রাতের বেলা পেট ভরে গরুর মাংস আর ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে খুব ভালো ঘুম হচ্ছিল মিজানুর রহমান সাহেবের। কিন্তু রাত তিনটার সময় হঠাৎ মোবাইল ফোনের রিংটোনে ঘুম ভেঙে গেল। আধো আধো ঘুম চোখে দেখলেন তার আন্ডারে কাজ করা হাসিব রহমানের ফোন । খুব বিরক্ত নিয়ে কলটি রিসিভ করলেন। ওপাশ থেকে হাসিব সাহেব বললেন একজন নারীর লাশ পাওয়া গেছে তার এলাকাতে। ফরেনসিক টিম অলরেডি রওনা দিয়ে দিয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব মিজানুর রহমান সাহেবকে সেখানে আসতে হবে।
পুলিশ আর ডাক্তারদের এই একটাই সমস্যা। রাত নেই দিন নেই যেকোনো সময় ডিউটি কল দিবে, আর তখনই তড়িঘড়ি করে সেখানে রওনা দিতে হবে। তা আপনি যেই হোন না কেন কিংবা আপনার বাসায় যত সমস্যায় হোক না কেন। ঘর সংসার বউ-বাচ্চা বাদ দিয়ে সেই রাত তিনটাই হোক কিংবা ভোর চারটাই হোক আপনাদের দৌর দিতে হবেই। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই ইউনিফর্ম টা পড়ে রওনা দিলেন। যদিও এখন উনি জানেন না যে কোন জায়গা থেকে যেতে হবে। পরে শুনলেন লাশ টি পাওয়া গেছে ধানমন্ডিতে।
৩:৪০ বাজলো ধানমন্ডিতে পৌঁছাতে। হাসিব সাহেবের সাথে টুকিটাকি কথা সারতে সারতেই পড়ে লাশ দেখতে গেলেন মিজানুর সাহেব। দেখলেন মাথায় আঘাতের চিহ্ন,গলায় কিছু দিয়ে জোর করে শ্বাসরোধ করা হয়েছে সেই চিহ্ন। আবার দেখলেন হাতেও কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। যাই হোক পরে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল যে, নারীটির লাশ পাওয়া গেছে যেখানে তার পাশের বিল্ডিং এই চার তলাতে উনি থাকতেন। তিন মাস হয়েছে বিয়ে করেছেন। বয়স খুব বেশি না, ২৪/২৫ হবে। তারপর তার বাসায় ঢুকে দেখা গেল স্বামী গায়েব। স্বাভাবিকভাবেই স্বামীর উপরে সবার সন্দেহ পরল।
চার মাস আগে….
প্রায় আধাঘন্টা একা ক্রিমসন কাপে বসে থাকার পর তিহান একটা ক্যাপাচিনো অর্ডার করল। ধানমণ্ডিতে বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য ক্রিমসন কাপের থেকে বেস্ট প্লেস তার কাছে আর অন্য কোথাও লাগে না। কিন্তু যার জন্য এত অপেক্ষা করা সে এখনো আসেনি। ততক্ষণে তার ক্যাপুচিনোও চলে আসলো। তবে ক্যাপিচিনোর কাপে চুমুক দিতে দিতেই যার জন্য এতক্ষণ অপেক্ষা করল তিনি চলে আসলেন। আজ তিহান আর দিতির ফাইভ ইয়ারস অ্যানিভার্সারি। অন্যান্য দিনে দিতির দেরি হওয়া নিয়ে রাগারাগি করলেও আজ তিহান কোন রাগারাগি করেনি। একেতো অ্যানিভার্সারি তার উপরে দিতি আজকে শাড়ি পড়ে এসেছে। দিতিকে শাড়িতে দেখলে তিয়ান আর রাগ করে থাকতে পারে না। তিহান আজকের দিনটি নিয়ে খুব এক্সাইটেড ছিল। যদিও ছেলেটি জানতো না তার এই এক্সাইটমেন্ট কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো পূর্ণভাবে শেষ হয়ে যাবে।
তিহান : "কি হলো? মনমরা হয়ে আছো যে?"
দিতি : "তোমাকে কিছু কথা বলার আছে তিহান"
তিহান : "খুব কি সিরিয়াস কিছু? না মানে, আজকে অ্যানিভার্সারির দিন, একটা ভালো দিনে এরকম মনমরা হয়ে আছো ব্যাপারটা দেখতে ভালো লাগছে না"
দিতি : "জীবন তো আর তোমার ভাললাগা অনুযায়ী চলবে না তিহান" খুব মনমরা হয় উত্তর দিল দিতি।
তিহান : "কি হয়েছে বলোতো? আজকের দিনে এত সিরিয়াস কথা সত্যি আমার ভালো লাগছে না। ভাবলাম খুব সুন্দর একটা সময় কাটাবো কিন্তু যাই হোক, বল কি হয়েছে?"
দিতি : "আমার পক্ষে আর এই সম্পর্কটা আগানো সম্ভব না। আই এম সরি, আজকের দিনে তোমাকে এটা বলতে হলো। তবে আমার আর কিছু করার নেই। বাবা আমার বিয়ের জন্য পাত্র ঠিক করে ফেলেছে। এক মাসের মধ্যেই আমাদের বিয়ে।"
তিহান অবাক হয়ে দিতির দিকে তাকিয়ে থাকলো। ও বুঝতে পারছে না যা শুনেছে তা সত্যি কিনা। ৫ বছর হয়ে যাওয়ার পর কারো মুখ থেকে এই কথা শুনবে সেটা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি সে। বাকরুদ্ধ হয়ে গেল সে। বুঝতে পারছে না কি বলবে এখন দিতি কে ।
তিহান : "পাঁচ বছরের রিলেশনের পর এসব কোন ধরনের কথা দিতি? আগে তোমার মনে ছিল না যে তোমার পরিবার আমাকে মেনে নিবে কি নিবে না? তাছাড়া আমার তো সামনে ভালো চাকরি হবেই। আমি স্টুডেন্টও ভালো তাহলে সমস্যাটা কোথায়?"
দিতি : "দেখো পাঁচ বছর আগের ম্যাচুরিটি আর এখনকার ম্যাচুরিটি মিলিও না। আর তাছাড়া তোমার স্টাবলিশ হতে যথেষ্ট সময় লাগবে। আমার বয়স বাড়ছে, বাবাকে আমি আর কতদিন এভাবে আটকে রাখবো? তোমাকে তো অনেক আগে থেকেই বলেছি আমাদের সেইম এইজ রিলেশন। জিনিসটা নিয়ে একটু ভাবতে সিরিয়াস হতে। শুধু স্টুডেন্ট ভালো হলে হয় না বর্তমানে। দরকার হয় একটা স্টেবল ক্যারিয়ার। আর তুমি এখনো চাকরি পাওনি। তো আমার বাবা কি দেখে তোমার কাছে আমাকে বিয়ে দিবে এটা কি কখনো ভেবে দেখেছো? "
তিহান : "তাই বলে তোমার কাছে এত সহজ এত বছরের সম্পর্ক এইভাবে শেষ করে দেওয়া? এতটা বাস্তববাদী কবে থেকে হলে তুমি?"
দিতি : "দেখো আমার যা বলার তা বলা হয়ে গেছে। আমার মনে হয়না এই নিয়ে আর কথা বাড়িয়ে আমাদের দুজনেরই কারো কোন লাভ আছে। তুমি বরং তোমার ক্যারিয়ারে ফোকাস দাও। ভালো একটা চাকরি খুঁজে ভাল দেখে একটা মেয়ের সাথে বিয়ে করে নাও। আমার সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করো না এরপর। ভালো থেকো, উঠছি তাহলে আজ।"
তিহান হা করে দিতির দিকে তাকিয়ে থাকলো। এই মেয়েটিকে সে চিনে না, না এই মেয়েটি কে সে ভালোবেসেছিল ৫ বছর আগে। মুহূর্তের মধ্যেই যেন মেয়েটি বদলে গেছে। হা করে তাকিয়ে দিতির চলে যাওয়া দেখল। হাতের ক্যাপাচিনো এখনো শেষ হয়নি। ছেলেটি বুঝতে পারছে না এখনো তার সাথে কি হলো কিংবা কেনই বা হল?
চলবে......
Congratulations @aihtnyc! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 50 comments.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
To support your work, I also upvoted your post!
Check out the last post from @hivebuzz:
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!