আপনারা যারা পড়াশুনা করতে চান না, কিন্তু যেহেতু রাজনীতি বুঝতে, রাজনীতির ইতিহাস জানাটা জরুরি, আমার ইচ্ছে বইগুলার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো প্যারা করে এখানে দেয়া। তারই প্রেক্ষিতে, আজকে "মূলধারা-৭১" বইটা নিয়ে আলোচনা করবো।
1960 - সামিরক আইেনর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, ১৯৬০ সাল থেক পূর্ব বাংলার অর্থনীতিবিদ, সাংবািদক ও সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করার উপায় হিসাবে পূর্ব বাংলার সম্পদের একতরফা পাচার রোধ এবং সেই সম্পদ সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রদেশের পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দাবি ক্রমশ প্রবল হয়ে উঠে।
1963 - আওয়ামী লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর তার একনিষ্ঠ অনুগামী শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৩ সালে আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত করেন এবং এই দলেক পুনরায় পূরণ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষাবলম্বী করে তোলেন।
1965 - সালে কাশ্মীর প্রশ্নে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার যুদ্ধ অমিমাংসিতভাবে শেষ হওয়ার পর, পাকিস্তানে যে তীব্র অর্থনৈতিক মন্দ শুরু হয়, সেই পটভূমিতে শেখ মুজিব তার বিখ্যাত ছ'দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা ছিল পাকিস্তানী রাষ্ট্রকাঠামোর অধীনে বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ দাবী।
1968- সামিরক বনাম বেসামরিক শাসেনর বিষয় ছিল দেশের আর একটি প্রধান রাজনৈতিক বিতর্ক। এই বিতর্কের সূত্র ধরে ১৯৬৮ সালের অক্টবরে পশ্চিম পাকিস্তানে আইয়ুেবর ১০ বছর স্থায়ী স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণ-আন্দোলনের শুরু হয়। তার কিছু পরে পূর্ব পাকিস্তানে যখন এই
আন্দোলনের ঢেউ এসে লাগে, তখন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও
আঞ্চলিক অর্থনৈতিক স্বাধিকারের দাবী সম্বলিত ছ’ দফা কর্মসূচির প্রবক্তা হিসাবে শেখ মুজিব বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
1970- আইয়ুেবর পতেনর পর সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা সংরক্ষণের জন্য সরাসরি দায়িত্বভার গ্রহণ করে, তবে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সচেষ্ট হয়। কেন্দ্রে একটি বেসামরিক কোয়ালিশন সরকার প্রতিবার উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীন সামরিক চক্র বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংগে নানা দ্বিপাক্ষিক গোপন সমঝোতা গড়ে তুলতে থাকে আর তার ভিত্তিতে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন দখল কের আওয়ামী লীগ। ৩১৩ আসন বিশিষ্ট পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এভোগ সরকার গঠনে ও শাসনতন্ত্র প্রণয়নের যোগ্যতা অর্জন করে।
পাকিস্তানের স্বৈরতান্ত্রিক রাজনৈতিক কাঠামোর দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল: ১/ পূর্ব বাংলার উপর পাঞ্জাবের তথা পশ্চিম পাকিস্তানের সার্বিক আধিপত্য এবং ২/ আর্থিক বরাদ্দ লাভের ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর নিরংকুশ অধিকার। ছ'দফায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আওয়মীলীদের নির্বাচনী বিজয়ে এই দুটি স্বার্থই সমূলে বিপন্ন হয়ে পড়ে।
নির্বাচনের ফলাফল থেকে একথা স্পষ্ঠ হয়ে উঠে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের গঠন ও ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারার প্রশ্নে দেশের দুই অংশের জনমত সম্পূর্ণ বিভক্ত ও পরস্পরবিরোধী। এই জনমতকে একত্রিত করবার ক্ষমতা কোনো রাজনৈতিক দলেরই নাই।
পাকিস্তানের এই রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলার জন্য ক্ষমতাসীনদের সামনে ছিল দুটো বিকল্প: ছ'দফা অনুসারে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, ২/ নির্বাচনের রায় অগ্রাহ্য করে সামরিক ক্ষমতা প্রয়গের মাধ্যমে পূর্ব বাংলায় ঔপনিবেশিক শাসন প্রবর্তন করা।
1971 - এই সালে কোন বিকল্প পন্থায় দেশ বিচ্ছিন্ন করবার ঝুঁকি থেকে পুরোপুরি মুক্ত ছিলোনা। তবে প্রথম পন্থায় রক্তপাত ও ক্ষয়ক্ষতির প্রত্যাশা তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও, উভয় অংশের পূরণ বিচ্ছেদ বিলম্বিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি।
এই হচ্ছে, ৭১ আগমনের আগে, একাত্তরে উদ্ভুদ্দ হবার কিছু চেইন রিয়েকশন ধরনের ঘটনা, যা একাত্তরকে ত্বরান্বিত করেছিল বলেই আমার ধারণা।
কারণ ১৯৭০ সালে, জবরদস্তি সামরিক শাসনের প্রতিষ্ঠা করতে না চেয়ে, উপরে উল্লেখিত প্রথম পন্থাটা অবলম্বন করতো, তাহলে ঠিক কবে যেয়ে পাকিস্তান বিচ্ছেদের আওয়াজ উঠতো, বা আদৌ উঠতো কি না, সেটা বলা মুশকিল।
All the contents are mine until mentioned otherwise.