হারিকেন

in BDCommunity2 years ago (edited)

হ্যারিকেন
হারিকেন
হ্যারিকেন চিনে না এমন মানুষ খুব কমই আছে।অরিজিনাল হ্যারিকেন গ্রামে যাদের শেকড় তারাতো ১০০% চেনে ঢাকা শহরে যাদের জন্ম থেকে বেড়ে উঠা,কোন দিন গ্রামে যায়নি তাদের দু-চার পারসেন্ট নাও চিনতে পারে।দেশি নাটক বা সিনেমা যারা দেখে তারা ও চেনে।

আমার ছোট বেলা যখন দাদা নানা বাড়ি বেড়াতে যেতাম তখন গ্রামে ইলেক্ট্রিসিটি ছিলো না।সেই আশির দশকে। সন্ধ্যা হবার সাথে সাথেই কুপি জালিয়ে দেওয়া হতো।

kupi.jpg

OIP-.jpg
Pic Credit

কুপি বাতি টিনের বা কাচের বোতল এ সাইকেল এর টিউবে যে ভাল্ব দিয়ে বাতাস ডুকানো হয় সেটির ভিতর সুতি মোটা সুতা ডুকিয়ে তৈরী করা হতো। টিন দিয়ে বানানো কুপিও কিনতে পাওয়া যেতো। যাদের একটু টাকা পয়সা ছিলো তারা পিতলের কুপি বাতি ব্যবহার করতো।মাটির প্রদীপ এর উন্নত ভার্সন হয়তোবা এই কুপি। প্রদীপে ব্যবহার করা হতো সরিষার তেল আর কুপিতে ব্যবহার হতো বা হয় কেরোসিন তেল। বাজারে যারা পণ্য বিক্রি করতো তাদের কুপির আগুন দেয়ার সলিতাটা অনেক মোটা থাকতো কারন এতে আগুন এর আলো বেশি হতো।
কুপির আলোতেই সবাই পড়ালেখা করতো।তখন সবাই যেনো ভালো ভাবে আলো পায় তাই উঁচু কাঠের তৈরী একটি জিনিস এর উপর তা রাখা হতো।যেটাকে আমাদের গ্রামের ভাষায় দেউড়া বলতো।

Cupi.jpg

পরবর্তীতে টিনের কুপি একফুট উঁচু স্টেন্ড সহ বানানো হতো।
cupi-.jpg
Pic Credit
এই কপির আগুন অনেক সময় বাতাসে নিভে যেতো। আর সে কারনেই হয়তো তার সাথে দেয়া হয়েছিলো কাচের গোলাকার চিমনি।

c0af574273e4825a7f7aec0648a35d20.jpg
Pic Credit

Republic of Geneva তে জন্ম নেয়া Francois Pierre Ami Argand প্রথম কুপি বাতিকে ১৭৮০ইং সালে পরিবর্তন করে একটি গোলাকার কাচের চিমনি ও হাতল লাগিয়ে হ্যারিকেন তৈরী করেন। এতে সুবিধা হলো বাতাসে বাতির আগুন নিভে যেতো না। আগুন এর আলো কমানো বা বাড়ানো যেতো। ক্রমান্বয়ে আমাদের দেশে ও ধীরে ধীরে কুপি বাতির সাথে যোগ হলো হ্যারিকেন।
বিকেলে বাজারে যাওয়ার সময় সবাই হারিকেন হাতে করে নিয়ে যেতো। রাস্তা সঠিক ভাবে দেখে চলার জন্য রাতে ফেরার সময় সেটাতে কেরোসিন ভরে জ্বালিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরতো। এমন কি সবার হাতেই একটি করে একসের বা দুইসের তেল নেওয়া যায় এমন একটি কাচের বোতল থাকতো।পরের হাট বার পর‍্যন্ত তা দিয়েই চালাতে হতো।

অনেকেই দেখেছেন ডাকবিভাগ এর লোগোতেও হারিকেন দেয়া আছে,কিন্তু কেন? এর ও একটি কারন নিশ্চয়ই আছে তাই না? তখন কোন গ্রামের রাস্তা খুব বেশি চওড়া ছিলো না,যানবাহন ছিলো না,পায়ে হেটেই মানুষ চলাচল করতো,চিঠি নিয়ে ডাকপিয়নরা রাতে হারিকেন হাতেই এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতো।

1581832829_postalservice20200301175318.jpg

Pic Credit

গ্রামে গরু দিয়ে ধান মাড়াই করতো,রাতে মাছ শিকার করতে যেতো,বাড়ির উঠানে বসে গল্প করতো। পড়ার টেবিলে হারিকেন এর আলোতেই আলোকিত করে পড়তে হতো সবাইকে। চোখে আলো কম লাগার জন্য চিমনির সাথে কাগজ লাগিয়ে দেয়া হতো। ট্রেনের সিগনাল বাতির স্টেন্ডে হারিকেন ব্যবহার করা হতো। নদীতে নৌকার মাস্তুলে হারিকেন জালিয়ে রাতে নৌকা চলতো।

এখনো হারিয়ে যায়নি সে সব। যেখনে বিদ্যুৎ এখনো যায়নি বা যারা নিতে পারেনি তারা এখনো কুপি ও হারিকেন ব্যবহার করে।আলো ছাড়াও কারো ব্যথা কমাতে হারিকেন এর উপর কাপড় রেখে গরম করে সেক দেয়া হতো। শীতে নবজাতকের কাথা গরম করে ঘুম পাড়ানো হতো।

প্রযুক্তির যুগে সব কিছু ধীরে ধীরে বদলে গেছে,দখল করে নিয়েছে ড্রাইসেল ব্যটারীর টরস লাইট,তারপর রিচারজেবল ব্যটারীর লাইট।হারিকেন এর ভিতর সলিতা বদলে দখল করছে এলইডি লাইট।গ্রামে গ্রামে বসেছে সোলার প্যানেল ও সোলার লাইট।

harican Led Lamp.jpg
Pic Credit

যদিও আমাদের মন্ত্রী মহোদয়রা হ্যারিকেন বাদ দিতে রাজি নন।আমাদের ঐতিহ্য আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না।সোলার এর যুগে কি করে এতো দামে কেরোসিন কিনে তা ধরে রাখবে? তাই আইপিএস, ইউপিএস,সোলার প্যানেলই সবার ভরশা এখন।

IMG_20220829_204711.jpg
আমার বাসায় একটি হ্যারিক্যান ছিলো ১৯৯৩ সালে কিনেছিলাম।প্রযুক্তির এই যুগে কে এটি ব্যবহার করবে? আমার মেয়ের আবদার রক্ষা করে সেটিতে আমি এলইডি লাইট লাগিয়ে দেয়ার চেস্টা করছি। বাসায় শোপিস হিসাবে রেখে দিতে। সবাই এখন রিচারজেবল লাইটই ব্যবহার করে।

আপনার বাসায় হ্যারিকেন যদি থাকে তাহলে সেটিকে শোপিস হিসাবে একটু পরিবর্তন করে নিলে খারাপ হবে না।
ভালো থাকবেন।

তারিখঃ ১৩-০৯-২০২২ইং
সময়ঃ১২ঃ৪০ রাত