বাড্ডা রোডে উঠতেই দেখি, All Quiet On The Western Front এর মতো চারিদিক সুনসান।
অস্ত্র হিসাবে সাথে নিলাম মরিচের-গুঁড়া পানি, সব্জিকাটা ছুরি, আর কেঁচি! অমরের সাবধানবাণী মতো, বাংলা ফ্ল্যাগ হয়ে বের না হয়ে (কারণ এক কয়েকদিন সবসময় লাল পরে বের হচ্ছিলাম!), কালারলেস কাপড় পরলাম। বাড্ডা রোডে উঠতেই দেখি, All Quiet On The Western Front এর মতো চারিদিক সুনসান। মেরুল বাড্ডা পৌঁছে দেখি পুলিশের। চট করে ঢুকে গেলাম পাশের গলিতে। আয়শা ভরষা দিলো, সে চেনে রাস্তাঘাট এদিকে। না চিনলেও পথই পথ দেখাবে গলি ঘুরে মেইন রোডে উঠার মুখে দেখি আবারও আবারও পুলিশের বহর। আবার উল্টা ঘুরে গলির ভেতর ঢুকে পড়লাম, বৃষ্টি পড়ছে ঝিরিঝিরি।
আমাদেরকে মোটামুটি "এই কারফিউর মাঝে কোথায় যাচ্ছি" জিজ্ঞেস করা ছাড়াই সবাই গলির রাস্তা দেখিয়ে দিলো। জিজ্ঞেস করলোনা, কেউ কোথায় যাবেন, কিন্তু তারা সঠিক রাস্তা বাতলে দিতে থাকলো। গলির ভেতর রিক্সা চলছে কিন্তু কেউ আমাদের নেয়না। এক রিক্সাওয়ালাতো "মামা যাবেন?" এর উত্তরে "হ্যা/না" না বলে ডিরেক্ট বলে "কি করতে যামু, মরতে?"
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম দুজনে। আয়শা হাসতে হাসতে বলে "আপনাকে দেখে পুরা কমিউনিস্ট লাগতেসে বলে ভয় পাইসে"!
যদিও ভেবেছিলাম, পুলিশের সামনে দিয়েই যাওয়ার চেষ্টা করবো, ধরলে বলবো "ঢাকা মেডিকেলে আত্মীয় দেখতে যাচ্ছি " কিন্তু নিজের কাছেই যুক্তিটা হাস্যকর শোনাইলো, তারপর আয়শা'র বাণী দেখেই ছাত্রফ্রন্টের নেত্রী লাগায়, সেইটা ধোপে টিকবেনা!
এক চাচা-মিয়া টং-এর দোকান থেকে মন্তব্য করলো, "দেখসোনি কারবারটা! জান হাতে লইয়া কেমনে যুদ্ধে যাইতেসে"
অগ্যতা, গোলকধাঁধার মধ্যে ঘুরতেই থাকলাম চক্রাকারে। প্রায় ঘন্টাখানেক টানা হাঁটার পর হঠাৎ করে তুমুল হৈচৈ আর গোলাগুলি কানে এলো।
শব্দ লক্ষ্য করে দৌড় দিলাম। যেয়ে দেখি ইট-পাটকেল, লাঠিসোঠা, পাতিলের ঢাকনা, টিনের বেড়া ঢাল হিসাবে ধরে দেশী "ক্যাপ্টেন আমেরিকারা" সেক্টর "আফতাবনগর" দখলের চেষ্টা করছে ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে।
প্রথমবার কারফিউ শিথিলের পর থেকে, এতদিন যেই মিছিলেই গিয়েছিলাম, সেগুলা সবই ছিলো শান্তিপূর্ণ। রাস্তা মাঝে বসে মিছিল, অথবা সংবদ্ধভাবে, বড় দল করে এগোনো, যাতে গুন্ডাদের আক্রমণ হলে ঠেকানো যায়। এই প্রথম একদম গোলাগুলির সামনে পড়ে সন্দেহাতীতভাবেই আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি, কিন্তু আমার পা এগিয়ে যেতে থাকে। আয়শাকে পিছনের দলের পাশে থাকতে বলে, সামনে এগিয়ে গেলাম।
নিউজ চ্যানেলে " পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া" বাকিটা বহুবার শুনেছি, তখন ভেবেছি "বন্দুকের গুলির সামনে এখানে পাল্টা দেওয়ার কোনো চান্স থাকে নাকি!"
তাইলে "পাল্টা ধাওয়া"টা কই থেকে আসে!
ফ্রন্ট লাইনে যোগ দেবার প্রথম ১০/১৫ মিনিটে এই "পাল্টা-ধাওয়ার" রহস্য উন্মোচিত হয়ে গেলো।
পুলিশের সাথে আমাদের সংঘর্ষের ব্যাপারটা অনেকটা "কাবাডি" খেলার মতো। আমরা "কাবাডি কাবাডি" করতে করতে একদল বেলুন, লাঠি, ভাঙা ইটের টুকরা নিয়ে এগিয়ে যাই। আমাদের সামনে ঢাল হিসাবে রাখি পাতিলের ঢাকনা, একটা ৪/৬ ফুটের টিনের বেড়া (কোথাও থেকে খুলে আনা), গাছের আড়াল, সিমেন্টের কিছু ২/১ ফুট চৌরঙ্গী জাতীয় পাইপ!