আজ আমাদের অষ্টম সেমিস্টার শেষ হলো। চার মাস ধরে আমাদের মধ্যে যে ক্লান্তি তৈরি হয়েছে তা কিভাবে দূর করা যায় তাই ভাবতেছিলাম। হঠাৎ করেই আমার বন্ধু সৌরভ বললো চল কোথাও ঘুরে আসি। ঘুরার কথা শুনে আমি আর না করতে পারলাম না। ঘুরতে যাওয়াটা আমার একটা শখ বলা যায় ।
এখন আসলো পরিকল্পনা এর পালা। ঘুরার জায়গা হিসেবে আমারা বেছে নিলাম সিলেট বিভাগ কে, যা বাংলাদেশের লন্ডন নামেও পরিচিত। হঠাৎ করেই আমাদের বন্ধু শাকিল আবদার করে বসলো সিলেট যাওয়ার পথে ওদের বাসা কিশোরগঞ্জে একদিন থেকে যেতে হবে। বন্ধুর আবদারের মুখে আমরা না করতে পারলাম না। আমাদের সাথে আমাদের আরো আটজন বন্ধু যোগ দিলো। আমাদের নতুন ভ্রমণ স্থান হিসেবে যোগ হলো কিশোরগঞ্জ জেলা।
কিশোরগঞ্জ জেলা এবং সিলেট বিভাগে আমাদের দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ন অনেকগুলো পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে । আমরা ঠিক করলাম আমরা কিশোরগঞ্জ এবং সিলেটের বেশ কয়েকটি জায়গা ভ্রমন করবো , যার মধ্যে প্রধান জায়গাগুলো হলো - সিলেটের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, বিছনাকান্দি, রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, জাফলং, শাহজালাল এবং শাহপরান এর মাজার, মালনিছড়া চা বাগান এবং কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওর, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ইত্যাদি।
ঘুরার সুবিধার্থে আমরা ঠিক করলাম আমরা কিশোরগঞ্জে একদিন এবং সিলেটে তিন দিন অবস্থান করবো । সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হলো ৫ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত আমাদের ঘুরার কার্যক্রম চলবে ৷ যার মধ্যে ৪ তারিখ ঢাকায় যাওয়া এবং ১০ তারিখ পুনরায় বাসায় ফেরা। ৫ তারিখ বন্ধুর বাসায় যাওয়া এবং বাকি ৬, ৭, ৮ এবং ৯ তারিখ আমরা সিলেটের ও কিশোরগঞ্জের পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখবো। সেই অনুয়ায়ী আমারা নিজেদের প্রস্তুতি শুরু করি৷
৪ তারিখ খুব সকালেই আমার ঘুম ভেজ্ঞে জায় ৷ ঘুম থেকে উঠেই আমি সকালের নাস্তা সেরে ব্যাগ গুছাতে শুরু করে দেই ৷ পরদিন সকাল ১০ টায় আমাদের ট্রেইন ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। দু'একজন ছাড়া আমরা সবাই ঢাকার বাইরে বর্তমানে। আমিও কুমিল্লা থাকায় আমাকে আগেই রওনা দিতে হবে ঢাকার উদ্দেশ্যে। সেই অনুয়ায়ী আমি বেলা ২ টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম ফ্যামালি থেকে অনুমতি নিয়ে। বিকেল ৫ টার দিকে আমি ঢাকায় পৌছে যাই। ঢাকায় পৌঁছে আমি আমার প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটা সেরে নেই, সাথে সবার জন্য একটি করে টি- শার্ট কিনে নেই পরিধান করার জন্য। আমার অন্য বন্ধুরাও রাত আটটার মধ্যেই ঢাকায় চলে আসে।
৫ তারিখ ( প্রথম দিন ) ঃ " আজকের পরিকল্পনা - বন্ধুর বাসায় যাওয়া । "
সকাল সাতটার মধ্যে আমরা ঘুম থেকে উঠে পড়ি। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েই বেরিয়ে পড়ি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশ্যে। আজ আমাদের বন্ধুর বাড়ি কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পালা। কমলাপুর থেকে আমাদের ট্রেন সকাল দশটায়। সকাল 9 টার মধ্যে আমরা সবাই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে যাই। ৯.৩০ এ আমরা ট্রেনে উঠে পড়ি এবং যথাসময় দশটায় "কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস" নামের ট্রেনটি কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে ।
এটা আমাদের অনেকের জীবনে প্রথম ট্রেইন ভ্রমন ছিলো। গান গাওয়া থেকে শুরু করে চায়ের আড্ডায় আমরা পথে এগোতে থাকি৷ বেলা তিনটার দিকে আমরা কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে এসে পৌঁছাই , যেখানে আমাদের বন্ধু শাকিল আমাদের জন্য আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা বন্ধুর বাসায় পৌঁছে যাই। তারপর ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা বেরিয়ে পড়ি বন্ধুর এলাকা ঘুরতে। রাতে আমরা আয়োজন করি একটি বারবিকিউ পার্টির। পার্টিতে আমরা মেতে উঠি গান-বাজনা আর ছোট ছোট দুষ্টুমিতে। ওই রাতটি ছিল আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের একটি রাত যা কখনো ভুলার নয়।
৬ তারিখ ( দ্বিতীয় দিন) ঃ " আজকের পরিকল্পনা নিকলী হাওর ,অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন ভ্রমণ । "
এই দিন সকাল আটটায় আমারা ঘুম থেকে উঠে পড়ি । ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা সেরে তৈরী হয়ে যাই। আমাদের আজকের ঘুরার জায়গা গুলো হল নিকলী হাওর, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন। সকাল 9 টার দিকে আমরা একটি সিএনজি ভাড়া করে রওনা দেই নিকলীর উদ্দেশ্যে এবং প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা গন্তব্যে পৌঁছে যাই। সেখান থেকে একটি ঘাট থেকে আমরা একটি ট্রলার ভাড়া করি সারাদিনের জন্য। ট্রলারে করে আমরা হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকি। হাওরের পরিবেশ আমাদেরকে খুব মুগ্ধ করেছিল সেদিন।
দুপুরের দিকে হাওরের মাঝখানে রাস্তার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আমরা অটো রিস্কা ভাড়া করি। চারদিকে পানি আর পানি - তার মাঝখানের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলা, মনে হচ্ছিল স্বর্গের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর একটি খাবার হোটেলে হাওরের মাছ দিয়ে আমরা দুপুরের খাবার সেরে নেই । খাওয়া শেষ করে আমরা ছুটে চলি মিঠামইনের দিকে। মিঠামইনে ট্রলার থামিয়ে আমরা হাওরে গোসল করতে নেমে পরি । গোসলশেষে বিকালটা হাওরে কাটিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসি ট্রলার ঘাটে। পুনরায় একটি সিএনজি ভাড়া করে আমরা রাত আটটার মধ্যে ফিরে আসি বন্ধুর বাসায়। আজ রাত 12 টায় কিশোরগঞ্জ থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিব বাসে করে। সেই অনুযায়ী আমরা বন্ধুর বাসায় খাওয়া-দাওয়া শেষে হালকা রেস্ট নিয়ে নেই। রাত ১১.৩০ এর দিকে আমরা বন্ধুর বাসায় বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পরি সিলেটের উদ্দেশ্যে।
এই দুইটা দিন বন্ধুর আপ্পায়ন আমাদেরকে মুগ্ধ করে তুলেছিল। বন্ধুর বাসায় কাটানো দিনগুলো কখনো ভুলার মত নয়।
ট্যুরের সিলেট পর্বের বিস্তারিত থাকবে দ্বিতীয় পর্বে ।
😂 আমি লুঙ্গী ধইরা আছি, নইস
lungi tei bangali
আমি সৌরভ ভাইকে দেখতে চাই 😂
ভাই ওনি এখন পরদা করে ।
আগে থেকেই তো পর্দা করতে দেখি।
🥲 Eto dekhe ki hobe
আমার জায়গায় কোন আপু হইলে তো নিজ দায়িত্বে ঠিকেই পিক পাঠায় দিতেন ইনবক্সে। আমাদের বেলায় এমন বিমাতাসূলভ আচরণ কেন ভাই।
Congratulations @fa-him! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
Your next target is to reach 50 replies.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Check out the last post from @hivebuzz:
Hi @fa-him, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON