আমার খুব বেশি স্বপ্ন যে আমার কর্মস্থল সিলেটে হবে। সিলেটের সৌন্দর্য আমাকে খুব বেশি মোহিত করে। সেখানে আমার একটি বাড়ি থাকবে। বাড়ির সামনে একটা মস্ত বড় বাগানবিলাস গাছ থাকবে। মূল দরজাটা থাকবে মরীচা পড়া পুরোনো এক প্রকার লালচে স্টিলের। প্রতিবার আমি যখন বাইক নিয়ে বাড়ির দরজা দিয়ে প্রবেশ করবো, ততবারই দরজা খুলতে আর বন্ধ করতে নিলেই বিচ্ছিরি একটা শব্দ কানে বাজবে, মাঝে মাঝে দুপুর বেলার ভাত ঘুম নষ্ট হবে এই বিদঘুটে শব্দে। জানি স্বপ্নটা একটু অদ্ভুত, তবুও....
বাড়ির উঠোনে একটা হাসনাহেনার চারা লাগানোর জন্যে জায়গা খুজে নেবো। অইযে ওই সরু গলিটার পাশেই লাগানো যাবে। ঝামেলা কম, আমার বারান্দা থেকেই রোজ পানি দেওয়া যাবে। অবশ্য জবা ফুল আমার খুব পছন্দ। তবে কোন একটা কারণে হয়তো এই গাছটা কখনো রাখা হবে না আমার বাড়িতে।
বিকেল বেলা অফিস সেড়ে আসতে আসতে আমার সন্ধ্যে হয়ে যাবে। আসার পথে বাকর খানি কিনে নিয়ে আসব। জানি না সিলেটের বাকরখানি খেতে কেমন, তবে আমার মনে হয় না খুব একটা অসুবিধে হবে। ভাগ্য জোড়ে যেদিন আমার হাতের চা মজা হয়ে যাবে সেদিন আঙুল ডুবিয়ে বাকর খানি খাওয়ার জন্যেই এত সব আয়োজন।
আবার মাঝে মাঝে পুড়িটাও ঠিক ঠাক বানিয়ে ফেলব আমি। কাজের প্রেশার না থাকলে একটু দেরি করে হলেও পুড়ির সাথে গরম গরম দুধ চা খাওয়া যাবে আমার ছোট্ট বারান্দায় বসে। দুটো স্টিলের চেয়ার আর কিছু মোড়া কিনে রাখব। ছোট ছোট গুল্ম গাছ গুলোর জন্যে অনেক মশা থাকবে। কিন্তু কিছু করার নেই। কয়েলের ঘ্রান আমার সহ্য হয় না। তার থেকে আমি মশার কামড় খেয়ে খিজি মেরে বসে থাকতে রাজি। ওহ না, ভুল বললাম। মশা আমি একদম সহ্য করতে পারি না। তবে কোন একটা উপায় ঠিকই ম্যানেজ করে ফেলবো।
বারান্দার এক কোনায় ছোট ছোট খেলনার পাতিলে করে পানি আর চাল দেওয়া থাকবে। সকাল বিকেল অনেক মেহমান এসে হাজির হয় কিনা! অবশ্য বন্ধুরা কি মেহমান হয়? আমার মনে হয় না আমার যে বন্ধু বান্ধব, তাদেরকে মনে হয় না কখনো আসার জন্য দাওয়াত দিতে হবে। ওদের জন্যও দুই একটা ঘর এক্সট্রা রাখা থাকবে।
বসার ঘরের বই এর তাকে ধুলা বালি জমে একাকার হয়ে থাকবে। বই পড়ার চেয়ে আমার যে বই জমাতেই বেশি ভালো লাগে, সে কথা তত দিনে সবার বোঝা হয়ে যাবে। ধুলো পরিষ্কার করতে করতে খালা অযথাই বকে যাবে। আমি তাতে কান দেব না, সময়টা পাইই তো ওই শুক্র আর শনিবার। ধুলা বালু পরিষ্কারের সময়টা কই পাই?
ভেতরের রুম থেকে একটা পুরোনো দিনের হিন্দি গান বাজতে থাকবে। ফালগুনি পাঠাকের গান। মাই ফরেভার ফ্যাভারিট! আর আমি পিন্টারেস্ট থেকে দেখে দেখে কিছু একটা ক্যানভাসে তোলার চেষ্টা চালাবো।
সন্ধ্যার আযান ভেসে আসতে শুরু করবে দূরের মসজিদ থেকে। বর্ষাকালে হালকা ঝিরিঝিড়ি বৃষ্টি আর তার সাথে মাটির সোদা গন্ধ। আহহহ! সত্যি যদি স্বপ্ন সত্যি হয়ে যেত!