আব্বা একটা বল কিনে দাওনা? ছেলের আবদারের কথা শুনে মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যায় আনোয়ার সাহেবের। সারদিন অফিস করে, আবার ফেরার সময় বাজার করতে হয়েছে। জিনিসপত্রের যা দাম এমনিই মেজাজা গরম হওয়ার জোগাড় তারপর বাসায় এসে দেখে যদি আদরের ছেলেটা বলের জন্য বায়না ধরে!
সারাদিন শুধু খেলা আর খেলা, এতো খেলাধূলা করে কী হবে, তুই কী সাকিব আল হাসান হবি নাকি, মাশরাফি হবি, শুন আমরা হইছি ছা-পোষা মানুষ আমাদের পড়ালেখা করে কোনরকমে একটা চাকরি জুড়াইতে পারলেই হলো, আর সরকারি চাকরি হলে তো কোন কথাই হবেনা। বিসিএস ক্যাড়ার হলে তো একদম সোনায় সোহাগা।
শুন রাতুল তুই এবার এইটে উঠছিস, ভালো করে পড়, ভালো রেজাল্ট না করতে পারলে তো তোকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে দিবেনা। আর বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে না পারলে জীবনে কিছুই করতে পারবিনা। ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার না হতে পারলে সমাজে মুখ দেখানো যায়? বাবা, একটা বল চাইছি কয়টাকা বা হবে? এই ধরো চল্লিশ -পঞ্চাশ টাকা হবে, চল্লিশ পঞ্চাশ টাকা দিয়ে একটা বল কিনে দিতেই তোমার কতো কথা শুনতে হলো, বলো বাবা?
খুব বড়ো হয়ে গেছিস না! আনোয়ার সাহেব তার চোদ্দ বছরের ছেলেকে শাসায়। বাবা, আমিতো পড়ালেখা মনোযোগ দিয়ে করছি, আমার রেজাল্ট ও ভালো। মুখেমুখে কখা বলা শিখেমগেছত, এই বয়সেই বাপকে জ্ঞান দেতেছিস বড়ো হলে কী করবি? এখনোও বাপের কামায় খাচ্ছিস, তাতেই এই অবস্থা? যোগ করে আনোয়ার সাহেব।
বাপের মুখে এই ধরনের কথা শুনে একটু আপসেট হয়ে যায় রাতুল। একে-তো বল পাওয়া হলোনা তারউপর বাপের বকাঝকা ভালো লাগেনি রাতুলের। রাতুল মন খারাপ করে রাতে ভাত না খেয়ে ঘুমিয়ে যায়, আনোয়ার সাহেব চিন্তা করছে সকালে সব ঠিক হয়ে যাবে, চেঙরা বয়স, এই বয়সে এইরকম মন খারাপ হয়ে থাকে। সকালে আনোয়ার সাহেব অফিসে চলে যায়, রাতুল ঘুম থেকে উঠার আগেই , তার ফলে রাতুলের কোন খোঁজ খবর নিতে পারেনি।
সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পর দেখে রাতুল আগের মতো আচরণ করছেনা, পড়ালেখা করতে বসছেনা। আনোয়ার সাহেব অফিস থেকে আসার সময় দুটো বল নিয়ে আসে, কালকের ঘটনার পর সেও মনে মনে কষ্ট পেয়েছে। তারউপর সে স্কুলেও খবর নিয়ে জানতে পারে তার ছেলে পড়ালেখায় ভালো তখন তারমনে অপরাধ বোধ কাজ করে।
আনোয়ার সাহেব হাতমুখ ধুয়ে রাতুল কে ডাকে, রাতুল দেখ তোর জন্য কী আনছি? বল পাওয়ার আনন্দে রাতুল তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। বাবা, সবসময় তোমরা ছেলেমেয়েদেরকে বলো এটা হতে, ওটা হতে কিন্তু কোনদিন কী জিজ্ঞেস করছো আমরা বড়ো হয়ে কী হতে চাই? ছেলের এইরূপ প্রশ্নে আনোয়ার সাহেব ও কেঁদে ফেলে।
Source
Pixabay
আনোয়ার সাহেবের কাজটা ঠিক হয়নি। আজ যদি তাকে সময় মতো বল, খেলার জিনিস কিনে দিতো। হয়তো সে সেদিকেই বড়কিছু হতে পারতো।। রাতুলও নিজের ভারসাম্য হারাতো না। যাই হোক, গল্পটা ভালো ছিলো ব্রাদার।
বড়ো কিছু হওয়ার সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি, আমাদের সবাইকে একটু সচেতন হলে সবই সম্ভব, ধন্যবাদ ভাই।