কুম্ভিলতা

in BDCommunity3 years ago

Plagiarism তথা কুম্ভিলতা বিষয়ে আমাদের অনেকেরই কোন ধারনা নেই। যেমন নেই আমার। হাইভ ব্লগ চেইনের নিয়ম-কানুনে এ বিষয়ে খুব কঠোরভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। কুম্ভিলতা করা যাবে না। তাহলে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।
তাই আমার মতো নূতন ও অর্বাচীন লেখকেরা লেখার বিষয় ঠিক করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। কোন লেখা থেকে নাজানি কুম্ভিলতার দুর্গন্ধ বেরিয়ে আাসে? আমরা প্লেজারিজমে ভয় পাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্লেজারিজম কী তা বোধহয় আমরা অনেকেই জানিনা।
একটা স্বতঃসিদ্ধ উক্তি আছে,শত্রুকে জানা হলো যুদ্ধের অর্ধেক বিজয়।
তাই আমাদেরকে প্লেজারিজমে ভয় পাওয়ার আগে এটিকে জানতে হবে। বাংলা একাডেমি প্রণীত অভিধানে এটির সরল শাব্দিক অর্থে বলা হয়েছে, অন্যের ভাব, শব্দ ইত্যাদি গ্রহণ করে নিজের বলে ব্যবহার করা।
তাহলে কি কোন লেখকের লেখা আমাদের লেখায় রসদ জোগাতে পারবে না? বিষয়টি আদৌ এমন না। আপনি উপন্যাস না পড়লে উপন্যাস লেখতে পারবেন না। নাটক না পড়লে নাটকও লেখতে পারবেন না। আপনি একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ পড়লেন, তারপর এটিকে প্রধান উপজীব্য করে আপনি আরেকটি প্রবন্ধ লিখলেন। এখন কেউ আপনার লেখাটি থেকে প্লেজিয়ারিজমের কলঙ্ক রটানোর চেষ্টা করবে। এট কি ঠিক?
জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কবিতা 'বনলতা সেন' এডগার এলানের 'টু হেলেন' কবিতা অবলম্বনে রচিত।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের 'ভ্রান্তিবিলাস' শেক্সপিয়রের 'কমেডি অব এরার' গ্রন্থ অবলম্বনে রচিত। অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস 'গৃহদাহ' টমাস হার্ডির ''A pair of Blue Eyes'Eyes' অবলম্বনে রচিত। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চ্যাস্টারটনের গল্প শুনে রচনা করেন 'ভানুসিংহের পদাবলী'। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আরো একটি কবিতা 'হিন্দুমেলার উপহার' হেমচন্দ্রের 'ভারত সঙ্গীত' কাব্য অবলম্বনে রচিত। মধ্য যুগের বিখ্যাত কবি দৌলত কাজীর 'সতীময়না ও লৌর-চন্দ্রানী' গ্রন্থটি হিন্দু কাব্য 'মৈনাসত' অবলম্বনে রচিত। কবি আলাওলের বিখ্যাত 'পদ্মাবতী' গ্রন্থটি হিন্দি কবি মালিক মোহাম্মদ জায়সির 'পদুমাবৎ' গ্রন্থ অবলম্বনে রচিত।
বাংলা সাহিত্যের রোমান্টিক কাব্য, ইউসুফ-জুলেখা, লাইলী-মজনু, হপ্ত পয়কর, গুলে বকাওয়ালী ইত্যাদি বিখ্যাত গ্রন্থগুলো ফারসি ভাবধারা ও ভাষা থেকে রচিত। এরকম অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যায় যে, কোন লেখকের লেখা, কোন ব্যক্তির ভাবধারা, কোন প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস, গল্প অবলম্বন করেও লেখা যায়।

তাই কারো লেখার বিষয়-বস্তুর সাথে অন্য আরেকটি লেখার কিছু মেলবন্ধন পরিলক্ষিত হলে এ থেকে আমাদের প্লেজিয়ারিজমের ঘ্রাণ অনুভব করা ঠিক নহে।

"গাইতে গাইতে গাইন।" এটির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, লেখতে লেখতেই লেখক। অন্যকে অনুসরণ করে হলেও আমাদের লেখার অভ্যাস করা উচিত। এই যাঃ এতক্ষণ বোধ হয় আমি প্লেজারিজমের পক্ষেই কথা বললাম।

এবার মূল বিষয়টি বলি। প্লেজিয়ারিজম কি? অনেকক্ষণ ইন্টারনেট ব্রাউজ করে প্লেজিয়ারিজমের মূল পরিচয়টি খুঁজার চেষ্টা করেছি। নিজের মতো করে প্লেজিয়ারিজমের পরিচয় উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটা বিষয়। সবশেষে সচলায়তন.com এর একটি লেখা থেকে প্লেজিয়ারিজমের পরিচয় উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি।
১ কারো গবেষণা, লেখা বা কাজ নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া।
২ যোগ্য লোককে স্বকৃীতি না দিয়ে তার লেখা বা চিন্তা নিজের নামে চালিয়ে দেওয়া।
৩ লেখার প্রয়োজনীয় এবং উপযুক্ত জায়গায় কোটেশন চিহ্ন না দেওয়া।
৪ লেখার উৎস দেওয়ার সময় ভুল এবং অসম্পূর্ণ উৎস দেওয়া।
৫ উৎস না দিয়ে এবং কিছু শব্দ এদিক-সেদিক করে অথচ বাক্যের মূল গঠন পরিবর্তন করে না লেখা।
৬ লেখার বেশিরভাগ শব্দ অন্য জায়গা থেকে কপি করে লেখা, এক্ষেত্রে লেখার উৎস উল্লেখ করা হোক বা না হোক।
এতক্ষণ আমি যে বিষয়ে এখানে কিছু লিখলাম, তা লেখার বিন্দু মাত্র অধিকার ও যোগ্যতা কোনটিই আমার নেই। তাই সকলে বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
IMG_20220211_153724.jpg