মহসিন অনেক মেধাবী ছাত্র ছিল। ছোটকাল থেকে লেখাপড়াতে সে বেশ মনোযোগীও ছিল। গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে পড়াকালীন অবস্থায় তার লেখাপড়া ভালোই চলতেছিল। যেই সে হাই স্কুলে উঠল দিন কে দিন তার পড়ালেখার খরচ বাড়তেই থাকল। এদিকে তার বাবা যখন কাজে যেত তখন, তার বাবা যাদের সাথে কাজ করত তারা বললঃ ছেলে ত কম বড় হয় নি, এত পড়ালেখা করিয়ে কি হবে? তোমার সাথে কাজে নিয়ে আসলেই ত পারো না? তাহলে ত তোমার একটু সুবিধা হয়।
তারা প্রায়ই এধরনের কথা বলত, কিন্তু তার বাবা তাদের কথায় এত কান দিতেন না। এদিকে মহসিনের সামনে মেট্রিক পরিক্ষা দিবে, একদিন স্কুল থেকে ফিরে সে তার বাবাকে বললঃ বাবা, স্কুল থেকে বলেছে আগামী একসাপ্তাহ'র মধ্যে এক হাজার টাকা জমা দিয়ে পরিক্ষার জন্য ফরম-ফিলাপ করতে হবে।
প্রতি উত্তরে তার বাবা বললঃ অনেক লেখাপড়া হইছে, আর লেখাপড়া করন লাগব না। কাল থেকে আমার সাথে কামে যাবি।
একথা শোনার পর মহসিন পুকুর পাড়ে গাছের নিচে একা একা বসে কাদতে লাগল। পরেরদিন সকালভোরে মহসিনের বাবা, মহসিনকে তার সঙ্গে কাজে নিয়ে গেলেন। সেখানে মহসিনকে ইট ভাঙ্গতে হত, বালতি দিয়ে পানি আনতে হত, তারপর সিমেন্ট-বালু আর ইটের সাথে সে পানি মিশাতে হত। এভাবে টানা তিন দিন কাজ করার পর মহসিনের প্রচুর জ্বর উঠল তাই সে পরেরদিন আর কাজে যেতে পারল না। এদিকে সে কখনো স্কুল বন্ধ করত না, তার বন্ধুরা তাকে স্কুলে না দেখতে পেয়ে তার বাড়িতে গেলে মহসিনের মা বলেঃ মহসিন, তার বাবার সাথে কাজে গেছে, সে আর স্কুলে যাবে না।
একথা শোনার পর তার বন্ধুরা যার যার মতো যার যার বাড়িতে চলে গেল।
পরেরদিন তাদের শ্রেণি শিক্ষক নিজাম সাহেব, সকলের রোল ডাকতেছি কয়েকদিন ধরে মহসিনের নামের পাশে অনুপস্থিতি লক্ষ্য করে ক্লাসে জিজ্ঞাসা করলেনঃ মহসিনের কী কোনো সমস্যা হয়েছে? সে স্কুলে আসছে না কেন?
তখন ক্লাসের মহসিনের এক বন্ধু দাঁড়িয়ে বললঃ স্যার, মহসিন নাকি আর স্কুলে আসবে না, তার বাবা তাকে কাজে নিয়ে গেছে।
একথা শোনার পর স্কুল শেষে নিজাম সাহেব, মহসিনের বাড়ি গেলেন। গিয়ে দেখতে পেলেন মহসিনের প্রচুর জ্বর নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। তারপর তিনি মহসিনের মাকে জিজ্ঞাস করলেনঃ মহসিন নাকি আর স্কুলে যাবে না, কেন?
প্রতিউত্তরে মহসিনের মা বললঃ স্যার, সংসারের যে অবস্থা! ওর বাবা রাজমিস্ত্রির জুগালী দিয়ে আর আমি কাথা সেলাই করে করে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়, সে জায়গায় আবার ওর নাকি আবার পরিক্ষার ফি নাকি দেয়া লাগব। এই জন্য হের বাবা, হেরে পড়ালেখা বাদ দিয়ে কাজে নিয়ে গেছে।
একথা শোনার পর নিজাব সাহেব বললঃ ওর ফরম-ফিলাপের টাকা আমি দিব। কাল থেকে সে স্কুলে যাবে।
একথা শুনতে পেয়ে মহসিন অনেক খুশি হলো। এরপর সে মেট্রিক পরিক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করে একটি কলেজে ভর্তি হলো এবং কলেজে পড়াকালীন অবস্থায় সে টিউশনি শুরু করল। সেই টিশনির টাকা দিয়ে সে তার লেখাপড়ার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারকেও সাহায্য করত। এভাবে সে তার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবারকে সাহায্য করতে থাকে।
আজ সে ঢাকার একটি কলেজের প্রফেসর। এখন তাকে নিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা এবং গ্রামের লোকেরা গর্ব করে।