বিশ্বাস!

in BDCommunity4 years ago

হাসেম বিশ্বাস, তার আগে আরেকটা টাইটেল আছে মাওলানা, পুরা নাম মাওলানা হাসেম বিশ্বাস এর পর আছে এলাকার বিশেষন। বিরাহিমপুরী। বাহ কী ভয়ংকর সুন্দর নাম! হাসেম সাহেব বিরাহিমপুর গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক ঐতিহ্য তেমন ছিলোনা বললেই চলে। বাপ ছিলো মসজিদের মোয়াজ্জেম। কৃষি কাজই প্রধান পেশা। উত্তাধিকার সূত্রে বাপদাদার সম্পত্তি কিছু পেয়েছে আর কিছু বর্গা চাষ করতো।

হাসেম সাহেব মাদ্রাসা থেকে কোন মতে দাখিল পাচ দিয়ে সরকারি স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে জয়েন করে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এসএসসি পাশ দিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে জয়েন করা যেতো। মহিলাদের জন্য অবশ্য দুই তিন বছর আগেও এমন সুবিধা ছিলো। বর্তমানে অবশ্যই এই ধরনের সুবিধা রেহাত করা হয়।

আমরা এবার হাসেম সাহেবে ফিরে আসি, অবশ্য সুবিধা যেখানে হাসেব সাহেব সেখানে! স্বাধীনতা উত্তর গ্রামে শিক্ষিত লোক বলতে ছিলোনা তারউপর কেউ যদি দাখিল পাস দে তাহলেতো কথায় নেই। গ্রামের মানুষ শান্তি প্রিয়, ধর্মভিরু, আর ধর্মভিরুতার সুযোগ নিতো কতিপয় আলেম সমাজ।

হাসেম সাহেব প্রাইমারি স্কুলে মাষ্টারির পাশাপাশি শুরু করে এলাকার মসজিদে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব। যদিও যহুর, আছর নামাজ স্কুলে থাকার ধরুন মোয়াজ্জেম দিয়ে চালিয়ে দিতেন। যদিও মোয়াজ্জেমকে আলাদা কোন বাড়তি টাকা দিতেন না হাসেম সাহেব। এই নিয়ে মাঝেমধ্যে মোয়াজ্জেম কানাঘুষা করলে তাকে ভয় দেখানো হতো চাকরির ভয়।

"যা তোকে দোয়া করে দিবো" এই ডায়ালগ ছিলো হাসেম সাহেবের প্রধান অস্ত্র। রিকশা করে বাজারে যাওয়া আসা করতেন, রিকশা থেকে নেমেই বলতো যা তোকে দোয়া করে দিবো, এই কথা বলে সোজা হাঁটা শুরু করে দিতেন।

পানি পোড়া, ওয়াজ মাহফিল ছিলো তার রমরমা ব্যবসায়। তিনি ওয়াজে যেতেন কন্ট্রাক করে, মাহফিলে যে টাকা উঠবে তার অর্ধেক ওনার। মানুষ ও বিশ্বাস করে টাকা দিয়ে যেতো। আর হাসেম সাহেব ও নামের বিশ্বাস রাখতেন।

দুই হাজার সালের আগে প্রাইমারি স্কুলে এতো কড়াকড়ি ছিলোনা, এই সুযোগ পুরোপুরি ব্যবহার করে ওনি জেলায় জেলায় গিয়ে ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলে হাজিরা দিয়ে দো-জাহানের অশেষ নেকি হাসিল করতেন৷ যদিও মাস শেষে সরকারের তহবিলের বেতনটা ঠিকই নিতেন। আহা হেদায়েত! আহা বাতির নিচেই অন্ধকার! যে অন্ধকার অজ্ঞতার, কুসংস্কারের।

"তোকে দোয়া করে দিবো" এলাকায় বেশ প্রচার পায় রিকশা ওয়ালারা নিতে চাইতোনা, কিন্তু আল্লাহর ভয়, হুজুরের ভয়ে কেউ কিছু বলতোনা।

Source Pixabay
img_0.26063105730169117.jpg