স্মৃতি হল এমন একটি বিষয় যা ভোলা যায় না। জীবনের কিছু মুহূর্ত, কিছু মানুষ, কিছু সময়, কিছু ঘটনা সারা জীবন মনে থাকে। স্কুল জীবনের স্মৃতি গুলো জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন গুলোর মধ্যে অন্যতম।
আজ ছিল ১৭ ই মার্চ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২ তম জন্মদিন। তার জন্মদিন উপলক্ষে আজকের দিনকে শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এজন্য সারাদিন ব্যাপী বিভিন্ন মাইকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ,গান হয়। আজ সকালে টেবিলে বসে থাকা অবস্থায় হঠাৎ এই লাইনগুলো আমার কানে আসে।
"আমার সোনার বাংলা,আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ,তোমার বাতাস,আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি ॥
ও মা,ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে"
অর্থাৎ আমাদের জাতীয় সংগীত। সত্যি বলতে প্রায় দুই বছর পর জাতীয় সংগীত শুনলাম। স্কুলে পড়াকালীন প্রতিদিনই আমাদের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে ক্লাস শুরু হতো। এরপর কলেজে উঠে জাতীয় সংগীত শোনা হয়নি। মাঝে মাঝে ভাগনা,ভাগ্নিদের স্কুলে জাতীয় সংগীত শুনতাম। এবং অনেক সময় ফেসবুকেও জাতীয় সংগীত এসে যায়। তবে স্কুলে পড়াকালীন এটা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। আজ জাতীয় সঙ্গীত শোনার পর স্কুল জীবনের ঘটনা গুলো মনে পড়ে গেল।
আমি বিপিএটিসি স্কুল এন্ড কলেজ, সাভার,ঢাকা থেকে এসএসসি পাস করি। এটাই আমার স্কুল ছিল। সেখানে সকালে সবার প্রথমে কুরআন তিলাওয়াত, তারপর শপথ পাঠ, তারপর জাতীয় সংগীত হতো। পাশাপাশি প্রতিটি ক্লাসের সামনে ক্লাস টিচার এবং দুই জন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে থাকতাম। আমিও দু-একবার দাঁড়িয়ে ছিলাম। মূলত ক্যাপ্টেন ই এখানে দাঁড়িয়ে থাকে তার পাশাপাশি একজন দাঁড়ায়। আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম না।
এটি একটি ভালো কাজ। আমাদের দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে এগুলো করা হয়। তবে আমার স্কুলে এগুলো প্রতিদিন হত। কেউ দেরি করে আসলে,সে সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়তো। স্যার ম্যাডামরা শিক্ষার্থীরা সকলেই এটাকে খুবই মেনে চলত। তবে আমরা একটু দুষ্টামি করার চেষ্টা করতাম। প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন একজন ছেলে অথবা মেয়ে তিলাওয়াত করতো। মাইকের ব্যবস্থা ছিল। অন্য আরেকজন শপথ পাঠ করা তো। আর ৩-৪ জন জাতীয় সংগীত পরিবেশন করতো। জাতীয় সংগীত যারা পরিবেশন করতো তারা নির্দিষ্ট করা ছিল। প্রতিটা ক্লাসে আমাদের ক্লাস টিচার থাকতো, যাতে করে আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করি। কথা বলা ছিল নিষেধ। সিটের মধ্যেই আমরা শপথ করতাম। পুরো ঘটনাগুলোই দাঁড়িয়ে করতে হতো। তবে তাও আমরা স্যার ম্যাডামদের ফাঁকি দিতাম। আমরা বসতাম না ঠিকই, তবে আমরা কথা বলতাম লুকিয়ে লুকিয়ে,আস্তে আস্তে। আমরা এ সময় খাতায় লেখার মাধ্যমে আমাদের কথাবার্তা শেয়ার করতাম। খাতায় লিখে দিতাম,"কথা বলার সম্পূর্ণ নিষেধ"।" কথা বলিস না"।"কি খাইছিস"
প্রভৃতি কথাবার্তা।
যেহেতু ক্লাস কেবল শুরুর সময়, সেহেতু আমাদের সকলেরই কথা ছিল বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার মত।কিন্তু ক্লাসে ঢোকার সাথে সাথে আমাদের এসব করতে হতো ,যার ফলে আমরা কথা শেয়ার করতে পারতাম না। গতরাত আমরা ভাবি এগুলো গিয়ে বন্ধুদের বলবো,কিন্তু ক্লাসে যাওয়ার পরে যদি বলতে না পারি তখন কথা গুলো মাথার ভিতরে চলতে থাকে। তবে যাই হোক, সবদিক মিলিয়ে খুবই আনন্দময় দিন ছিল। এখন উপলব্ধি করিতে পারি যে স্কুলজীবনে এটার খুবই দরকার ছিল। কেননা এখন বলতে গেলে নামাজ পড়া ছাড়া এভাবে কোরআন তেলোয়াত করাই হয় না। আর শপথ এটা তো সেই স্কুলেই করেছিলাম,এছাড়া আর খবর নাই।এখন হয়তো চেষ্টা করলে ২-১ লাইন বলতে পারব, কিন্তু পুরোপুরি পাওয়া সম্ভব নয়। এমনকি জাতীয় সংগীত যদিও আমাদের অন্তরের সাথে লাগানো, কিন্তু তখনকার দিনের মতো সুর করে বলতে পারবোনা। তখন আমরা সবাই সুরের মাধ্যমে জাতীয় সংগীত গাইতাম। মাইকের পাশাপাশি আমাদেরও আস্তে আস্তে বলার নিয়ম ছিল। এবং শপথ টি উচ্চ স্বরে উচ্চস্বরে পড়ার নিয়ম ছিল। আর আজকের দিনে রণসংগীত একবারে ভুলেই গিয়েছি। চেষ্টা করলে হয়তো বা রণসংগীত বলতেই পারবোনা। তবে এগুলোই আমাদের মনের ভাবনা কে জাগ্রত করে।
এখন আমার স্কুল জীবনের কথা খুব মনে পড়ে। সবাই বলে বড় হলে নাকি ছোট কালের কথা মনে পড়ে যায়। আমি তাজ খুব বেশি উপলব্ধি করতেছি।
কারন আমার স্কুলে ছেলেমেয়েরা ছিলাম। এরপর আমি শুধু বয়েজ কলেজে পড়াশোনা করি। এবং বর্তমানেও শুধু বয়েজ কলেজেই উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছি।আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় সঙ্গীত শোনার পর হঠাৎ স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। স্কুল জীবন টাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো কাটানো সেরা কয়েকটা বছর ।আমার মনে হয় সকলের জীবনেই এরকম কিছু স্মৃতি রয়েছে। স্মৃতি ভোলার মত নয়। বিশেষ করে স্কুল জীবনের স্মৃতি।