মধ্যবয়সের ধারণাটি সম্পূর্ণ আপেক্ষিক। এই সময়টাকে আমরা জীবনের দ্বিপ্রহর বলতে পারি। এটা এমন একটা সময় যখন আপনি জীবনের অনেকটা সময় পেরিয়ে এসেছেন, সামনে চলার পথ কিছুটা বাকি। কিন্তু জীবনের এই দ্বিপ্রহরে আমাদের অভিজ্ঞতাগুলো ফেলে আসা অভিজ্ঞতাগুলোর থেকে কিছুটা ভিন্ন। এই ভিন্নতার প্রতি একেক জন মানুষের প্রতিক্রিয়া একেক ধরনের হয়। কিন্তু প্রতিক্রিয়া যেমনই হোক, সবার জীবনে এই সময়টা আসে এবং বুঝে অথবা না বুঝে সবাই নিজেদের মত করে এই সময়ে নিজেদের গুছিয়ে নেয়।
বর্তমান সময়ে মধ্যবয়সের মানসিক সংকট বা মিডলাইফ ক্রাইসিস মনোবিজ্ঞানের একটি আলোচিত বিষয়। মিডলাইফ ক্রাইসিস বা মধ্য বয়সের মানসিক সংকটের ধারণাটি খুব পুরোনো নয়। ১৯৬৫ সালে কানাডিয়ান মনোবিজ্ঞানী এলিয়ট জ্যাকুইস সর্বপ্রথম “মিডলাইফ ক্রাইসিস” টার্মটি ব্যবহার করেন। সহজ ভাষায় মিডলাইফ ক্রাইসিস হল মধ্যবয়সে অনিবার্য কিছু শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট কিছু শারীরিক পরিবর্তন এবং এর ফলে তৈরি কিছু মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন। সাধারণত ৪৫-৫০ বছর বয়সের লোকজনের মধ্যে এটি দেখা যায় এবং এই সময় বার্ধক্যের লক্ষণগুলো একে একে উকি দিতে থাকে।
(ছবিটি সংগৃহীত)
চলুন দেখে নেয়া যাক এই সময়ের লক্ষণগুলো কি কি-
- হঠাৎ করে শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া
- উদাসীনতা আপনাকে ঘিরে রয়েছে এমন বোধ করা
- জীবনের প্রতি উৎসাহ হারিয়ে ফেলা
- যৌনতার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া
- আমাকে দিয়ে কিছু হবে না এমন বোধ করা
- অবসাদগ্রস্ততা ইত্যাদি
কেন এমন হয় মধ্যবয়সে?
প্রথমত এই সময়ে শরীরে যৌন হরমোন কমতে থাকে, ফলে তার প্রকাশটাও হয় জীবনের অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে একটু আলাদা। যৌনতার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে শরীরে ভর করে অবসাদগ্রস্ততা। এছাড়াও, এই সময়ে একে একে জীবন থেকে প্রিয়জনেরা হারিয়ে যেতে থাকে। অনেকের মধ্যে থেকেও নিজেকে একা মনে হয়। সন্তানরা বড় হতে থাকে, তাদেরকে সময় দিতে গিয়ে নিজের প্রতি খেয়াল রাখার সময় থাকে না। এই সময়ে আস্তে আস্তে বার্ধক্যজনিত রোগগুলোর প্রকাশ ঘটতে থাকে এবং আপনি জানেন এই রোগগুলোকে সাথে নিয়েই জীবনের বাকি সময়টা পার করতে হবে। ফলে জীবনের প্রতি আগ্রহ হারাতে থাকে। এছাড়াও এই সময়ে সবার ক্যারিয়ার কম-বেশি স্থির হয়ে যায়। ইচ্ছা থাকলেও ক্যারিয়ার বদলানোর সুযোগ না থাকায় এই সময়টা অনেকের জন্য আরও কঠিন হয়। অনিচ্ছাসত্ত্বেও উপায়ন্তর না থাকায় একই কাজ প্রতিদিন করে যেতে হয়। জীবনে যা করার ইচ্ছে ছিল, তা করতে না পারার ব্যর্থতাবোধে অনেকেই মুহ্যমান হয়ে পরেন।
কিভাবে নিজেকে সামাল দেবেন এই সময়ে?
- নিজের অনুভূতি, সংশয় বা কষ্টগুলো ভিতরে চেপে না রেখে বিশ্বস্ত জনের সাথে, বিশেষ করে পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করুন
- পরকীয়া বা অগ্রহণযোগ্য সম্পর্ক থেকে দূরে থাকুন
- পরিবারের সাথে বেশি সময় কাটান
- সম্পর্কের মাঝে দূরত্ব আসতে দেবেন না অথবা দূরত্ব থাকলে তা মিটিয়ে ফেলুন
- বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করান
- সর্বোপরি ধৈর্য ধরুন