শবে বরাতের এই রাতটিকে হাদিসের ভাষায় বলা হয় "লাইলাতুন নিসফি মিন শা'বান"। আজ মধ্য শা"বান। আমি এই লেখাটি গতকাল রাতে আপলোড করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সময়ের অভাবে লিখতে পারিনি। তবে আজ দিন টা শবে বরাতের দিন,তাই আমার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরছি। মূলত শবে বরাত নিয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। কেউ বলে এটা পালন করা বিদাত,আবার অনেকে এটা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত,আবার অনেকে বলে এগুলোর ভিত্তি নেই। আমি অনেক আলেম ওলামাদের কথা শুনেছি শবে বরাত নিয়ে। এখন আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরছি।
শবে বরাত সম্পর্কে সহীহ হাদীস এসেছে-
রাসূল (সা.) বলেন, 'আল্লাহ তায়ালা মধ্য শাবান (১৪ তারিখ দিবাগত রাত, অর্থাৎ শবে বরাত) এর রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষনকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।' (সহীহ ইবনে হিব্বান ১২/৪৮১)
হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, " নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন।"
মা'আরিফুল কুরআনের লেখক মুফতী শফী রহ. বলেন, রাসূল সা. যেহেতু জীবনে মাত্র একবার এই রাতে বাকী গোরস্তানে গিয়েছেন তাই আমাদেরও একবারের অধিক, প্রতিবছর গোরস্তানে যাওয়া উচিত নয়।
এবার আসি জাতীয় প্রশ্নে,কত রাকাত নামাজ পড়বো?কবে-কতটি রোযা রাখবো?কোন সূরা দিয়ে পড়বো ? এটা কি ভাগ্য রজনী? হালুয়া-রুটি খাওয়া যাবে কি? এই রাতে গোসলের কোনো ফযিলত আছে? প্রভৃতি।
এবার আসি উত্তরে , শাবান মাসে বেশি বেশি নফল নামাজ,নফল রোজা রাখতে হয়। তবে ১৪,১৫,১৬ শাবান রোযা রাখা ভালো, কারণ আমাদের নবী এই মাসে অধিক রোযা রাখতেন, কারণ এর পর ই তো রমজান মাস,তাই প্রস্তুতির জন্য। নির্দিষ্ট কোনো সূরা দিয়ে এই রাতে নফল নামাজ পড়তে হয় না। এই রাতটিকে ভাগ্য রজনী বলা হয় না, ভাগ্য রজনী হলো শবে কদরের রাত। আমরা সূরা কদর পড়লেই তা জানতে পারবো। হালুয়া রুটি খাওয়া একটি বিদাতি কাজ, অনেকে এটাকে উৎসব মনে করে ,যা একেবারেই অনুচিত। এই রাতে গোসলের আলাদা কোনো ফযিলত নেই।
অনেকে বলে থাকে যে,ফরযের খবর নাই ,শবে কদরের খবর নাই, শবে বরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি। আমি কথাটির সাথে দ্বিমত পোষণ করি। আমি মনে করি, যদি শবে বরাত উপলক্ষে ১০০ জন এশার নামায টা মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সাথে আদায় করে,নফল নামাজ পড়ে, ইসলামিক কথাবার্তা শোনে, জিকির করে তাহলে সমস্যা কোথায়? এই ১০০ জনের মধ্যে ৫-১০ জনের ও তো হেদায়েত হতে পারে,হতে পারে এর পর থেকে সে নামাজ শুরু করবে। কারণ হেদায়েতের মালিক তো আল্লাহ। উনি কাকে কখন হেদায়েত দান করবেন, কেউ জানি না।
হয়তোবা এই দিন উপলক্ষে একটু বেশি মানুষ মসজিদে যায়, তবে এটা কি খারাপ জিনিস? নিশ্চয়ই নয়। ধরলাম শবে বরাত উপলক্ষে মানুষ একদিনের জন্য হলেও মসজিদে যাচ্ছে এবং এটি অনেক উত্তম একটি কাজ। আমরা তো তেমন হাতে গোনা কয়েকটা দিন ছাড়া মসজিদে যাই না। আমরা সাধারণত শবে বরাত ,শবে কদর,দুই ঈদের দিন এবং শুক্রবার মসজিদে যাই। এই শব ই বরাত উপলক্ষে না হয় মসজিদে গিয়ে কয়েকটি কথা শুনলাম। সেটা তো খারাপ হবে না, তাই না!
শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয়ঃ
যা যা করা উচিত:
(ক) নফল নামাজ [১] তাহিয়্যাতুল অজু, [২] দুখুলিল মাসজিদ, [৩] আউওয়াবিন, [৪] তাহাজ্জুদ, [৫] ছলাতুত তাসবিহ [৬] তাওবার নামাজ, [৭] ছলাতুল হাজাত, [৮] ছলাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া।
(খ) নামাজে কিরাআত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা।
(গ) পরের দিন নফল রোজা রাখা;
(ঘ) কোরআন শরিফ [১] সুরা দুখান ও [২] অন্যান্য ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা;
(ঙ) দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া;
(চ) তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা;
(ছ) দোয়া-কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির-আসকার ইত্যাদি করা;
(জ) কবর জিয়ারত করা;
(ঝ) নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সকল মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা।
যা যা করা উচিত নয়:
(১) আতশবাজি, পটকা ফোটানো,
(২) ইবাদতবাদ দদিয়ে বেহুদা ঘোরাফেরা করা,(৩) অনাকাঙ্ক্ষিত আনন্দ-উল্লাস করা,
(৪) অযথা কথাবার্তা ও বেপরোয়া আচরণ করা,
(৫) অন্য কারও ইবাদতের বা ঘুমের বিঘ্ন ঘটানো,
(৬) হালুয়া-রুটি বা খাওয়াদাওয়ার পেছনে বেশি সময় নষ্ট করে ইবাদত থেকে গাফিল থাকা।
পরিশেষে আমি এটায় বলতে চাই, ইসলামকে একটু জানার চেষ্টা করুন। আপনার ঘরে কোরআন আছে, আপনার হাতে স্মার্টফোন আছে, এগুলোর ব্যবহার করুন। জীবনটা অনেক সংক্ষিপ্ত। অন্যটা ইবাদত না করার ব্যাপারে কিছু বলবেন না,এমন কিছু করবেন না , যার ফলে সে ইবাদত ছেঁড়ে দেয়, হয়তো সে একটু বাড়াবাড়ি করতেছে, কিন্তু এটার জন্য সে একদিন এর জন্য হলেও আল্লাহর পথে এসেছে। আমরা একে অপরের জন্য দোয়া করবো, তবেই আমাদের দোয়া কবুল হবে। হিংসা, বিদ্বেষ মনে রাখবেন না। আল্লাহ আমাদের সকলকে কবুল করুক। আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক পথে পরিচালনা করুক। যদি কোনো ভুল বলে থাকি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাই ভালো থাকবেন।
"আসসালামু আলাইকুম"
নফল ইবাদত যার মন চাইবে করবে,যার মন চাইবে না করবে না,এটাকে বাধ্যবাধকতার মধ্যে ফেলা উচিত নয়।
জী আমি সেটাই বলছি, কিন্তু এই একদিন এর জন্য হলেও বেনামাযীরা যদি মসজিদে আসে,রোযা রাখে, তাহলে সেটা অনুচিত কিছু হবে না, বরং সওয়াব হবে ইনশাআল্লাহ