ বললো, আমি যা ভাবছি সেটা সত্য না, রোবটরা নাকি আমার অনুবাদে বিরক্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
বউ মানুষের কথা, লাখ কথার এক কথা। এরপর থেকে ক্লাসে বই পড়ানোই বাদ দিলাম। শুরু করলাম তাং ফাং গল্প। রোবটরা প্রথম প্রথম গল্পের সাথে তাল মিলায়, হাসে, কাঁশে, পরের দিকে ঝিমাতে থাকে। আমার তো গর্বের সীমা নাই। আমার গল্পের পিনিক লেভেল কোন পর্যায়ের যে রোবটরা হাসতে হাসতে ঘুমিয়ে যায়! ভাবতেসি যাদের অনিদ্রা রোগ আছে তাদের জন্য ক্লাস নিবো। আমি পড়াবো, পড়া শুনতে শুনতে তারা ঘুমাবে। ওয়াও! এই আইডিয়া ভাবতে পেরেই খুশি খুশি লাগছে। আমার মাথা থেকে কিভাবে যে এসব ভাবনা আসে!
অনেকে আমার কাছে বিভিন্ন সুপারিশ নিয়ে আসে। একদিন এক রোবটের মা আসলো আমার কাছে। বললো, আমার মেয়েটাকে আপনার হাতে তুইল্যা দিলাম। আপনি ওরে রোবটের মতো রোবট বানায় দেন। আমি নিরলস ভাবে রোবট বানানোর পেশায় নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছি। প্রতি সপ্তাহে ছয়টা এসাইনমেন্ট ধরিয়ে দেই। তাও দেখি তারা রোবট হয় না। এরপর ১০ চ্যাপটার পড়িয়ে একদিন ধুম করে এক্সাম এর ডেট দিয়ে দেই। এবার যাবি কই বাপু? রোবট তোমারে হতেই হবে।
দুইটা রোবট ইদানিং ক্লাসে আমার যেকোনো কথায় একমত হয়। তারা ফেসবুকে আমার পোস্টে কমেন্ট করে আমি নাকি তাদের অনুপ্রেরণা। আমার খুব ভালো লাগে। এরাই বড় হয়ে বিশাল মাপের রোবট হবে। এদের মধ্যে তেলবাজি নেই। তারা শিক্ষককে সম্মান দিতে জানে।
যাইহোক,সেদিন ৪ বছর পর একদিন রাস্তায় দেখলাম এক পুরানো স্টুডেন্টকে। জিজ্ঞেস করলাম,রোবটের ডিগ্রী নিয়া কি হইসো ? রোবট বললো,"স্যার মানুষ হইছি।"শুনে ধাক্কা খেলাম। আমার ছাত্র মানুষ হইসে মানে? আমি কি এই শিক্ষাই দিয়েছিলাম ! কিভাবে মানুষ হয়েছো? বললো, "স্যার আমি এখন শুধু ঘুরি খাই এবং মজা করি। ফাঁকে ফাঁকে ছবি তুলি। একজন আলোকচিত্রী বলতে পারেন। এই কাজটাই আমি ভালো পারতাম। অথচ, আমাকে বাবা মা বানাইতে চাইলো আদর্শ রোবট। আমার বন্ধুদের অনেকেই বড় বড় পর্যায়ে রোবট হিসেবে সুনাম কুড়াচ্ছে। আমি ভুল করে মানুষ হয়ে গিয়েছি।"
কিছুটা অপমানিত বোধ করছি। বাপ মায় টাকা খরচ কইরা রোবট বানাইতে পাঠায় আর এরা মানুষ হইতে চায়। আধিখ্যেতার শেষ নাই ! এদের শখগুলোরে মাডি চাপা দিয়া দেয়া দরকার। নাহ, এদের ভালমতো ঘুম পাড়াতে হবে যেনো রোবট হওয়া ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে না পারে। খাড়া শালার পুত, এমন লেকচার রেডি করতেসি না ঘুমাইয়া যাবি কই! ফাঁকিবাজগুলা সব....