চাকরির খুঁজে গ্রাম থেকে আমার আগমন ঢাকা শহরে। তবে আমি এই অচেনা নতুন শহরে এসে কোনো হোস্টেলে অথবা মেচে উঠিনি। উঠেছি আমার বড় ভাইয়ের বাসায়। ভাইয়া বছর পাঁচ হলো বিয়ে করে ভাবীকে নিয়ে শহরে থাকে। ভাইয়া ও ভাবী দুইজনই চাকরিজীবী। ভাইয়ার টাকা দিয়ে এত দিন আমার পড়াশুনা চলে ও আমাদের পরিবার চলে। তবে এখন আমার একটা চাকরি দরকার। আর কত বড় ভাইয়ের টাকায় দিন পার করবো। এই উদ্দেশ্য নিয়ে ঢাকায় আমার আগমন। ভাইয়ার বাসায় আসার সাথে সাথে ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো .....
ভাইয়া : তুই আমার বাসায় এসেছিস , তোর আর কোনো চিন্তা নাই। চাকরি পেতে হয়তো একটু দেরি হতে পারে , কিন্তু তুই ইন্টারভিউ দিতে থাক। আর এখানে থাকা খাওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা করবি না। যে কয়দিন চাকরি না হবে তুই আমাদের সাথেই থাকবি।
আমার ভাবীও অনেক উদার মনের একজন মানুষ। ভাবী বললো .....
ভাবী : তুমি তোমার পড়াশুনায় মনোযোগি হও। হাল ছাড়া যাবে না। চাকরি এখন যুদ্ধের মতো হয়ে গেছে তাই তোমাকে চেষ্টা করে যেতে হবে। আমরা তোমার সাথেই আছি। তুমি তোমার সকল সমস্যার কথা আমার সাথে শেয়ার করতে পারো।
ভাইয়া ভাবীর আমার জন্য এত উদারতা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। ভাইয়া ভাবী সকালে একসাথে বেরিয়ে যাই অফিসে। আর আমি সারাদিন বাসায় বসে বিন্দাস জীবন কাটাচ্চি। এভাবেই কেটে গেলো অনেক দিন। আমার ভিতরে এই মনোভাব জন্ম নিলো যে আমি তো ভালোই আছি চাকরি দিয়ে আর কি হবে। ফ্রীতে থাকা আর খাওয়া পেয়ে আমার চাকরি করার ইচ্ছা টাই মরে গেলো। এভাবে দেখতে দেখতে এক বছর কেটে গেলো। কিন্তু আমি কোনো চাকরির ব্যবস্থা করিনি। এখন ভাবী আর আগের মতো আমার সাথে কথা বলে না। আমার উপর ভিতরে ভিতরে অনেক রাগান্বিত হয়ে আছে। ও ভাইয়াকে চাপ দিতে লাগলো আমাকে যেন বাসা থেকে বের করে দেয়। তখন ভাইয়া ভাবীকে বুঝানোর চেষ্টা করতো।
ভাইয়া : দেখো আর কয়টা দিন ওরে সময় দাও দেখবা ও ঠিকি একটা চাকরির ব্যবস্থা করবে। আর চাকরিটা পেলেই ও বাসা থেকে চলে যাবে।
ভাবী : এভাবে আর কত দিন। চাকরি চাকরি করে তো একটা বছর পার হয়ে গেলো। এখনো সে কোনো চাকরি খুঁজে পাইনা। এভাবে আর কত দিন আমাদের কাঁধে বসে খাবে সে।
ভাইয়া চুপ করে থাকলো। কিছুই বললোনা ভাবীকে।
একদিন সকালে নাস্তা করে আমি ড্রয়িং রুমে বসে ছিলাম। এমন সময় ভাবী একটা লিস্ট নিয়ে এসে আমাকে বলতে লাগলো ....
ভাবী : এই নাও বাজারের লিস্ট। বাসায় বাজার নেই। এই বাজার গুলো একটু কষ্ট করে নিয়ে আসো। জানোই তো আমরা দুইজনই অফিসে চলে যাই। আর এমনিও আজ আমাদের অফিসে যেতে একটু দেরি হয়ে গেছে।
আমি : বাজারের লিস্ট ? আমার কাছে বাজার করার মতো এত সময় নেই। আমি তো ঢাকা আসলাম চাকরি খুঁজার জন্য।
আমার এই কথা শুনে ভাবী রেগে গেলেন ও বললেন .....
ভাবী : অজুহাত আর কত দেখাবে। আমার তো মনে পড়ছেনা তুমি লাস্ট কবে চাকরির জন্য আবেদন করেছো অথবা ইন্টারভিউ দিয়েছো। তাছাও তোমার পকেট খরচের টাকা নেয়া , নতুন কাপড় কেনা , ঢাকায় নতুন নতুন বন্ধু নিয়ে তাদের সাথে ঘুরে বেড়ানো এই সব কিছুইতো তোমার ঠিক আছে। এসবের জন্য তোমার অনেক সময় আছে। কিন্তু বাজার করার জন্য তোমার সময় নেই।
এমন সময় হটাৎ বাসার দরজায় কেউ একজন কলিং বেল চাপলো। দরজা খুলতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। দরজার ওপর পাশে দাঁড়িয়ে আছে শিউলি। মাস তিন হবে আমরা একজন আরেক জনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। সে আজ প্রতিদিনের মতো ভাইয়া ভাবী অফিসে চলে গেছে মনে করে বাসায় চলে এসেছে। তখন আমি নিজেকে সামলিয়ে ভাবীকে বলতে লাগলাম .....
আমি : ভাবী ও ভাইয়া ওর নাম শিউলি। বেশ কিছুদিন আগেই আমরা একজন আরেক জনকে পছন্দ করে বিয়ে করে ফেলেছি ।
ভাবী আমার উপর এমনি অনেক রাগান্বিত ছিল এখন শিউলিকে দেখে ভাবীর রাগ আরো বেড়ে গেলো।
ভাবী : বিয়ে করলে ভালো কথা , আমাদের তো একটু জানাতে পারতে। আর তোমার নিজেরইতো কোনো চাকরি নেই। এখন বউকে খাওয়াবে কি ?
আমি : চাকরি তো একদিন অবশ্যই পাবো। তাছাড়া তোমরা দুইজন তো ভালোই উপার্জন করছো। আর এই বাসায় ও তিনটি রুম আছে , চাকরি পাওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা দুইজন তোমাদের সাথে থাকতে চাই।
এত দিন ভাইয়া কোনো কথা বলেননি। কিন্তু এসব দেখার পর ভাইয়া চুপ রইলোনা। তখন ভাবীকে ভাইয়া ইশারা দিয়ে শিউলিকে ভিতরে নিয়ে যেতে বললো। আমার সাথে ভাইয়া একা কথা বলতে চাই।
ভাইয়া : (ধমক দিয়ে বলতে লাগলো ) তুই কি ভাবে পারলি এই কাজটা করতে। একটা বার আমাকে জানানোও প্রয়োজন মনে করলি না। গ্রামে বাবা মা আছে তাদেরকেও জানালিনা। এই ভাবে একটা মেয়েকে বিয়ে করে বাসায় নিয়ে আসলি।
আমি : এখানে খারাপ কি করেছি। এটা তো এমন কোনো বড় বেপার না। বিয়ে তো একদিন করতেই হবে। তাছাড়া সে আমার সাথে থাকলে আমার মানুষিক অবস্থাটা ভালো থাকবে।
ভাইয়া : (একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো ) আমি মনে হয় তোকে আর আমার বাসায় রাখতে পারবো না। আজ অফিস শেষ করে এসে যেন দেখি তুই আমার বাসা ছেড়ে চলে গেছিস।
আমার ভাইয়ার এই কথা শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
আমি : এক বছর ধরে আমি চাকরি খুঁজার চেষ্টা করেও আমি কোনো চাকরি পাইনি। এমন একটা কঠিন পরিস্থিতে তুমি আমাকে চলে যেতে বলছো ?
ভাইয়া : আমি তোকে সবসময় সাহায্য করতে চেয়েছি। তুই গত একবছর কোনো চাকরির জন্য আবেদনও করিস নাই সেটা জেনেও আমি তোকে কিছু বলিনি। তোর উপর আমি ভরসা করেছি। যদিও তোকে এখন বের করে দিতে আমার কষ্ট হচ্ছে। তবে আমার মনে হচ্ছে তোর ভবিষ্যতের জন্য এটি করা আমার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তখন আমি একটু রাগ হয়ে বলতে লাগলাম .....
আমি : ঠিক আছে আমি আজি তোমার বাসা ছেড়ে চলে যাবো। আর আশাকরি আমি একটা ভালো চাকরিও খুঁজে পাবো। তখন আমিও তোমাকে দেখিয়ে দিবো। এই বলে আমি শিউলিকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যাই। যাওয়ার সময় ভাইয়া শিউলির কাছে বেশ কিছু টাকা লুকিয়ে দিয়ে দেয়। কারণ ভাইয়া জানে আমার কাছে কোনো টাকা নেই। আপাদত এই টাকা দিয়ে আমি যাতে চলতে পারি।
বাসা ছাড়ার পর থেকে আমি ক্ষন্ন হয়ে চাকরি খুঁজতে থাকি। আমার হাতে যে টাকা গুলো আছে সে গুলো শেষ হয়ে গেলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো। কয়েকদিনের মধ্যেই আমি ভালো একটি চাকরি পেয়ে যাই। বেতন ও ভালো ছিল। আমার এখন সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে চললেও আমার ভাইয়ের প্রতি আমার একটা রাগ রয়েই গেলো।
আমাদের দুজনের সংসার এখন বেশ ভালোই কাটছে। সবকিছু ধরে আমরা অনেক আনন্দের সাথেই সংসার করতে লাগলাম। কিন্তু বিপত্তি বাধে তিন মাস পরেই। যখন আমার শালা মানে শিউলির ভাই আমার বাসায় এসে উঠে। সেও ঠিক আমার মতোই চাকরি খুঁজতে ঢাকাই আসে। আর সেও ঠিক একই রকম আচরণ শুরু করে যা আমি আমার ভাইয়ের বাসায় করতাম। চাকরি তো করতোই না বরং আমার কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে বিন্দাস সময় কাটাতো। আমার শালার এসব কর্মকান্ড দেখে আমি অনেক বিরক্ত হয়ে যাই। আমি তো আমার ভাইয়ের বাসায় এক বছর ফ্রি খেয়েছিলাম। কিন্তু আমি আমার শালাকে এক মাস ও সহ্য করতে পারছিনা।
আমার ভাই আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমার শালার মাধ্যমে আমি উপলব্ধি করতে পারছি যে কারো ভালোবাসার সুযোগ নিলে তার কতটা কষ্ট লাগে। তখন আমি বুঝতে পারি এমন একই রকমের কষ্ট আমিও আমার ভাই ও ভাবীকে দিয়েছি। আর সে কারণেই আমি আমার অপরাধ বোধ থেকে সিদ্ধান্ত নেই যে আমি আমার ভাই ও ভাবীর কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবো। পরদিন আমি আমার ভাইয়ের প্রতি সকল রাগ মুছে ভাইয়ের বাসায় গিয়ে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাই ও ভাবীর কাছেও ক্ষমা চাই। আর ক্ষমা অবশ্যই একটি মহৎ গুন। তাই ভাই ও ভাবী আমাকে ক্ষমা করে দেন। তারপর থেকে আমরা একসাথে থাকতে শুরু করি।
Thank you all for visiting my page and giving your nice support.
@aislam
Check my others social sides profile-
Facebook - https://www.facebook.com/profile.php?id=100007607950342
Instagram- https://www.instagram.com/aminul6032/?hl=en