: মামা, যাবেন?
: কোথায় যাবেন?
: এই যে রেজিস্টার ভবন।
: হ্যা। যাবো। উঠেন।
: ভাড়া কত?
: দশ টাকা মামা।
: ঠিকাছে, চলেন।
আজিমের আজ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিন। সে আগেও দুবার এসেছে, একবার পরীক্ষার দিন আরেকবার ভর্তির দিন। কিন্তু সে সময় শুধু পরীক্ষার হল এবং প্রশাসনিক ভবনে গিয়েছিলো। তাইতো রিক্সাওলা মামা কে রিজিস্টার ভবন বলে চিনাতে পেরেছে। তার এলাকার বড় ভাই পড়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তির দিন উনিই সাহায্য করেছেলিনে। তিনি বলেছিলেন এই ভবন কে রিজিস্টার ভবন বলে ডাকা হয়।
কাল থেকে আজিমের ক্লাশ শুরু। তার এলাকার ভাই বলেছিল যে ক্লাশ শুরুর আগের দিন ই চলে আসতে। সেদিন সন্ধ্যায় সকল ছাত্র-ছাত্রীদের বরাদ্দকৃত হলের তালিকা প্রকাশ করা হয়। ভাই বলেছে হলে সিট সংকট। প্রথম বর্ষ গনরুমে থাকা লাগবে।তাই আগে না আসলে ভালো জায়গা দখল হয়ে যাবে। তবে ক্যাম্পাসের আশেপাশে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা যায় কিন্তু আজিমের পরিবারের সেই সামর্থ নেই। এস.এস.সি পাশ করে আজিম ঢাকায় এসে মামার বাসা থেকে এইচ.এস.সি পাশ করেছে। ছাত্র হিসেবে আজিম মেধাবী ই বলা যায়। উভয় পরীক্ষাতে সে জিপিএ ৫ পেয়ে উর্ত্তীণ হয়েছিলো। আর প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছে। আজিম তাই চলে এসেছে হলে উঠবে বলে।
: মামা।নামেন, চলে আসছি।
আজিম এতোক্ষণ ক্যাম্পাসের পরিবেশ দেখছিলো। রিক্সাওলা মামার কথায় তার বোধ ফিরে আসে। সে ভাড়া মিটিয়ে ভবনের ভিতরে প্রবেশ করে। সে দেখতে পায় তার মতো আরো অনেক ছাত্র-ছাত্রী ভীড় করে তালিকা দেখছে। সে ও ভীড়ে যোগ দেয়। অবশেষে খুজে পায় তার নাম। সে বশিরুদ্দিন হলে সিট বরাদ্দ পেয়েছে। সে ভীড় থেকে বেড়িয়ে এসে তার এলাকার বড় ভাই কে ফোন দেয়। কিন্তু কল রিসিভ হয় না। আজিম আরেক বার চেষ্টা করতে যাবে এমন সময় একজন ছেলে তাকে পেছন থেকে বলে-
: কোন হলে সিট পরছে তোমার।
: বশিরুদ্দিন হলে।
: আরে আমার ও তো এই হলেই পরেছে। কি নাম
তোমার?
: আজিম। তোমার নাম?
: জহির। কোন সাবজেক্টে চান্স পেয়েছো?
: বাংলা তে। তুমি?
: আমি পাবলিক এড এ চান্স পেয়েছি। চলো, হলে যাবা না?
: হল চিনো তুমি?
: হ্যা। আমি ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে ঘুরে গিয়েছিলাম।
: ঠিকাছে, চলো।
তারা দুজন কথা বলতে বলতে হলের দিকে হাটতে থাকে। হলের সামনে এসে একজন গার্ডকে দেখতে পায়। জহির তাকে প্রশ্ন করে-
: ভাই। আমরা প্রথমবর্ষের ছাত্র। কোন দিকে যাবো?
: আপনাদের এলোটমেন্ট কি এই হলে?
: জী।
: এই যে ওই রুমটাতে যান।
জহির আর আজিম রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। তারাই প্রথম তাই দুইজন মিলে পছন্দ মতো কোনায় এক জায়গা বেছে নেয়। তারপর সময় যতো গড়াতে থাকে তাদের মতো আরো অনেকেই আসে। রাতের মধ্যে পুরো রুম শব্দে গম গম করতে থাকে। এর মধ্যেই অনেক রাতে বেশ কয়েকজন প্রবেশ করে তাদের রুমে। তারা পরিচয় দেয় তারা আজিমদের সিনিয়র। তারা বিভিন্ন নিয়ম কানুন শিখিয়ে যায়। আর বলে যায় তারা প্রায়ই আসবে এবং তাদের থাকতে কোনো সমস্যা হলে যেনো বড় ভাইদেরকে জানায়।
এভাবেই চলতে থাকে দিন। সকালে ক্লাশ করতে যেয়ে দুপুরে ফিরে আসা। তারপর বিকালে বাইরে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া। রাতে হলে ফিরে খাবার খেয়ে রুমে বসে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেয়া। আর রাতের বেলা বড় ভাইদের আগমন তো অবধারিত।
আজিম আগে থেকেই সংস্কৃতিমনা ছিলো। ক্যাম্পাসে এসে সে তার পছন্দ অনুযায়ী একটা সাংস্কৃতিক দলে যোগ দেয়। দিনে ক্লাস শেষে সাংস্কৃতিক চর্চা আর রাতে আড্ডাবাজি। বড় ভাইদের আগমন এর মধ্যেই সহ্যের মধ্যে চলে এসেছে। হটাৎ একদিন আজিমের সুখের দিনে ছন্দপতন ঘটে।
এখন আর বড় ভাইরা রুমে আসে না। তারা সবাইকে গেস্টরুমে নিয়ে যান। এর মধ্যে আজিম জেনে গেছে যারা আসেন সবাই রাজনৈতিক কর্মী। তাই সংস্কৃতিমনা আজিম তাদের এড়িয়েই চলে। এমন একদিন রাতে বড় ভাইরা জরুরি তলব করলো সবাইকে। সবাই সঠিক সময়ে উপস্থিত। বড় ভাইরা প্রবেশ করলো। পুরো রুম চুপচাপ। একজন ভাই নিজে থেকেই বললো আমরা রুম বরাদ্দ দিবো কিছুদনের মধ্যেই। তবে প্রথমে দ্বিতীয় তলায় তাদের পাশে রুম দেয়া হবে। আজিমরা ততদিনে জেনেগেছে দ্বিতীয় তলায় রাজনীতি করা লোকজন থাকে। ভাইরা জানালো তারা কয়েকজন কে নির্বাচন করেছে এবং নাম ঘোষণা করলেন। আজিম অবাক হয়ে নিজের নাম তার মধ্যে শুনতে পায়। কিন্ত আজিমের রাজনীতি করার কোনো ইচ্ছা নেই। সে ভাবনায় পরে কি করবে। তবে মজার বিষয় তার সাথে জহির এর নাম ও আছে। জহির ও চায় না রাজনীতি করতে। ভাইরা বের হয়ে গেলে তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলে ঠিক করে একজন ভাইয়ের সাথে দেখা করে সব খুলে বলবে। তারা সেই ভাইয়ের সাথে দেখা করে সব খুলে বলে। ভাই তাদের বুজানোর চেষ্টা করে কিন্তু তারা অনেক কষ্টে ভাইকে রাজি করায়। কিন্তু অন্য কয়েকজন ভাই তাদের উপর খুব রাগ করে। তারা বিভিন্নভাবে চাপ দেয়া চেষ্টাও করে।
আজিমদের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে যায়। সবাই রুমও পেয়ে যায় অবশ্য দুইজনের রুমে চারজন। আজিম ও রুম পায়। তার রুমমেট জহির ,সাকিব,নাফিস। আর কয়েকদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়।
সাকিবের এলাকার এক ছোট ভাই আসে পরীক্ষা দিতে। সে দুই দিন থাকে। তাকে কেউ কিছু বলে না। জহিরের সাথে সাকিবের সমস্যা ছিলো। সেদিন সাকিব রুমে ছিলো না। জহির ফন্দি আটে সাকিবের এলাকার ছোট ভাই এর সাথে মজা করবে। আজিম ও কিছু না ভেবে জহিরের সাথে থাকে। কিন্তু সাকিবের ভাই মজা বুঝতে না পেরে ভয় পেতে থাকে। এর মধ্যেই সাকিব রুমে এসে দেখে ফেলে। সাকিব তার ছোট ভাই এর অবস্থা দেখে জহিরের সাথে মারামারি শুরু করে দেয়। আজিম ও জহিরের সাথে যোগ দেয়। ইতিমধ্যে অনান্য বন্ধুরা এসে তাদের নিবৃত্ত করে।
বড় ভাইদের কানে এই খবর গেলে উপরে বিচার বসে। বড় ভাইদের মধ্যে যারা চেয়েছিলো আজিম,জহির রাজনীতি করুক তারা সুযোগ পায় তাদের উদ্দেশ্যে পূরণের। তারা আজিম ও জহির কে ভয় দেখায় রাজনীতি না করলে র্যাগ দেয়ার অভিযোগ দিয়ে বহিষ্কার করানো হবে। আজিম ও জহির দিশে হারা হয়ে পরে। শেষে কোনো উপায় না দেখে ভাইদের কথায় রাজি হয়ে যায়।
আজিম ও জহির পরের দিন দোতলায় উঠে পড়ে। অনান্য বন্ধু যারা আগে উঠেছে তারাও তাদের সহজ ভাবে নেয়নি। তাদের জন্য সবকিছু কেমন অসহনীয় হয়ে পড়ে। আজিম তার সাংস্কৃতিক দল থেকে আলাদা হয়ে পড়ে। বড় ভাইদের কাজের চাপে বিভাগের সাথে যোগাযোগ নষ্ট হতে থাকে। আজিম বুজতে পারে সব। রাতে ঘুমাতে গেলে মাথায় এসে চেপে ধরে সব চিন্তা। কিন্তু কি করার আছে তার? সে আটকে গেছে এক ভয়ংকর জালে।
ছাত্র রাজনীতির কনসেপ্ট ভুল কিছু না, কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতির কালচার খুবই সীমাবদ্ধ আর গতিহীন চিন্তাধারার। যার ফলে ছাত্র রাজনীতিও ছাত্র মাফিয়ায় পরিণত হয়। সমস্যাটা শিক্ষার, আর শিক্ষার সীমাবদ্ধতা বজায় রাখতে সদা সচেষ্ট ছিলো স্বৈরাচারেরা।
ঠিক বলেছেন। নিজের চোখের সামনেই দেখা কত ঘটনা!!!
Congratulations @istiakahamed! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP