ছোটবেলা থেকেই গবেষণামূলক সাহিত্যকর্মের প্রতি আমার টান ছিল।
এ ধরনের বইপত্র পড়লে আসলে কোন বিদ্ধান মানুষের মনোজগতের ভাবধারা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়।
তাই, অবসরে পড়তাম এই গবেষণার বই।
অন্য ঘরানার বইগুলো কেবল কোনো নির্দিষ্ট বিষয়পট নিয়ে লেখে, গল্প উপন্যাস প্রবন্ধে অল্পকিছু মাত্র অনুভব করা যায়।
কিন্তু, অনুসন্ধানী গবেষণা জ্ঞানের অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যায়, ঐশীবানীর ওপারের সন্ধান লাভ করা যায়। 🙂
আমি বেশ অনেকদিন ধরে ভাবছি, নজরুলের কিছু সাহিত্যজগতের ভাবনা,চারুকথা নিয়ে লিখব। তাঁর জীবনঘেঁষা কিছু স্মৃতি আর লিখিত বইগুলো আর গবেষণাগ্রন্থগুলো পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম।
নজরুলের পুরো জীবনের সামান্য অংশ মাত্র তিনি তাঁর লেখনীতে স্থান দিয়েছেন। বেশ অনেক স্মৃতিই অগোচরে রয়ে গেছে যা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তার সমসাময়িক, ছোটবড় প্রায় অনেকেই গত হয়েছেন বহু বছর অাগে। তারপরেও অনেক তথ্য সম্পর্কে জানতে পারা যায় তাঁর গল্প উপন্যাসের পাতা উল্টালে।
দেখুন, একজন ভালো মানের সাহিত্যিক তার জীবন ও আশেপাশের মানুষ নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা করে। এদেশীয় সমাজ বাস্তবতা, মাটি ও মানুষের প্রভাব, সংস্কৃতি ও জীবনযাপনের অনেক কিছু কিন্তু উঠে আসে লেখা থেকে।
সবাই, জীবনের গল্পগুলো, নিত্যদিনে ঘটে যাওয়া আমাদের আশেপাশের ঘটনা লিখে রাখে না, হয় সবার লেখার হাত নেই, নয়তো লেখার ইচ্ছা ও ভাব নেই। শত শত বছর পরে লিখে রাখা সাহিত্যগুলোই অন্য প্রজন্মের কাছে পূর্বপুরূষের অভিজ্ঞান সম্পর্কে জানাতে কাজে অাসে, ধারনা করা যায় অতীত সমাজ বাস্তবতা কেমন ছিল।এ দিক থেকে যুগে যুগে সাহিত্যিকরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করে থাকেন।
কলকাতার শহরের উপকন্ঠে জীবন পার করা নজরুল তার আপন মনের সুরগুলো, মানুষের নাগরিক জীবনের পাওয়া না পাওয়ার গল্প, প্রেম বিরহ, রাজনীতি,জীবন জীবিকা ইত্যাদি নিয়ে সাহিত্য লিখতো। শুধু বঙ্গীয় সাহিত্য নিয়ে তার আনাগোনা ছিল না, সুদূর ইরান তুরান, কাবুল -কান্দাহার, ফারসি সাহিত্য, হিন্দি বুলবুলি, উর্দু কাওয়ালী ঢংয়ের সাহিত্য নিয়ে তার বসবাস ছিল। তাঁর চেতনা কেমন ছিল, লেখাগুলে পড়লেই বোঝা যায়। বিশ্বকবির আসনে বসার সম মর্যাদা নজরুল রাখতো, কিন্তু যেই দৈন্যদশায় আর নিদারুন কষ্ট আর দারিদ্র্যতার মধ্য দিয়ে তিনি দিনাতিপাত করেছিলেন তাতে একদিকে জীবিকা সামলানো, অন্যদিকে সাহিত্য নিয়ে লেখার অঢেল সময় ছিল না। অল্প যেটুকু সময় তিনি পেয়েছিলেন তা দিয়েই বিস্তর বিষয়ে লিখেছেন, সুনাম কুড়িয়েছেন সমগ্র বাংলা জুড়ে।
Source
আমি ছোটবেলা থেকেই নজরুলের লেখা আর সাহিত্য পড়ে বড় হয়েছি। কেন জানি, নজরুলের লেখাগুলোর প্রতি আমার অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। কখনো বাস্তব তুলনায় আমি যাইনি, কিন্তু, তারপরেও অন্য কবিদের থেকে নজরুলকে আলাদা মনে হতো।
লেখার ভঙ্গিমা আর সাবলীলভাব চোখে পড়ার মতো। তিনি ৪-৫ পৃষ্ঠার একটি কবিতা লিখতে ১ ঘন্টার বেশি সময় নিতেন না। দারুণ আশ্চর্যরুপে কবিতাগুলো ছিল বিশ্বমানের এবং অসীম ভাবের ব্যন্জনা দেয়া। স্বল্প সময়ের মধ্যে সুর দিয়ে গান লিখে ফেলতেন তিনি। পরে, লোকমুখে গানগুলো ছেয়ে যেত দারুনভাবে।
তিনি সংগীতের গীতিকা আর রচনায় অনবদ্য ছিলেন।
নজরুল তার জীবনের একটি লম্বা সময় কাটিয়েছেন কুমিল্লা অঞ্চলে। ঐতিহাসিক রাণী ভিক্টোরিয়ার নামে নামাঙ্কিত রাণীর দিঘীর পাড়, তালপুকুর পাড়ে নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত সংরক্ষণশালা আছে।শিশুদের জন্য লেখা" কাঠবিড়ালি, কাঠবিড়ালি " কবিতাটি কবি তালপুকুর পাড়ের পাশে বসে লিখেছিলেন।
অন্যান্য সাহিত্যকর্মগুলো, বিষের বাঁশি, শিউলিমালা ইত্যাদি লিখেছেন একইসময়ে।
নজরুলের মধ্যে একটি উদ্দাম বেপরোয়া ভাব ছিল, একই সাথে শান্ত প্রকৃতির কুন্তল জুড়ানো মানসিকতায় পরিস্ফুটিত ছিলেন তিনি।
ব্রিটিশ বিরোধী প্ররোচনামূলক লেখায় তার জুড়ি মেলা ভার। তিনি লেজ গুটিয়ে বসে থাকার মতো কবি ছিলেন না, প্রচন্ড স্বেচ্ছাচারী আর বাউন্ডুলে স্বভাবের ছিলেন।
দারুন প্রতিবাদী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি,এভাবে তার লেখায় ফুটে ওঠে সাধারন মজলুমের অন্যায় নির্যাতনের কথা,শাসকগোষ্ঠী কিভাবে শোষিত শ্রেণির ওপর চড়াও হয়, মিথ্যা বিনয়ের বিরুদ্ধে, যে বিনয় মাথা নত করে আনে, বশ্যতা স্বীকার করে, সে বিনয় বাদ দিয়ে অহংকারের বেশ নেয়ার জন্য বলেছেন তিনি। জেলজীবনে রচনা করেছেন অসংখ্য কবিতা ও উপন্যাস।
বিদ্রোহী কবিতা জেলের ছোট জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিতেন তিনি, সেগুলো অন্যরা কুড়িয়ে নিয়ে পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করতেন।
এই কবিতাগুলোর এমন সম্মোহনী শক্তি ছিল, প্রচন্ড রাগ আর ক্ষোভে মুষ্টিবদ্ধ হয়ে উঠতো হাত। জেলে যখন ব্রিটিশরা নজরুলকে ইলেক্ট্রিক শক দিত, অন্যদিকে বিদ্রোহী, শিকল পরা ছল, লাথি মার ভাঙরে তালা, সাধারন স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী গনমানুষের বিস্ফোরণ হতো, পুরো ভারতবর্ষ শক্তি যোগাড় করে নেমে পড়তো স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে। এ কবিতাগুলো ছিল মুক্তিযুদ্ধের পাথেয় ও শক্তির উৎস,যা বছরের পর বছর মানুষের মুক্তির অনুপ্রেরণা যোগাতে সাহায্য করেছে।
নজরুল তার বিচিত্র জীবনে প্রচুর অভিজ্ঞতা সন্চয় করেছিল। ফারসি সাহিত্যের প্রতি ছিল তার প্রবোল অনুরাগ। যারা রুমী, তিরমিযী, হাফিজ,ফেরদৌসী পড়েছেন তাদের নিশ্চয়ই ফার্সি সাহিত্য সম্পর্কে ধারনা আছে।
নজরুল ফার্সি সাহিত্যের আঙ্গিকে বাংলা ভাষায় অনেক হামদ ও নাত, ইসলামী গজল রচনা করেছেন। শ্যামাসঙ্গীত, ধর্মনিরপেক্ষতার বাউলিয়ানা রহস্য, দর্শন ও ভাবজগতের সমুদ্রে ডুব দিয়েছেন। যা নজরুলকে বাংলা সাহিত্যে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
নজরুল আমাদের জাতীয় কবি অথচ আমরা তার সম্পূর্ণ জীবনদর্শন ও সাহিত্যের পরিধি সম্পর্কে জ্ঞাত নই। কলকাতার মানুষের কাছে নজরুলের অন্যরকম সমাদর ও গ্রহনযোগ্যতা আছে।
যা হোক, নজরুল যে সাম্যের বাণী, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িক ভাব পোষন করতেন, বিদ্রোহী মরমী চিন্তা, প্রেম ও ভাব পোষন করতেন তা আজীবন বাঙালী মানসে প্রবাহমান থাকুক এই কামনা করি।
"মসজিদের ঐ মিম্বারের পাশে আমায় কবর দিও ভাই,
ঘুমিয়ে থেকে দূর থেকে যেন মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি শুনতে পাই "".............. (কাজী নজরুল ইসলাম)
জাতীয় কবির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। 💗💖
আল্লাহ হাফিজ। 👍✌️
is he famous person ? Any where i show him at some Bengali folk song
Yes, he is the rebel poet of Bangladesh.. Mostly renowned for anti -oppression literature all across the indian subcontinent.. You may have heard about him in distinguished bengali folk music.
Congratulations @asif15! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
Your next target is to reach 50 replies.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP