জার্মানির সাক্সনী রাজ্যের ড্রেসড্রেন শহরে দশ এপ্রিল ১৭৫৫ ইংরেজি সালে ক্রিশ্চিয়ান গটফ্রিড হ্যানিম্যান এবং জোহানা ক্রিশ্চিয়ানা দম্পতির ঘরে স্যামুয়েল হ্যানিম্যান জন্ম গ্রহণ করেন। একে একে তিনি ১১ টি ভাষার উপর সম্পূর্ণ দখল গ্রহন করেন। ১৭৭৫ সালে লিপজিগ বিশববিদ্যালয় থেকে মেডিসিন বিভাগে লেখা পড়া শুরু করেন। ১৭৭৯ সালের আগস্ট মাসে তিনি এমডি* (ডক্টর অব মেডিসিন) ডিগ্রি লাভ করেন।
পদার্থ,রসায়ন ও উদ্ভিদ বিদ্যায় ও তিনি জ্ঞান অর্জন করেন। রুগীদেরকে ঔষধ প্রয়োগ করতে করতে এক সময় উপলব্ধি করলেন এযালোপেথিক মেডিসিন মানুষের রোগ কে নিরমূল করতে পারে না। এতে কখনো রোগ চাপা পড়ে বা নতুন আরেকটি রোগের সৃষ্টি করে। তিনি শুরু করলেন এযালোপ্যাথিক মেডিসিন এর সমালোচনা মূলক লিখা প্রকাশ। তিনি নিজের বিবেক এর কাছে হেরে যান,তিনি দাবি করলেন তিনি যা শিখেছেন তাতে রুগীর উপকার করার চাইতে তিনি বেশি ক্ষতি করছেন।আজ যে ঔষধ ১০০% কার্যকর বলে বাজারজাত করা হয় কিছুদিন পর তা অকার্যকর বলে তা উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়।এযালোপ্যাথিক মেডিসিন একটি রোগে ব্যবহৃত হতে হতে আরো কঠিন রোগের সৃষ্টি করে।একটু চোখ খুলে ভেবে দেখুন,উচ্চ রক্তচাপের মেডিসিন খেতে খেতে তা আরোগ্য না হয়ে হার্ট ব্লকেজ হয়ে যাচ্ছে, ডায়াবেটিস এর অসুধ খেতে খেতে কিডনি রোগ হয়ে যাচ্ছে,স্কিন ডিজিজ এর মলম লাগিয়ে তা চাপা পড়ে শ্বাস কস্ট রোগ দেখা দিচ্ছে।এমন তো হবার কথা না। এই নিয়ে ভাবতে ভাবতে হ্যানিম্যান নিজেকে খুনি,প্রতারক হিসাবে বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন। তিনি নিজেকে এই পেশায় অর্থ উপার্জন এর লালসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেন। তাহলে চিকিৎসা ডিগ্রি নিয়েও কি শুধু অনুবাদক হয়েই জীবন কাটাবেন।সেটাও ভালো,তিনি তো কারো ক্ষতি করলেন না।
তিনি বিভিন্ন বই অনুবাদ করতে গিয়ে "A TREATISE ON THE MATERIA MEDICA" বই টি অনুবাদ করতে গিয়ে দেখতে পেলেন "সিংনকোনা(CINCHONA)" নামক একটি গাছের ছাল ম্যালেরিয়া জর সারাতে কার্যকর। তাই তিনি নিজেই এই গাছের বাকলের রস পান করে দেখলেন। দেখতে পেলেন তার শরীরে কম্প জ্বর দেখা দিয়েছে।আর সেই কারনে একটি ধারনায় উপনিত হলেন যে “যা একজন সুস্থ ব্যক্তির উপর প্রয়োগের ফলে বিভিন্ন লক্ষণ সমষ্টি উৎপন্ন করতে পারে,তা একই রকম লক্ষন সমষ্টি সমৃদ্ধ অসুস্থ দেহে প্রয়োগ করলে নিরাময় করতে সক্ষম” তাই তিনি এই পদ্ধতির নাম দিলেন-হোমিওপ্যাথি। হোমিওপ্যাথিতে এই মেডিসিন চায়না নামে পরিচিত।
১৭৮১ সাল থেকে হ্যানিম্যান প্রচলিত এযালোপ্যাথিক চিকিৎসার কুফল নিয়ে প্রবন্ধ লিখা ও প্রকাশ শুরু করেন। একে একে অনেক মেডিসিন আবিষ্কার করতে থাকেন এবং এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর দাঁড় করেন।
এই মহান সাধক,মানবতার সেবক ১৮৪৩ইং সালের ০২ জুলাই রোববার সকাল পাঁচ টায় প্যারিসে এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে বিদায় নেন।
আখতার উজ জামান
ডি.এইচ.এম.এস
তারিখ:০১ জুলাই'২২
সময়ঃ ১২-০০ এ.এম