মনের যত্ন নিয়ো

in BDCommunity4 years ago

টপ! টপ!! টপ!!! শব্দে ঘুম ভেঙে যায় রমিজের, চোখ জোড়া ডলতে ডলতে শব্দের উৎস খুঁজতে শুরু করে দিলো। তিন রুমের বাসায় রমিজ একাই থাকতো, গত মাস থেকে একরুম সাব-লেট হিসেবে ভাড়া দিয়েছে, তারই পরিচিত এক ছোট ভাইয়ের কাছে। রমিজ একটা বিদেশি কোম্পানির প্রজেক্টে, প্রজেক্ট সুপারভাইজার হিসেবে আছে। তিন রুমের বাসাটাও কোম্পানির দেয়া। তিন রুম তার লাগেনা তাই সে এক রুম ভাড়া দিয়েছে, একটু বাড়তি ইনকামের জন্য। কোম্পানির লোকজন জানলে সমস্যা তাই সে তার এলাকার পরিচিত একজনকে ভাড়া দিয়েছে। এতোদিন ভাড়া না দিয়ে ছিলো, এখন আর পারছেনা। বাড়িতে তার বৃদ্ধ মা-বাবা, বউ ছেলে-মেয়ে, আর ছোট ভাই আছে। ছোট ভাই ডিগ্রিতে এ্যাডমিশন নিছে। আর তার ছেলে স্কুলে ভর্তি হলো, সবকিছু মিলিয়ে তার এখন ত্রাহি মধুসূদন।

এতো বড় বাসা পেয়েও নিজের বউ, ছেলে-মেয়েদের সে গ্রাম থেকে নিয়ে আসতে পারেনি, কারণ তার বাবা-মা বাপদাদার বিটে বাড়ি ছেড়ে আসতে পারবেনা। বৃদ্ধ বাবা-মার সেবা হলো সবার আগে।

চারদিকে খুঁজাখুঁজির পরও শব্দের উৎস খুঁজে পায়না রমিজ। একটু ভয় ও লাগতেছে রমিজের তারউপর আজ সে পুরো বাসায় একা। তার পরিচিত ছোট ভাই গেছে গ্রামের বাড়ি। মোবাইলের স্ক্রিনে সময় দেখে একটু স্বস্তি পেলো রমিজ মাত্র এগারোটা বাজে! গাজীপুরের দিকে রাত এগারোটা মানে অনেক রাত, তারউপর হলো মাঘমাস। শীতের সময় রাতটা একটু বড়ো হয়। আর গ্রামের রাত আরো একটু ঘন হয়।

বাথরুমের দিকে সাহস করে গিয়ে দেখে টেপ থেকে পানি পড়ছে, টেপটা কয়েকদিন যাবত ঠিক করবে করবে বলেও ঠিক করা হয়না। অফিস থেকে ফেরার সময় মনে থাকেন কল নিয়ে আসার জন্য।

মনে থাকবে কী করে? অফিস চলাকালীন তার বউ ফোন করে জানালো, তার মায়ের শরীর গারাম, ডাক্তার দেখানো লাগবে। মাসের শেষ দিকে এসে তো পকেট ঘড়ের মাঠ হয়ে আছে। যে কয়টাকা আছে তাতে তো ডাক্তারের ফি কোন মতে হবে। কিন্তু টেস্ট করার টাকা, ঔষধের টাকা, কিছু ফলমূল! এইসব তো আর হবেনা। স্বান্তনা হিসেবে আছে অফিসের কিছু টাকা।

অফিসের টাকায় কোনদিন রমিজ হাত দেনা, এর আগেও সে বিপদে পড়ছে কিন্তু অফিসের টাকায় সে হাত দেনা। মনে মনে চিন্তা করে তার ভাড়াটিয়া ছোট ভাইকে বলবে ভাড়াটা এ্যাডবান্স দিতে। এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে মাঝরাত হয়ে যায় সে টের পায়না। একে তো শীতের রাত তারপর মাঝরাত, রমিজ এখন গভীর ঘুমে থাকার কথা অথচ সে সংসারের পাটিগণিত নিয়ে ব্যস্ত!

সকালে অফিসে গিয়ে রমিজ তার বসের কাছে সবকিছু খুলে বলে বস তাকে অনেক বিশ্বাস করে, পছন্দ করে। বস তাকে কিছু টাকা দিয়ে বললো, রমিজ আমি বুঝি তোমার অবস্থা, যাও টাকাটা বিকাশ করে দাও। শুনো তোমার জন্য সুখবর আছে, হেড অফিসে তোমার বিষয় আলাপ করছি, আগামীমাস থেকে তোমার বেতন একহাজার বাড়িয়ে দিবো।

খুশিতে রমিজের চোখে জল আসে, নিজের প্রতি অভিমান হয়। সংসারের দায়িত্ব আরো ভালো করে পালন করার পন করে। কিন্তু তার নিজের শরীরও তো ভালো নয়, শরীর যতোটা খারাপ মনের অবস্থা তারচেয়ে ও খারাপ। কিন্তু কেউ বলেনা মনের যত্ন নিয়ো, নিজের খেয়াল রেখো!

Source Pixabay
img_0.6347122629351878.jpg

Sort:  

Hi @ihfaisal, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @linco!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

JOIN US ON