ঘি এর কেমিস্ট্রি এনালাইসিস এবং বাংলাদেশ

in BDCommunity4 years ago
ভাবছিলাম ঘি নিয়ে লিখাটা ইংরেজীতেই লিখি, কিন্ত যেহেতু আমাদের দেশে মানুষকে বেশি সচেতন করা প্রয়োজন তাই সর্বস্তরের মানুষ যেন পড়ে বুঝতে পারে তাই বাংলায় লিখতে বেশী অনুপ্রাণিত হলাম। তাছাড়া অন্য ভাষাভাষীর মানুষদের মাঝে যেন আমাদের দেশ সম্পর্কে নেগেটিভ ইম্প্রেশন না তৈরি সেটাও বাংলায় লিখার একটা কারণ।

আমি পেশাগত দিক থেকে একজন কেমিস্ট। কেমিস্ট হিসেবে অভিজ্ঞতা অনেক এবং সরাসরি খাবার টেস্টের সাথে যুক্ত আছি ৫ বছর। এই পাঁচ বছরে অনেক খাবারের আইটেমের সাথে ঘি ও টেস্ট করেছি অনেক। সরকারের একটা গুরুত্বপূর্ণ ল্যাবে কাজ করছি বিধায় আমার পরিচয় দিচ্ছিনা।

IMG_0355.jpgআমি ও আমার ল্যাবঃ

আপনারা নিশ্চয় জানেন যে চর্বি ও তৈল জাতীয় খাবার যেমন, সয়াবিন, সরিষা, পাম, তিলের তৈল, ঘি, বাটার এইসব জিনিসের নিজস্ব কোন স্বাদ নাই। তারপরও আমরা কেন খাই ? কারণ এইসব থেকে আমরা ভিটামিন ও প্রচুর শক্তি পেয়ে থাকি। আমাদের দেশে রান্নায় ঘিয়ের প্রচলন অনেক বেশী। এর ঘ্রাণ অনেক লোভনীয় বিধায় এর চাহিদা আকাশচুম্বী। আমাদের দেশীয় বাজারে যেসব ঘি পাওয়া যায় তার কিছু আছে পাশ করে (Bangladesh Standard, BDS-908-2012 অনুসারে ) আবার কিছু আছে পাশ করে না। যদি পাশ করে তাহলে কি আমরা তাকে খাঁটি ঘি বলতে পারি ? কোন পরীক্ষায় ৩৩ পেয়ে পাশ আর ৯৫ পেয়ে পাশ কি এক হল ? সাধারণত ঢাকার শহরের সুপারসপ সহ অন্যান্য বড় সপগুলির ঘি আমাদের টেস্ট করা হয় যেগুলির দাম সব কাছাকাছি। সেগুলি কিছু ৩৩ (কথার কথা) আর কিছু ৯৫ পেয়ে পাশ করলে বাকি গুলির কি অবস্থা (যেগুলি গ্রামে বিক্রি হয়) তা সহজে অনুমান করা যায়।

ঘি আর পাম ওয়েল এর Iodine Value, Saponification Value ও Reflective Index থেকে দেখা যায় একে অপরের সাথে মিশ্রিত হওয়ার ক্ষেত্রে এক নিবির সম্পর্ক রয়েছে। পাম ওয়েল কে ঘিয়ের মধ্যে একটা অনুপাতে মিশ্রিত করলে ফ্যাট প্রোফাইল টেস্ট ছাড়া আইডেন্টিফাই করা কষ্টকর। তাই উল্লেখিত টেস্টের ভিত্তিতে কোন ঘি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও সেটা যে খাঁটি ঘি তা বলা মুশকিল। যদি কোন চর্বি বা তৈলের Iodine Value বেশী হয় তাহলে বুঝতে হবে সেটার unsaturation বেশী অর্থাৎ উহার কার্বন শিকলে পাই বন্ড আছে যা তুলনামূলক অনেক সক্রিয় বিধায় শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

01.jpgআমি ও আমার ল্যাবঃ

Bangladesh Standard, BDS-908-2012 অনুসারে ঘিয়ের Reflective Index এর মান হল ১.৪৫২৪ থেকে ১.৪৫৬৬। সাধারণত যে সকল ঘিয়ের Reflective Index এর মান ১.৪৫৪০ থেকে ১.৪৫৪৩ হয় সেই ঘি কে আমরা খাঁটি বলতে পারি। আমাদের দেশে ঘিয়ের ফ্লেবার কিনতে পাওয়া যায়। তাই জিহ্বায় ঘিয়ের আইডেন্টিকেল কোন স্বাদ না থাকায় অধিক মুনাফা লাভের আশায় ফ্লেভার মিশিয়ে ভেজাল ঘি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফেইসবুকের অনলাইন বাজারের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, প্রতিকেজি ঘি ৮০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা মুল্য চাইছে অথচ সবাই বলছে খাঁটি।

যতদিন আমাদের ভেতরে মানবিক মূল্যবোধ কাজ না করবে ততদিন আমাদের কোননা কোন ভাবে ঠকে অথবা ঠকিয়ে যেতে হবে। তাই আসুন আমরা টাকার পিছনে না ছুটে মানবিকতার পিছে ছুটি।