36ই জুলাই (5ই আগস্ট), 2024
বেলা ১২টা, আফতাবনগর
আমি মনে রাখতে চাই আজীবন। তাই লিখে রাখবো প্রত্যেকটা খুঁটিনাটি!
পুলিশ যখন আকাশমুখী বন্দুকটা নামিয়ে জনতার দিকে তাক করে, ঘুরে দৌড়টা তখনই দেয়া উচিৎ, কিন্তু তখনও আমরা দাঁড়ায়ে ছিলাম। যেন, দু'পক্ষই একে অপরকে যাচাই করছে। "পুলিশ কি গুলি করবে?"/ "এদের দিকে বন্দুক তাক করলেইতো দৌড় দিবে আশা করি।"
কিন্তু আমাদের কথা হইলো "গুলি যতক্ষণ ছুঁড়বেনা পিছু হটবোনা!" কয়েক সেকেন্ডের এই নীরব-নার্ভ যুদ্ধের পর পুলিশ গুলি ছুঁড়ে।
[পুলিশের বুলেট, বোমার বিপরীতে আমাদের ঢাল। প্রচন্ড কেওয়াসের মাঝে আসলে ছবিটবি সেভাবে তোলার কথা মাথায়ই ছিলোনা। এখন আফসোস হচ্ছে মুহুর্ত বন্দী না করতে পারার!]
গুলির শব্দটা হবার সাথে সাথে কিংবা সেকেন্ড আগে একটা ঢেউয়ের মতো পুরা ফ্রন্ট লাইন ঘুরে দে দুদ্দাড় দৌড়। প্রথম প্রথম বন্দুকের গুলির শব্দের সাথে আমার পা ব্রেইনের নির্দেশনার আগেই দৌড় দেয় যেন, পাভলভের-ডগ থিওরির মতো।
জীবনে সেই প্রথম এত কাছাকাছি গুলাগুলির সম্মুখে যাওয়া।
প্রথম দৌড়টা যখন দিয়েছিলাম, তখন এমন মনে হয়েছিল অভুক্ত বাঘের তাড়া খেয়েছি, গুলির গতির থেকে আমার দৌড়ের গতি বেশী হতে হবে। আমার তখনও ধারণা ওরা হেভি বুলেট ব্যবহার করতেসে, যার মানে বুলেট একটা লাগলে কুপোকাত। কিসের পা ব্যথা আর কিসের খোঁড়ানি, তখন আমি উসাইন-বোল্ট!
এড্রেনালিন রাশ হইলে মানুষ যে কি কি সম্ভব করে ফেলে!
৪ আগস্টের মহান লাইলাতুল-গুজব রাতের পর, আমার প্রিয় শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাকে বললো ল্যাংড়া পা নিয়ে বাইর না হইতে।
চা-পাতি, গুলি নিয়ে ছাত্রলীগ বর্বরোচিত হামলা করবে, তার প্রমাণতো রাখতেসিলোই ওরা গত কদিন ধরে। তাছাড়া আগে ছিলো ক্লোজ-কম্ব্যাটের অস্ত্র, ছুরি, চা-পাতি, রাম-দা... আর্মি "মদত দিবেনা হাসিনাকে" জানার পরতো সে তার গুণ্ডাবাহিনীর হাতে তুলে দিলো বন্দুক, গুলি! সেসব শুনে খানিকটা ভয় পাইনি অস্বীকার করবোনা।
তার আগের রাতে আমর বললো, এই ল্যাংড়া পা নিয়া বাইর হওয়া মানে তুমি "লায়েবিলিটি" কথাটা আউট-অফ কন্সার্নে বলসে জানি, (ডিডন্ট নো আমর চান কুড প্লে ডার্টি!) বেশ গায়ে লাগলো, হেতে জানতো গায়ে লাগবে।
তারপরে অন্য একটি মেয়ে অনলাইনে পোস্ট করেছে"মেয়েরা রাস্তায় না নেমে বাসায় বসে দোয়া করেন। কারণ মেয়েরা সম্মুখ সমরে লায়েবিলিটি হবেন। আপনাদের ইজ্জতে হাত দিবে শত্রুরা। ভায়েরা যুদ্ধে পিছায়ে যাবে আপনার জন্য, আপনাকে রক্ষা করতে আহত হবে... ইত্যাদি ইত্যাদি!"
এবং প্রায় ৮0% মেয়েরা আসলে এই ধারণাটিকে সমর্থন করেছে! নিজেকে বারবার জায়গায় জায়গায় "দায়বদ্দতা"র ট্যাগ পেতে দেখে সত্যিই প্রথম দ্বিধায় পড়েছিলাম।
আমি প্রায় বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম, হয়তো আমার উচিত নয় রাস্তায় নামা, হয়তো তারাই ঠিক। কিন্তু তারপরে একজন মেয়ে এটিকে একতাকে বিভক্ত করার জন্য একটি মূর্খ দাবী হিসাবে বলার পর ভীন্ন দৃষ্টিতে ভাবী। তখন আমিও বুঝতে পেরেছিলাম, প্রথম থেকেই, নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি লড়াই করেছে, সর্বত্র, এবং প্রকৃতপক্ষে ছেলেদের রক্ষা করার জন্য বেশিরভাগ মেয়েদরাই ঢাল হতে পারে, কারণ ছেলেদের তুলনায় পুলিশ মেয়েদেরকে সহজে গুলি করবেনা। (যেইটার প্রমাণ সম্মুখ সমরে আসলে পাওয়াও গেছে!)
আমাদের বাড্ডা, রামপুরা এলাকা সবসময়ই প্রায় শুরু থেকেই ওয়ারজোন ছিলো। আবার এদিকে কারফিউ চলছে কড়া, এর মাঝে একা একা কিভাবে শাহবাগ যাব সেটাও চিন্তার বিষয়। এরকম নানান সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমায়ে গেলাম।
সকালে ঘুম ভাঙতেই আয়শা বললো "আপু শাহবাগ যাবেননা?" আমি খুবই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম "বাইরে যে ভয়াবহ অবস্থা চলতেসে, আপনি আসলেই যাবনে!?" সে খুব উৎসাহ নিয়ে যেতে চাইলো। আমারও সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব কেটে গেলো মুহূর্তেই। আগের রাতে ভালোমতো যত্ন নেয়ায় পায়ের ব্যথাও কম বোধ হলো। বললাম "চলেন, রেডি হন", তখন বাজে ১০টার কিছু বেশী।
আপু ভাত রেঁধেছিলেন, চটপট দুটো মুখে দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
অস্ত্র হিসাবে সাথে নিলাম মরিচের-গুঁড়া পানি, সব্জিকাটা ছুরি, আর কেঁচি!
All the contents are mine until mentioned otherwise.
Khobar chai ground level theke.
ঘটনার মাঝে লেখার সুযোগ হয়নি। এখন মেমরি ঘেঁটে সব একে একে সাজানোর চেষ্টা করছি!
Bote
Amar khobar o bhalo noi
Why, what happened!