আমি আমার বোন আর মা বাবা এই মিলে আমাদের পরিবার। ছোট্ট এই সুখী পরিবারকে বাবা যেভাবে আগলে রেখেছেন তাতে আমাদের কখনই কোন অভাব অনুভুত হয় নি। অভাব অনটন বলতে আসলে কি বুঝায় বাবার কল্যানে তা কখন বুঝতে পারি নি। তাই হয়তো এই ছোট্ট সংসার টা চালাতে বাবার কি কষ্ট হয় তা কখন বুঝতে পারি নি। দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বাবা আমাদের আগলে রাখেন।
ছোটবেলায় বাবার কাছে নানা বিষয় এ নানা বায়না করেছি, কখনো খালি হাতে ফিরতে হয়নি। কিন্তু কখনো ভেবে দেখিনি যে আবদার মেটাতে বাবাকে কতটা বাড়তি খাটনি খাটতে হয়েছে।
গত রমজান মাসের ঘটনা, যথারিতি রমজানের প্রথম থেকেই বাবার পিড়াপিড়ি শুরু হয়ে গেছে, "এই তোদের কার কি লাগবে এই ঈদে বল।" আমি আর আমার বোন দুজনেরই কোন এক সঙ্গত কারণে সেবার কেনাকাটা করার একদম ইচ্ছে ছিল না। বাবা কে বলতে লাগলাম বাবা এবার আর কিনব না তুমি একটা কিছু কিনে ফেলো৷
প্রত্যেক ঈদ এ দেখা যায় আমাদেরকে নামি দামি কাপড় কিনে দিয়ে বাবা নিজের জন্য অল্পদামে কাজ চালানোর মত কিছু কিনে নেয়, মাঝে মাঝে তাও ভ্যাগে জুটে না। এবার তাই আমরা ভাই বোন মিলে ঠিক করলাম নিজেরা কিছু না কিনে হলেও বাবার জন্যে কিছু একটা উপহার কিনব।
দেখতে দেখতে রমজানের একদম শেষে চলে এলাম ঈদ এর আর বাকি মাত্র ৪ দিন বাবা আবার জিজ্ঞেশ করতে লাগল, "কিরে তোরা কি এবার কিছু কিনবি না নাকি? " বাবা তুমি তো প্রত্তেক বার ই আমাদের কিছু না কিছু কিনে দাও এবার না হয় নিজের জন্যই কিন।" বাবা হেসে উঠে অনেক টা আবেগের সুরেই বলল, "তোদেরকে ঘিরেই ত আমার পৃথিবী তোদের খুশি মানেই আমার খুশি আমার আর কিছু লাগবে না।
ভাবতে লাগলাম কি করা যায়, দুই ভাইবোনের কাছে কিছু জমানো টাকা ছিল সেগুলো একত্র করলাম বাবার জন্য একটা সুন্দর শার্ট কিনলাম, চাঁদ রাতে বাবা বলেন যে তোরা যে এই ঈদ এ কিছুই কিনলি না, তেরা কাল কি পরবি বল তো?"
উত্তরে কিছু বললাম না, চুপ করে রইলাম, বোনকে ইশারা করে করলাম শার্ট টা নিয়ে আয়৷ "বাবা, তুমি আমাদের জন্য কত কষ্ট করো এর শোধ কি আমরা কখন করতে পারব? প্রতিবারই তুমি নিজে কিছু না কিনে আমাদের জন্য ভাল ভাল কাপড় নিয়ে আসো, এবার নাহয় আমরাই তোমাকে দিলাম।" সেদিন বাবার মুখে যে খুশি দেখেছিলাম তা কখনো ভুলতে পারব না। নিজের অজান্তেই চোখের কোনে পানি চলে এল।
সম্ভবত প্রত্যেক বাবাই একই রকম। তারা সর্বদা তাদের সন্তানের মঙ্গল কামনা করে এবং তাদের আবদার মেটানোর চেষ্টা করে। এবং এর জন্য তাদের নিজের ইচ্ছা কে বিসর্জন দিতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করো না। ভালো থাকুক প্রত্যেক বাবারাই।