‘নবীর শিক্ষা করো না ভিক্ষা মেহনত করো সবে।'
এই হাত পাতাকে অনেকেই ভিক্ষা বলতে নারাজ,কারন এতে অনেক পরিশ্রম করেই টাকা আয় করতে হয়।
আচ্ছা দরিদ্র মানেই কি অপরের কাছে হাত পাতা?
হাতটা একটু বাকা তাই অপরের কাছে হাত পাতা?
স্বামী নেই তাই অপরের কাছে হাত পাতা?
একটা পা নেই তাই হাত পাতা?
সন্তান বিকলাঙ্গ তাই তাকে হুইলচেয়ার এ বসিয়ে অপরের কাছে হাত পাতা লাগবে?
বৃদ্ধা বাবা-মা অসুস্থ তাই তাকে নিয়ে রাস্তায় বসে হাত পাতা লাগবে?
রাস্তায় প্রাইভেট গাড়িতে যারা চলাফেরা করেন তারা দেখতে পান একটি যুবতী মেয়ে বা একটি কিশোরী মেয়ে একটি ছোট্ট বাচ্চা কোলে নিয়ে এসে আপনার গাড়ির পাশে হাত পেতে আছে। কেন তারা হাত পাতবে?
বাজারে কিছু কিনছেন, মানিব্যাগ বেরকরতেই দেখবেন একজন বলছে ছ্যার বা ম্যাডাম। রিকশা থেকে নামছেন একটি হাত ছ্যার বা ম্যাডাম।
জুম্মার নামাজ পড়তে বা পাচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে আদায় করে বেরুতে গেলেই এলাকায় এভাবে এই মানুষ গুলোকে দেখতে পাবেন।
ছবি গুলো দেখলেই বুঝা যায় প্রতিটি মহিলা কতটা ভালো স্বাস্থ্য এর অধিকারী। কাজ করে মাসে হয়তো পাবে ১০/১২ হাজার টাকা আর এখানে মানুষের কাছে হাত পেতে কোন কস্ট ছাড়াই পাবে ৩০-৫০ হাজার টাকা। তাহলে কেন কস্ট করে কাজ করতে যাবে এদের?
যারা গাজীপুর ঢাকা ট্রেনে চলাচল করেন অনেকেই হয়তোবা দেখেছেন একজন অন্ধ মানুষ বাদাম বিক্রি করে। একদিন তার ছবি তুলতে চেয়েছিলাম পারমিশন দেয়নি। সে বাদাম বিক্রি করে দুই সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে নাকি ভালোই আছে। সেতো হাত পাততে পারে, তাহলে কেন হাত পেতে তার কস্টের কথা গুলো বলে না? মজার বেপার হচ্ছে এই অন্ধ লোকটি তার দশ টাকার প্রতিটি প্যাকেটে একটি এক্সট্রা পলিথিন দিয়েদেয় যেনো বাদামের খোসা ফেলে ট্রেনের বগি ময়লা না করে।
একদিন এক বাসে ফেরার পথে চোখে পড়লো একজন বাসে তার পরিচয় দিচ্ছে সুন্দর ভাবে সে ইংরেজির শিক্ষক ছিলো, এখন স্কুলের চাকরিটা নেই তাই স্ত্রী সন্তান নিয়ে কস্টে আছে,সে অসুস্থ, তাই তাকে সাহায্য করতে।
যে বক্তব্য সে দিচ্ছে তার চাইতে কম কথা বলেও ইংরেজি প্রাইভেট পড়িয়ে টাকা আয় করা সম্ভব,তাহলে কেন সে হাত পাতবে?
দেখবেন অনেকেই কোন একটি রোগের অপারেশন এর কথা বলে মাসের পর মাস ভিক্ষা করেই যাচ্ছে।
একটি শিশু বাচ্চা কোলে নিয়ে আপনার গাড়ির পাশে এশে দাড়িয়ে সাহায্য চাইছে, সে কাজ করতে পারে কিন্তু করবে না। এতে আয় বেশি কস্ট কম।
PIC
এই ভিক্ষাবৃত্তিটা কি মুসলিম দেশগুলোতেই বেশি? রাসুল (সাঃ) ভিক্ষাবৃত্তি পেশাকে নিরুৎসাহিত করে পবিত্র হাদিসে স্পষ্ট করে বলেছেন-‘কষ্ট করে পিঠে বোঝা বহন করে জীবনযাপন করা ভিক্ষাবৃত্তি চেয়ে অনেক উত্তম।’-(বোখারি:১৪৭১)।
অন্য হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন-‘নিশ্চয়ই ওপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম।’-(বোখারি:১৪২৭)
এর মানে যে দাতা তার হাত যে গ্রহীতা তার হাতের চাইতে অনেক বেশি উত্তম।
মুসলিমদের তো এমন হবার কথা নয়!আমাদের ধনী মানুষ গুলো যদি সঠিক ভাবে যাকাত দেয় আর যদি তার সঠিক ব্যবহার হয় তাহলে দেশে কারো ভিক্ষা করার কথা নয়।
সঠিক নীতিমালা থাকলে আর তার প্রয়োগ যদি সঠিক ভাবে হয় তাহলে এমনটা হবার কথা নয়। আসুন একবার দেখি বাংলাদেশ সরকার এই ভিক্ষুকদের কল্যাণে কি করছে-
বাংলাদেশ সমাজসেবা অধিদপ্তর নামে একটি দপ্তর আছে,তাদের কাজ জাতিঘটনমূলক কাজ করা। ১৯৬১ ইং সালে এর জন্ম।
(ছবিঃমন্ত্রনালয়ের ওবেয়াইট)
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এর আওতায় সমাজসেবা অধিদফতর দেশের দুস্থ, অবহেলিত, দরিদ্র, এতিম এবং প্রতিবন্ধী দের কল্যাণে কাজ করার কথা। এই মন্ত্রণালয় "ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প করমসংস্থান" নামে একটি প্রকল্প ২০১০ সালে হাতে নেয় এবং ২০২২ সাল পর্যন্ত ৭৭৭.৮৭৯৬ লক্ষ টাকা ব্যয় ও করে।(সূত্রঃমন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইট)।একজনও কি কমানো গেছে ভিক্ষুক? সাধারন চোখে যা দেখি তাতেতো মনে হয় বেড়েছে কয়েকগুন।হয়তোবা কিছু মানুষকে খেটে খাওয়ার জন্য ছাগল, ভেন,গরু, সেলাই মেশিন কিনে দেয়া হয়েছে, কিছুদিনপর তারা তা বিক্রি করে আবার পরিশ্রমহীন ও বেশী আয় এর পেশা ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরে গেছে। এর পেছনে কাজ করছে একটি চক্র যা আমরা বিভিন্ন সময় মিডিয়াতে দেখতে পাই।
সমাজসেবা অধিদপ্ত্রের এই স্কিমে ধীরে ধীরে গরীব মানুষ কমে আসার কথা কিন্তু আমাদের দেশ উন্নত হচ্ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে গরীব মানুষের সংখ্যা। তিন ধরনের লোক ছাড়া আর কারও জন্য (অপরের কাছে) হাত পাতা বা ভিক্ষা করা ইসলাম ধর্মে বৈধ নয়।
(ক) যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সে ঋণ পরিশোধ করা পর্যন্ত চাইতে পারে।
(খ) যে ব্যক্তি কোনো কারণে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, সে তার প্রয়োজন মেটানোর উপযোগী সম্পদ চাইতে পারে।
(গ) যে ব্যক্তি দুর্ভিক্ষ কিংবা অভাব-অনটনে পড়েছে।
এই তিন ধরনের লোক ছাড়া আর কারও পক্ষে অন্যের কাছে হাত পাতা হারাম। যারা এভাবে হাত পাতে আসলে তারা হারাম খায়।(মুসলিম:-২২৯৪)।
বিপদে পড়লে যে কাউকে সাহায্য করতে হবে এটাও যেমন সত্যি,ঠিক তেমনি ভিক্ষা করে বেঁচে থাকাও একটি নিন্দনীয় কাজ সেটা মনে রাখতে হবে।
ইসলামে ভিক্ষা চাওয়া জায়েজ করলেও প্রবলভাবে নিরুৎসাহিত করেছে। অভাবে মানুষের কাছে হাত পেতে তা দূর করার চিন্তা না করে আল্লাহর কাছে চাইলে তিনি তা আপনাকে দিবেন। তিনিই নেয়ার ও দেয়ার একমাত্র মালিক।
শিশু থেকে বৃদ্ধ ও চলনশক্তিহীন মানুষদের দিয়ে সারা দেশে একশ্রেনীর মানুষ লাভজনক ভিক্ষা বাণিজ্যের নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে যাচ্ছে। আমরা অনেকেই জানি বা শুনেছি অনেক ভিক্ষুকের ঢাকা শহরে পাঁচ তলা বাড়িও নাকি আছে।
শুনেছি ভিক্ষাবৃত্তি রোধে-সৌদিআরবে কেউ ভিক্ষা করলে এক বছর পর্যন্ত জেল ও এক লাখ সৌদি রিয়াল বা ২২ লাখ ৭২ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ও ভিক্ষা করা নিষেধ। তাহলে দিন দিন দেশ উন্নত হওয়ার সাথে সাথে কি করে বাড়ছে এই পেশার লোকজন ?
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় সমাজ সেবা দিবস ও সমাজসেবা সপ্তাহ ২০১৬ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজ সেবা অধিদফতরকে নির্দেশ দেন-দেশে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। কি বেবস্থা নিয়েছেন সেই মন্ত্রনালয় জানি না, যেহেতু এখন আগের চাইতেও অনেক বেশি ভিক্ষুক এখন দেশে।
আসুন সবাই মিলে চেস্টা করি,যাকাতের টাকা দিয়ে শাড়ি লুংগী কিএ না দিয়ে বা ১০/২০ টাকা এদের হাতে না দিয়ে সম্মিলিতভাবে এলাকা ভিত্তিক একজন একজন করে ছোট ছোট বেবসা ধরিয়ে এই পেশা পরিবর্তনে কাজ করি।
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।