যখন কিছু হারাবে তো হারাবেই, আর পাবেন তো পাবেনই।

in BDCommunity3 years ago (edited)

মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে যে পরিমান কালজয়ী লেখকের উদ্ভব ঘটেছিল তার সিকি পরিমাণও লেখক এই আধুনিক যুগ বাংলা সাহিত্যে সৃষ্টি করতে পারিনি। এর মূল কারণ আমাদের বই পড়ার ব্যাপক অনীহা। আমরা এখন কাগজের বই পড়ি না। যা কিছু অল্প পরিসরে পড়ি তা হলো সফট কপি।যা একজন লেখকের প্রধান সমস্যা। কাগজে বই যে একেবারে পড়া-ই হয় না, তা বলা ভুল হবে। বাণিজ্যিক আকারের কিছু কাগজে বই এদেশে এখনও পড়া হয়।এ পাঠকের সিংহভাগ হলো চাকুরী প্রত্যাশী বেকার ছাত্র-ছাত্রী।সদ্য ইন্জিনিয়ারিং শেষ করা ছাত্রের টেবিলে শোভা পায় সাধারণ জ্ঞান, বাংলা ব্যাকরণ ইত্যাদি প্রকারের বই। জ্ঞানপীপাসার তাগিদে এগুলো তারা পড়ে না।এর কারণ নেহাতই বিসিএস। এধরনের পড়াকে আমি মোটেই সাধুবাদ জানাতে পারছি না।
যে কথায় ছিলাম তা হলো আজকে বাংলা সাহিত্য কেন আঠারো শতকের মতো লেখক তৈরি করতে পারছে না। লেখালেখির কাজটা এখন মোটেই লাভজনক নয়।আমাদের বই কেনার অনীহা-ই আধুনিক যুগের বাংলা সাহিত্যের লেখকের আকালের মূল কারণ।অথচ একটা দেশের পরিচিতর, সমৃদ্ধির মৌলিক কাজটা কিন্তু সাহিত্যিকদের দ্বারাই সৃষ্টি হয়।
এই পৃথিবীর সবাই কিন্তু রাশিয়া দেশের শক্তি, সমৃদ্ধির কথা জানে। আমি আপনাদেরকে একটা প্রশ্ন করি, আচ্ছা বলুন তো রাশিয়ার এই শক্তি সমৃদ্ধির মূল কারণটা কি? বেশির ভাগই আনারা উত্তর দিবেন, রাশিয়া দেশের এই খ্যাতির মূল কারণ হলো; এটির বিশাল আয়তন, পরমাণু অস্ত্র এবং আধুনিক অর্থনীতি। কিন্তু আপনি কি জানেন, রাশিয়ার মানুষ এগুলো মোটেই বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে রাশিয়ার খ্যাতি, সমৃদ্ধি এসেছে রাশিয়ার সব কালজয়ী লেখকের উপর ভর করে। তাদের বিশ্বাস বিশাল সংখ্যক পরমাণু অস্ত্র তাদের পরিচিত এনে দেয়নি।তাই আজও রাশিয়ার মানুষ লেখকদের সম্মান করে। পৃথিবীর সবচেয়ে পড়ুয়া জাতি আজ রুশ।তারা বই কেনা ও পড়ার মাধ্যমে লেখক তৈরির এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে।

আমার মনে হয় বাংলা সাহিত্যের এই ক্রান্তিলগ্নে hive ব্লক চেইনের BDCommunity কিছুটা হলেও উপশম হিসেবে কাজ করছে।লেখার আগ্রহ এখানে জিইয়ে থাকে।ছোট-বড়, ভাল-মন্দ যে ধরনেরই লেখা হোক তার থেকে একটা উপহার প্রাপ্তির আশা থাকে। যা ধারাবাহিক ভাবে লেখার ইন্দন জোগায়। BDCommunity তে যখন আমি ব্রাউজিং করি তখন আমার সামনে নূতন নূতন লেখার এক জগত চলে আসে। যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
আমি মোটেই ভাল লেখকও না আবার ভাল পাঠকও না।এখানে এসে এলোমেলো ভাবে হলেও দু-চার লাইন লিখতে শিখছি।
আমরা জীবনে অনেক সময় কিছু না পাওয়ার বেদনাতে ব্যথায় মুচড়ে যাই। যখন আমরা ব্যর্থ হতে থাকি তখন ধারাবাহিক ভাবে এটি আমাদেরকে আঘাত করে।আবার সফলতাও এমন যখন এটি আসবে তখন আসবেই। এরকম একটি বিষয় নিয়ে লোক সাহিত্য থেকে শ্রবণ করা একটি গল্প বলি-
এক গ্রামে হোসেন আলী নামে এক গরীব লোকের বাস ছিল। কুড়ানো পাট দিয়ে দড়ি পাকিয়ে সেগুলো বাজারের এক ধারে বসে তিনি বিক্রি করতেন। একদিন এক ধনী ব্যক্তি তার কাছে এসে একটি স্বর্ণের চেইন দিয়ে বলেন,"এটি বিক্রি করে অন্য কোন ব্যবসা করো।" তারপর হোসেন আলী বাড়ি যেতে যেতে ভাবলেন আগে নদীতে স্নান করি তারপর বাড়ি যাওয়া যাবে। তাই তিনি স্বর্ণের চেইনটা নদীর ধারে রেখে স্নান করতে নামলেন।কিন্তু দুঃখের বিষয় একটি কাক এসে চেইনটি ছো মেরে নিয়ে যায়। হোসেন আলীর দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না।
তাই হোসন আলী আগের মতো আবারও দড়ি পাকিয়ে বিক্রি করতে লাগলেন।কিছুদিন পর ঐ ধনী ব্যক্তিটি হোসেন আলীকে আবারো দড়ি বিক্রি করতে দেখে, তাকে কারণ জিজ্ঞেস করলে কাকের ঘটনাটি জানতে পারে। তো ঐ ব্যক্তিটি হোসেন আলীকে এবার কিছু নগদ টাকা দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করতে বলেন। গরীব হোসেন আলী এবার মহা খুশি। পূর্বের মতো যেন তা হারিয়ে না যায়, তাই হোসেন আলী তার স্ত্রীকেও না জানিয়ে টাকার থলেটি ধানের ছোবলা ভর্তি এক পুরনো পাত্রে লুকিয়ে রেখে দেয়। তারপর হোসেন আলী বাড়ির বাইরে গেলে তার স্ত্রী ভাবে ঘরে তো খাওয়ার জন্য কিছু নেই, তাই সে ধানের ছোবলা ভর্তি পাত্রটি তাদের ধনী এক প্রতিবেশীর কাছে বিক্রি করে দেয়। তো হোসেন আলীর অর্থ এভাবে এবারও হারিয়ে যায়। তারপর আরো কিছুদিন পরে ঐ ধনী ব্যক্তিটি হোসেন আলীকে পূর্বের মতোই দেখতে পায়। ঐ ধনী ব্যক্তিটি সব কথা শুনে বলে, তোমার ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। আর যদি হয় তাহলে তোমার পাকানো দড়ি দিয়েই হবে। এই বলে তিনি চলে যায়।
সপ্তাহ দুয়েক পর এক রাত্রে হোসেন আলীর বাড়ির পাশের নদী তীরে জেলেরা ভাসা জাল দিয়ে মাছ ধরার জন্য তা নদীতে ফেলে। কিন্তু অতিরিক্ত মাছের ওজনে ভাসান জালটির এক প্রান্তের রশি চিরে যায়। তাই অতিরিক্ত দড়ির জন্য জেলেদের একজন হোসেন আলীর বাড়ি চলে যায়।হোসেন আলী জেলেকে দড়ি দিয়ে দেয়। তারপর মাছ ধরা শেষে জেলেরা খুশি হয়ে হোসেন আলীকে একটা মাছ দিয়ে যায়।
হোসেন আলীর স্ত্রী যখন মাছটি কাটে তখন মাছের পেটের ভিতর থেকে একটি মূল্যবান পাথর বেরিয়ে আসে।যা বিক্রি করে গরীব হোসে আলী ধনী বনে চলে যায়।
হোসেন আলী ভাবে এবার একটা নতুন ঘর দেওয়া যাক। তাই তিনি ঘর দেওয়ার জন্য একটা গাছ ক্রয় করে। যে গাছটি হোসেন আলী কিনেছেন সেই গাছটিতে ছিল একটা কাকের বাসা। আর ঐ কাকের বাসাটিতেই হোসেন আলী তার হারানো স্বর্ণের চেইনটা খুঁজে পান।
তার কিছুদিন পরে তাদের ঐ ধনী প্রতিবেশীটি তাদের কাছ থেকে কেনা চাউলের ছোবরা ভর্তি পাত্রটি বেঁচে দেয়। এর মাধ্যমে তারা হারানো পূর্বের টাকার থলেটিও ফিরে পায়।
আশা করি গল্পটি থেকে ব্যর্থ জীবনের মাঝেও সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়া যাবে।
16429268734926438784286632400800.jpg

Sort:  

Nice story. And yes bd community has made it easy for us.