প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আপন মানুষ হারিয়ে আমার মত অনেকেই শোকে পাথর হয়ে গেছে"

in BDCommunity3 years ago

আসসালামু আলাইকুম,
20210906_211915.jpg

করোনা ভাইরাসের থাবায় কত আপন মানুষ এবং অর্থ ক্ষয়ে আজ যেন নিঃস্ব হয়েগেছি।প্রাণঘাতী ভাইরাসটি চিনে না কোন আপন পর,বোঝে না গরিব ধনী লোক। সবাই যেন তার কাছে সমান। দীর্ঘ দুই বছর করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবে গোটা পৃথিবী যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। চারিদিকে শুধু মৃত্যুর মিছিল আর মৃত্যুর মিছিল। খবরের কাগজে, টিভি চ্যানেলে প্রতিদিনই মৃত্যুর খবর আসছে।যখন এই করোনা ভাইরাসের মৃত্যুর খবর গুলো চোখের সামনে পড়ে, তখন ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠে।কখন যেনো নিজের আপন মানুষগুলো হারিয়ে যায়,প্রাণঘাতী ভাইরাসে সেই চিন্তায় সারাক্ষণ থাকতাম । https://unsplash.com/t

আমার এই ভয়টা সত্যিই রূপান্তরিত হয়েছিল,
গত কোরবানি ঈদের আগের রাত্রে। আমার মা ফোন করে বলে তর বড় চাচা মারা গিয়েছে। খুব খারাপ লেগেছিল তারপরও মনকে বুঝিয়েছি,আমার চাচার বয়স হয়েছে বিভিন্ন রোগের সমস্যায় মারা গিয়েছে হয়ত। তারপরও আমার বাবার মৃত্যুর পর আমার বড় চাচা আমাদের অনেক খেয়াল রেখেছে। সব সময় আমাদের বাড়িতে এসে আমার মায়ের থেকে আমাদের খবর নিয়েছে। বাবার মতো দায়িত্ব পালন করেছে আমার বড় চাচা।আমার চাচা পৃথিবীতে নাই ভাবতে খারাপ লেগেছে। বাবার পরে চাচাই আমাদের সবকিছু ছিল।

বড় চাচার শোকে কাটতে না কাটতেই। ঈদের দিন আমার বাবার বাড়ি থেকে ফোন আসে আমার চাচাতো ভাই মারা গিয়েছে। এই খবরটি শুনে কোন রকমে নিজের মনকে বোঝাতে পারছি না। কারণ আমার চাচতো ভাইয়ের তেমন বয়স হয়নি, সবে মাত্র বিয়ে করেছিল দু তিন বছর হচ্ছে।তার এক বছরে একটি ছেলে আছে আমার ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছিল দু-তিন দিন আগে।সে অসুস্থ ছিল আমাকে বলেছিল ওর জন্য দোয়া করতে। ওর কথা শুনে আমি বললাম,তোমার জন্য দোয়া করবো না তো কার জন্য দোয়া করব? তুমি সুস্থ হয়ে যাবি।
20210907_034205.jpg

ওর প্রচন্ড রকমের জ্বর ছিল।ডাক্তার বলেছিল ওকে নিয়ে ঢাকা কোভিড হাসপাতালে আইসিইউ তে ভর্তি করানোর জন্য। সেই সুযোগটি আর হয় নিই, পরের দিন সকালে আমার চাচাতো ভাইটি মারা গিয়েছে। দুইজন আপন মানুষকে হারিয়ে পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের দেশে শাটডাউন দিয়ে রেখেছিল। তাই কোনো যাত্রীবাহী গাড়ি তো দূরের কথা একটা রিকশায় চলে নিই রাস্তায়। কিভাবে আমি আমার বাবার বাড়িতে যাব পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলাম ।

আর বাবার বাড়ি থেকে বার বার ফোন দিয়ে বলছে আমি যেনো বাড়িতে না আসি। আমার 2 জন আপন মানুষ মারা যাওয়ার পর ও আরো অনেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তাদের মধ্যে ছিলো আমার তিন চাচা একজন চাচি।চাচাদের এবং চাচী অবস্থা খুব সংকটাপন্ন ছিল, বাড়িতে যেতে পারছিলাম না শুধু ফোনে মাধ্যমে বাড়ির খবর ছিলাম। এ ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। এভাবে একটি দিন পার করলাম,পরের দিন সকাল বেলা আবার শুনি
আমার ছোট চাচা মারা গিয়েছে,ওইদিনই সন্ধ্যায় আমার মেজ চাচা ঢাকা কোভিড হসপিটালে মারা গেছে।

মৃত্যুর সংবাদ শুনতে শুনতে যেন আমি পাথর হয়ে গিয়েছিলাম। চোখ দিয়ে কোন জল বের হচ্ছিল না শুধু ওদের কথাই মনে করছিলাম। এবার যখন বাড়িতে গিয়েছিলাম মাস তিনেক আগের কথা,তাদের সাথে কথা বলেছিলাম। আমার চাচারা আমাকে খুব ভালোবাসে বাবার পরে আমার চাচারা বাবার মতো ছিলেন। অনেকদিন পরে বাড়িতে গিয়েছিলাম বলে।আমার চাচারা আমাকে কিভাবে আপ্যায়ন করবে, কখন কার করে খাব, সেই কথা নিয়ে চাচাদের মধ্যে ঝগড়া হতো।

তাদের ওই কথাগুলো মনে করে খুব কান্না করছিলাম শ্বশুরবাড়িতে।কিভাবে আমি তাদের কথা বলতে পারি তারা তো আমার আমার আপন এবং প্রিয় মানুষ।এই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আমার আপন চাচা চারজন একজন চাচি আর একজন চাচাতো ভাইকে হারিয়েছি।
চাচারা সহ গ্রামের যারা কভিড হসপিটালে ভর্তি হয়েছিল। তারা আর গ্রামে ফিরে আসতে পারেনি তাদের প্রাণ নিয়ে।

এই প্রাণঘাতী ভাইরাসটি যেমন আপন মানুষকে পৃথিবী থেকে কেড়ে নিয়েছে, তেমনি আর্থিক সংকটে ফেলেছে প্রতিটা পরিবারকে। আমার মায়ের থেকে শুনেছি গ্রামে অনেকেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল।ভারতের ডেল্টা ভাইরাস খুব দ্রুত ছড়াচ্ছিল চারিদিকে আমাদের গ্রামে তেমনটি হয়েছিল। আমাদের গ্রাম থেকে ভারত তেমন দূরে নয়। ভারত,বাংলাদেশের মানুষেরা অবাধে আসা-যাওয়া ছিল। তাই এই ভাইরাসটি আমাদের গ্রামে মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল।
চাচা চাচি দের হারিয়ে আমি ভেঙ্গে পড়েছিলাম। বারবার মনে হচ্ছিল আমার মায়ের কিছু হয়ে যায় কিনা?
কারণ আমার মায়ের হার্টের সমস্যা আছে সেজন্য খুব চিন্তায় ছিলাম আমার মাকে নিয়ে।
আলহামদুলিল্লাহ, আমার মা সুস্থ আছে কোন সমস্যা হয়নি আমার মায়ের।
বাবা মারা যাওয়ার পর আমার মা আমাদের জন্য সবকিছু আমার মায়ের কোন কিছু হলে আমরা ভাই-বোনেরা পৃথিবীতে একা হয়ে যেতাম।

হয়ত নিজরা সচেতন না হওয়ার কারণে আমার পরিবারের সাত জন প্রিয় মানুষ হারিয়েছি খুব তাড়াতাড়ি।

ধন্যবাদ, এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমার লেখাটি পড়ার জন্য।