কালাইরুটি

in BDCommunity4 years ago

192137636_529456008059188_1678570149551548676_n.jpg

কালাইরুটি আমার অনেক পছন্দের। ক্লাস ফাইভে প্রথম এই রুটি খাইছিলাম। বাসার নিচে ব্র্যাক অফিস ছিলো। সেখানের ম্যানেজার আঙ্কেল বাসার অপরপাশে ভাড়া থাকতো। আঙ্কেলের বাসা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। রাজশাহী-চাপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত একটা খাবার কালাইরুটি। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি অ্যান্টি কালাইরুটি পাঠায় দিছে সবার জন্য। সাথে ছিলো পোড়া বেগুন ভর্তা আর কাঁচা মরিচ ভর্তা। ভর্তার সাথে খেতে অসাধারণ লাগছিলো। আমি প্রায়ই অ্যান্টির কাছে রুটি খাইতে চাইতাম। সকালে অ্যান্টির বাসায় যেয়ে বসে থেকে রুটি বানানো দেখতাম। সাধারন রুটির মতো রুটি বেলনা দিয়ে না বেলে হাতের তালুতে চাপ দিয়ে দিয়ে বড় করে বানাতো। ভর্তা আগেই বানায় রাখতো। এরপরে রুটি বানানো শুরু করতো। বানানো শেষ হয়ে গেলে গরম মচমচে রুটি ভর্তা দিয়ে খেতে অসাধারণ লাগতো। বেগুন আর মরিচ ভর্তাতে সরিষা তেলের পরিমান অনেক দেয়া থাকতো। খাঁটি সরিষার তেলের ঝাঁজ আর বেশি করে ঝাল দিয়ে ভর্তা ভাবলেই জিভে জল চলে আসে। প্রায় দুই বছর অ্যান্টিরা বাসায় ছিলো। এরপরে বাসায় আর কালাইরুটি খাওয়া হয়নি। আমাদের ওদিকে মাষকলাই এর আটা পাওয়া যাইতো না ।

এস.এস.সি পরীক্ষার পরে নাটোরে কলেজে যখন ভর্তি হলাম। তখন শীতকালে দেখতাম বিকাল থেকে বাজারের একটা পাশে কালাইরুটি বানায়। অনেকদিন পরে কালাইরুটি দেখে জিভে জল চলে আসছিলো। সাথে সাথে দোকানে গিয়ে রুটি দিতে বললাম। সাথে বেগুন ভর্তা, ধনিয়া ভর্তা ও মরিচ ভর্তা। প্রথম রুটি যখন প্লেতে করে দিলো আমাকে সাথে সাথে ঝাপিয়ে পরে ভর্তা দিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। ভর্তাতে অনেক ঝালের কারনে কিছুক্ষণ পরে দেখি কান মাথা সব গরম হয়ে গেলো। ঘামা শুরু করে দিছি। চোখমুখ একদম লাল হয়ে গেছে। এরপরেও খাওয়া থামছে না। রুটি খাওয়ার সময় আমাদের বন্ধুদের ভিতরে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেতো। কে কয়টা রুটি খেতে পারতো আর কত ঝাল দিয়ে। রুটি খেতে খেতে সবার চোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছে তবুও কারোও খাওয়া থামছে না। কেউ না পারলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার খাওয়া শুরু হইতো। কলেজ জীবনে শীতকালে প্রতিদিন এই রুটি খেতাম। সন্ধ্যা হলেই আর রুমে থাকতে ইচ্ছা করতো না। বন্ধুরা দল বেঁধে সব বাজারে যেয়ে রুটি খেতাম।

কলেজ জীবন শেষ করে রাজশাহীতে এডমিশানের জন্য গেলাম। রাজশাহীতে যেয়ে দেখি ওখানে সবসময়ই কালাইরুটি বানায়। আমাকে আর পায় কে। ওখানে যেয়ে দেখি রুটির সাথে গরুর মাংস, ভুঁড়ি, হাঁসের মাংস, পোড়া বেগুন ভর্তা, ঝাল-পিয়াজ ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা দিয়েও খেতে পারবো। একেকটা দিয়ে খেয়ে স্বাদ একেকরকম লাগে। তবে সবথেকে বেশি মজা লাগে ভর্তা দিয়ে খেতে। রাজশাহীতে যতগুলো ভালো দোকান ছিলো সবগুলোতেই খেয়ে দেখছি। সবথেকে বেশি যেতাম লক্ষ্মীপুরে। ওখানে একটা খালার কাছে ভর্তা এতো মজা লাগতো যে ওখানেই মন বেশি টানতো। রাজশাহীতে প্রায় ছয় মাস ছিলাম। এরপরে ঢাকা চলে আসি। এরপর থেকে শুরুমাত্র কালাইরুটি খাওয়ার জন্য প্রতি বছর রাজশাহীতে যেতাম। ২০১৭ সালের পরে আর রাজশাহী যাওয়া হয়নি। বন্ধুকে কিছুদিন আগে ফোন করে বলছিলাম আমার জন্য যেনো মাষকলাইয়ের আটা পাঠায় দেয়। কুরিয়ারে আটা পেয়েই সাথে সাথে বাসায় এসে রুটি বানিয়ে ভর্তা দিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। প্রায় দুই বছরের বেশি সময় পরে কালাইরুটি খেতে পেরে অনেক ভালো লাগতেছিলো। কিন্তু রাস্তার পাশে দোকানে বসে খেয়ে যে মজা বাসায় এভাবে বানিয়ে খেয়ে ঐ মজাটা পাচ্ছিলাম না। দুধের স্বাদ জলে মিটাই আর কি।

Sort:  

Your content has been voted as a part of Encouragement program. Keep up the good work!

Use Ecency daily to boost your growth on platform!

Support Ecency
Vote for Proposal
Delegate HP and earn more