আজ ক্যাম্পাসে লিখনের প্রথম দিন।মেডিকেল জীবনের প্রথম ক্লাশ হবে আজকে,লিখন কোন কিছু না ভেবে হাতে একটা ব্যাগ আর ফুল হাতা শার্ট পরে ক্যাম্পাসে চলে এসেছে,ক্লাশ শুরু হওয়ার কথা ৯.৩০ এ, লিখন জ্যামের কারনে ৯.৩৫ ক্যাম্পাসে পৌছায়।
ক্যাম্পাসে পৌছে লিখন সোজা চলে যায় ৩০১ নম্বর একাডেমিক রুমে যেখানে ক্লাশ হওয়ার কথা।
লিখন গিয়ে লক্ষ্য করলো এখনো স্যার ক্লাশে ঢুকেনি,লিখন হাফ ছেড়ে বাচলো,
প্রথম দিন ক্লাশের,সবাই একে অন্যের সাথে পরিচিত হচ্ছে,লিখন ক্লাশে প্রবেশ করে চুপচাপ বেন্জের এক কোনায় বসলো।
আমি সজিব! বেন্জের অন্য পাশ থেকে এই আওয়াজ লিখনের কানে আসলে।ঘুরে দেখলো তার মতো প্রথম ক্লাশ করতে আসা একজন তার সাথে পরিচয় হওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছে,লিখনও কোন কিছু না ভেবে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে ওঠে আমি লিখন ডিসি।
বেন্জের ওপর পাশে থাকা সজিব নামক ছেলেটা একটু চমকিয়ে উঠলো, কৌতুহল সুরে লিখনকে জিজ্ঞেসা করলে ডিসি মানে কি?
লিখন একটু দুষ্টি প্রকৃতির ছেলে,কলেজ জীবনে কখনো সে প্রথম বেন্জে বসেনি,স্যাররা জোর করে একটা পিরিয়ড প্রথম বেন্জে বসালেও ঠিকিই সে পরের ক্লাশে শেষ বেন্জে চলে যেতো, তার নাকি শেষ বেঞ্জে না বসলে ক্লাশ বুঝতে অনেক সমস্যা হয়,এমনিকে শেষ বেন্জে না বসলে নাকি কথায় জোড়ে শোনা যায় না।
-ডিসি মানে ঢাকা কলেজ লিখন সজীবকে বললো।
-সজীব এটা অনেক মজা পেলো,তাদের মধ্যে এই কয়েক মিনিটে একটা ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলো।
এর মাঝেই ক্লাশে স্যার চলে আসলো,প্রথম দিনের ক্লাশ তাই স্যার ক্লাশ ঢুকেই প্রথমে সবার কাছ থেকে পরিচয় নিচ্ছে। এরপর শুরু হয়ে গেলো পড়াশুনার ব্যাপার,রেগুলার ক্লাশ,সপ্তাহে পরীক্ষা,অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদি।
-স্যার আসতে পারি,
-ভিতরেই তো চলে এসেছো,আর আসার কি বাকি আছে,স্যার ধমকিয়ে শুভকে বললো।
প্রথমদিনেই ক্লাশে দেরি,আজকালকার ছেলেরা যে এতো ইনডিফারেন্স স্যার আবার বলল।
-শুভ লিখনের পিছনের সিটে বসলো।
-ক্লাশে এখন পযন্ত কি কি হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে শুভ লিখনের কাছে জানতে চাইলো।
-ক্লাশ চলছিলো,হঠাৎ লিখনের চোখে এক অদ্ভুত জিনিস ধরা পড়লো,সে লক্ষ্য করলো স্যারের প্যান্টের চেইনের কিছু অংশ খোলা,সে হাত নাড়িয়ে সজিবকে বললো স্যারকে দেখো।
-স্যারকে দেখার কি আছে, সজিব বলল।
-আরে না,স্যার যখন সামনে ঘুরবে তখন স্যারের প্যান্টের নিচে দেখবা,,
-সজিব স্যার সামনে ঘোরার সাথে প্যান্টের চেইন খোলা দেখে উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো,সজিবের হাসার শব্দে ক্লাশের সবারি মনোযোগের গতিপথ পরিবর্তন করে সজীবের তীকে আসল।
-স্যার রেগে সজীবকে জিজ্ঞেসা করলো ক্লাশে বেয়াকুপের মতো হাসার কারন কি,আমি কি এখানে সার্কাস খেলা দেখাচ্ছি,হাসার কারন কি?,তাড়াতাড়ি বলো স্যার বললো।
-স্যার আমি বলতে পারবো না,সজীব বললো।
-কি আজব,এরা কোথা থেকে মেডিকেলে চান্স পায়,
বলতে পারবা না তো লিখে দেখাও।স্যার সজীবকে বললো।
-সজীবকে খাতা নিয়ে লিখতে লাগলো।
-এদিকে ক্লাশে সবারি মাঝে সজীবের খাতার লেখা দেখার প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেলো।
-স্যার সজীবের খাতা কেড়ে নিয়ে লেখা দেখলো,সেখানে লেখা ছিলো,'স্যার আমি লিখতেও পারবো না।'
-এটা দেখার পর স্যারের রাগ যেনো দ্বিগুণ হয়ে গেলো,স্যার সজীবকে ক্লাশ থেকে বের করে দিলো।
-এদিকে এতক্ষন ধরে লিখন বসে শুধু ভাবছিলো,কি থেকে কি হলো।
-স্যার আবার ক্লাশ নেওয়া শুরু করলো
-এবার শুভ দাড়িয়ে বললো স্যার ভালো ছেলেটা ক্লাশ থেকে বের করে দিলেন?
-এই কথা শুনে স্যার তাকেও বের করে দিলো।
-এতক্ষন ধরে লিখন সব শুধু দেখছিলো, এবার সে দাড়িয়ে স্যারকে বললো,'স্যার ওদের হাসার যথেষ্ট কারন ছিলো,আসলে আপনার প্যান্টের চেইন খোলা,প্যান্টের চেইনটা লাগান।এই কথা বলে লিখন ক্লাস থেকে দৌড় দিয়ে পালিয়ে গেলো।
ক্লাশের বাইরে প্রথম দিনে ক্লাশ থেকে বহিস্কৃত তিন জনের দেখা, শুভ আর লিখন সজীবকে বললো তুমি খাতায় কি এমন লিখছিলা যে তোমাকে বের করে দিলো,
-সজীব তার খাতা বের করে শুভ আর লিখনকে দেখালো।
-এটা দেখে শুভ আর লিখন হাসতে হাসতে গড়গড়িয়ে পড়লো,তিনজনের মুখে অফুরন্ত হাসি,মনে হয় একজন আরেকজনের কতো পরিচিত।এভাবেই তিনজনের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা শুরু হলো।
এভাবেই কেটে গেলো ৩মাস,
এরপর তিনজনে হলে একেই রুমে সিট পেলো। সবকিছুই চললো আগের মতোই,একসাথে সিট পেয়ে তিনজনেই যে কি পরিমান খুশি হয়েছিলো সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
এদিকে সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলে আসলো,
সজীব ছিলো লিখন এবং শুভর থেকে তুলনামুলকভাবে ভালো ছাএ,বই পড়ার প্রতি তার প্রবল নেশা ছিলো,পরীক্ষার আগের দিন বই পড়তে পড়তে হঠাৎ শুভ বলে উঠলো,
-আর বই পড়তে ভালো লাগেনা,কেনো যে মেডিকেলে ভর্তি হইলাম,কোন আনন্দ নাই জীবনটায়।
-বন্ধু ঠিকিই বলেছিস,আচ্ছা দোস্ত এই যে আমরা এতো দিন ধরে ক্যাম্পাসে আছি কখনো কি মেয়েদের হোষ্টেল দেখছিস তুই?আমার না খুব ইচ্ছা মেয়েদের হোষ্টেলে একদিন যাবো,এরা কি কি করে দেখবো?
লিখনের এই রকম কথায় সজীব চমকিয়ে উঠলো,বললো দোস্ত চল আজকে যাই, রাতে দেখে আসি।
-শুভ বললো সিরিয়াসলি?
- লিখন বললো সিরিয়াসলি,চল।
-সজীব বললো রাতে তো গেট বন্ধ ঢুকবি কেমনে?
-গেট খোলা থাকলে কি তোরে ঢুকতে দিবে,? আমরা প্রাচীর টপকিয়ে যাবো।
-তিনজনে প্ল্যান করে প্রাচীর টপকিয়ে ঢুকে পড়লো হোষ্টেল এরিয়ায়,
-এদিকে তাদের ঢোকার শব্দে দোতালায় থাকা এক মেয়ে দেখে তাদের দেখে ফেললো,
-নাইড গার্ডের আলো জ্বলার আগেই লিখন,শুভ,সজীব আবার দেয়াল টপকিয়ে নিজ হোষ্টেল চলে আসলো।
-পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর মেয়েরা স্যারকে হোষ্টেলের গতরাতের নিরাপত্তা এবং বাইরের ছেলেদের মহিলা হোষ্টেল প্রবেশ এগুলোর অভিযোগ জানাচ্ছিল।
-নিলিমা লিখন,শুভ,সজীবের ক্লাশমেট। গতরাতে তারা হোষ্টেলে ঢোকার পর যে মেয়েটা তাদের দেখে ফেলে সে মেয়েটা হচ্ছে নিলিমা,এর আগে অনেকভাবে নিলিমাকে বোকা বানিয়েছিলো লিখনের,এমনকি নিলিমার ফোন থেকে স্যারের নাম্বার ভালোবাসার মেসেজেও লিখনেরা দিয়েছিলো মজাকরে।
-এদিকে স্যার নিলিমাকে ডেকে জিজ্ঞেসা করলো,কালকের ঘটনায় সে কাকে কাকে দেখেছে।
-পরীক্ষা শেষ করে পাশেই দাড়িয়ে ছিলো লিখনরা,একথা তারা শুনতে পেরে ধমকিয়ে যায়, ভাবে আজকে তাদের কপালে অনেক খারাপ কিছু আছে,
-স্যার অন্ধকারের জন্য কাউকে স্পষ্ট ভাবে দেখতে পারিনি,নিলিমা বললো।
-লিখন,সজীব,শুভ যেনো আকাশ থেকে পড়লো,যেই মেয়ের পিছনে তারা সারাদিন ফাজলামির জন্য আঠার মতো লেগে থাকে,যেই মেয়ে তাদের স্পষ্টভাবে কাল দেখেছে,সে কিনা বললো অন্ধকারে দেখতে পায়নি।
-নিলিমাকে লিখন বললো অনেক ধন্যবাদ,আমাদের বাচিয়ে দেওয়ার জন্য।
-সজীব বললো আচ্ছা তুমি চাইলেই তো আমাদের নাম বলে দিতে পারতে,কিন্তু করলে না কেনো?
-"বন্ধুত্ব" তোমরা আমার সাথে যাই করো তোমরা তো আমার বন্ধু,আমি চাইনা আমার জন্য আমার বন্ধুরা বিপদে পড়ুক,তারা হোষ্টেল যারা হোক।দিনশেষে তো আমরা ক্লাশমেট।
--লিখন,সজীব,শুভর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেলো,মাথা নিচু করে নিলিমার কথাগুলো শুনছিলো,আর ভাবছিলো এমন কাজ গুলো আগে ওর সাথে করা একবারেই ঠিক হয়নি।
-শুভ নিলিমাকে বলে উঠলো আর কখনো তোমার সাথে আমরা ফাজলামি করবো না,
-নিলিমা বলল,সেটা কিভাবে বিশ্বাস করবো?
-লিখন বললো,এটা তোমাকে বিশ্বাস করানোর জন্য যা করতে হবে তাই করতে আমরা রাজি।
-নিলিমা মৃদুস্বরে হেসে বললো কোন কিছু না,আমি একটু মার্কেটে যাবো,আমার জন্য একটা রিকশা ডেকে দিলেই হবে।
-লিখন,সজীব,শুভ হেসে উঠল তাদের সাথে নিলিমাও
-লিখনেরা হয়ে গেলো এখন চারজন।
বাকি লেখা থাকবে ২য় পর্বে।
২য় পর্বে চমক থাকবে।
Image source