অনেক দিন পর রক্ত দান করার মত পূণ্য কাজ করার সুযোগ পেলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করা কালীন সময়ে অনেকবারই রক্ত দেয়া হয়েছে। আর করোনাভাইরাস এর প্রভাবে বাসায় থাকায় রক্ত দানের সুযোগ হচ্ছিলো না। বাসা থেকেও রক্ত দিতে অনুৎসাহী করে বিশেষ করে আম্মু তো জানলেই হয়েছে। তার কথা শুনে মনে হয় শরীর কেটে রক্ত নিয়ে যায়। বাসা থেকে চলে আসায় তা থেকে তো বাঁচা গেলো।
সাধারণত ঘুম ভাঙার পরেই মোবাইল হাতড়ে খুজে বের করে ফেসবুকে চোখ বুলাই। সেদিনও ফেসবুকে ঠুকা মাত্রই চোখে পড়ে একটি পোস্ট। আমারই বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার বিভাগের এক পরিচিত বড় ভাইয়ের জন্য রক্ত প্রয়োজন। লক্ষ্য করলাম ঘুম থেকে উঠতে দেরি হওয়ায় বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে সাড়া দিয়ে ফেলেছে। যারপরনাই কিছুটা আশাহত হলাম। তারপরও বড় ভাই স্বাস্থ্যের খোজ নেয়ার জন্য কল দিলাম ফ্রেশ হয়ে।
শুনলাম ডেঙ্গুর কারনে ভাইয়ের রক্তে প্লাটিলেট কমে গেছে তাই রক্ত লাগবে। আমি কথা বলছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরেক বড় ভাই যিনি তার সাথে আছেন। তার কাছ থেকেই জানলাম যারা সাড়া দিয়েছেন তারা এখনো পৌছায়নি। আমি তখন তাকে জানালাম যে আমার আর ভাইয়ের রক্তের গ্রুপ একই তাই আমি এখনই আসছি।
ফোন রেখে সাথে সাথে নিজেকে দ্রুত প্রস্তুত করে বের হয়ে গেলাম। আধাঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে পৌছে ভাইকে দেখতে গেলাম। ভাইকে দেখে আবার নিচে রক্ত দিতে গেলাম। তবে ততক্ষণে দুইজন রক্ত দিতে চলে এসেছে। তারাও ফেসবুকে পোস্ট দেখে আসেছে। আমার ভয় হতে লাগলো আজ বুঝি সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে গেলো।
আমি রুমে ঢুকার পর জানতে পারলাম তাদের থেকে রক্ত নেয়া হবে না। ভাবলাম হয়তো কম ওজন বা অন্য কোনো কারনে নিবে না। একজন আমার হাতের শিরা পরীক্ষা করলো এবং আমায় জানালো যে আমার হাতের শিরা বাঁকা তাই আমার থেকে রক্ত নিবে না। তখন বুঝলাম কেনো আগের কয়েকজনের রক্ত নেয় নি। আমি বুজতে পারছিলাম না যে হাতের শিরা বাঁকা হওয়ার সাথে রক্ত না নেয়ার কি সম্পর্ক। প্রশ্ন করে জানতে পারলাম তারা যদি শুধু রক্ত নিতো তাহলে কোনো সমস্যা ছিলো না। কিন্তু ভাইয়ের জন্য দরকার প্লাটিলেট আর তারা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র ব্যবহার করে প্লাটিলেট সগ্রহ করার জন্য। ঐ যন্ত্রের মাধ্যমে প্লাটিলেট দেয়ার জন্য হাতের শিরা মোটা এবং সোজা হতে হয়।
এখন আমরা পরলাম বিপদে। এই সময় কোথায় পাবো আমরা এমন মানুষ যার হাতের শিরা মোটা আর সোজা। তাও মোটা শিরা না হয় বলে পাওয়া যেতো কিন্তু সোজা? তাও কয়েকজনকে আমরা ফোনে জানালাম যদি পাওয়া যায়। ভাইয়ের অবস্থাও ভালো না যা করতে হতো দ্রুত করতে হতো।
আমরা হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে সাধারন উপায়ে রক্ত নিয়ে সেখান থেকে প্লাটিলেট দিতে বললে তারা অনেক সময় পার করে সম্মতি জানায়। কিন্তু আরেকটা সমস্যা দেখা দেয়।
যারা রক্ত দিতে এসেছিলেন তারা ফেরত চলে গেছেন। তখন আমার মনে পড়ে যে আমার পাশের রুমের ছোটো ভাইয়ের রক্তের গ্রুপ এক। আমি তাকে কল দিয়ে রক্ত দিতে পারবে কিনা নিশ্চিত হয়ে তাকে আসতে বলি। সেও আধাঘন্টার মধ্যে উপস্থিত হয়।
![]() | ![]() |
---|
শেষ পর্যন্ত আমরা দুজন রক্ত দিতে সমর্থ হই। আমরা দুজন এর মধ্যেও একটা ছোটো প্রতিযোগিতা করি যে কার রক্ত কম সময়ে নেয়া হবে। আমার রক্ত প্রবাহের গতি বেশি হওয়ায় আমিই জয়ী হই।
রক্ত দিতে পেরে আসলে অনেক খুশি লাগছিলো। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর রক্ত প্রদান করতে পারে। রক্ত দিলে যেমন নিজের শরীরের জন্য ভালো তেমনি মানসিক ভাবেও প্রশান্তি পাওয়া যায়।
Hi @istiakahamed, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @rehan12!
Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.
JOIN US ON
Congratulations @istiakahamed! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP