৯০ শতকের বাচ্চারাই মনে হয় শেষ জেনারেশন যারা লেইসফিতা খুব ভালো ভাবে জানে। সেই সুবাদে আমার ছোটবেলার দারুন স্মৃতি জড়িয়ে আছে লেইসফিতা নিয়ে। আসুন কিছু স্মৃতিচারণা করা যাক।
৯৮/৯৯'র দিকের কথা, ৬/৭ বছরের দুরন্ত মেয়ে সারাক্ষণ খেলায় মত্ত। রাস্তারপাশ ধরে লেইসফিতা ওয়ালা আঙ্কেল 'ঐ লেইসফিতা'বলে ডাকতে ডাকতে আসছে আর আমি একেদৌড়ে রাস্তার পার ধরে দাড়ানো তাকে ডেকে নেওয়ার জন্য। ছোটবেলায় বিকালে যখন ঘুমিয়ে পড়তাম ফেরিওয়ালার লেইস ফিতা লেইস ডাক শুনে উঠে যেতাম। সঙ্গে সঙ্গেই মায়ের কাছে বায়না ধরতাম চুড়ি, রঙিন ফিতা কিনে দেওয়ার জন্য। সেই ফিতা মাথায় বেণী করে পেচিয়ে, হাত ভরতি চুড়ি পড়ে চারদিকে ঘুরে বেড়াতাম।
আমার জীবনের প্রথম লিপস্টিকের দাম ছিল মাএ ১০টাকা। আম্মুতো কোন ভাবেই কিনে দিতে চাইছিল না ছোটমানুষ ঠোঁট কাল হয়ে যাবে কিন্তু আমার তো চাই ই চাই। তারপর তো কেনা হলো। সেইসাথে চুলের ক্লীপ,স্নো, ক্রিম,তেল, নেইলপলিশ আরো কতো কি না থাকত । বাড়ির ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বড়রাও মা-চাচিরা, প্রতিবেশি সবারই কেনাকেটা হত এখান থেকে। লেইসফিতাওয়ালা কাছে থাকত হরেক রকমের জিনিস। মাঝে মাঝে নিজের কিছু কেনার না থাকলেও ডেকে নিয়ে আসতাম আর বকা খেতাম যদিও বাড়ির ভেতর কেউ না কেউ ঠিকই কিনত। সেই দিনগুলি অসাধারন ছিল।
যখন খুব মনে পড়ে পুরনো কথা নিজের অজান্তেই খুজিঁ ইস্, যদি আবার কোনদিন দেখতে পেতাম 'ঐ লেইসফিতা' বলে ডাকতে ডাকতে যাচ্ছে,কাধে কাপড়ে মোড়ানো সেই জাদুর ঝোলা আর সচ্ছ কাচের ঢাকনা ওয়ালা বক্স হাতে থাকত, জাদুরবাক্স। এক আবেগের নাম লেইসফিতা।
কিন্তু এখন আর লেইসফিতা লেইস বলে হাক দেন না। শহরের যান্ত্রিকতার ভিড়ে হারিয়ে গেছে বাক্সবন্দী ব্যবসায়ী লেইসফিতা ওয়ালারা। মফস্বল বা গ্রামের পথেও তাদের পদচারনা তেমন নেই বললেই চলে। শহর তো বটেই এখন আর আগের মতো গ্রামেও কেউ চুরি ফিতা কেনে না। মার্কেটে সব রকম প্রসাধনী সামগ্রী আর সাজাসজ্জর জিনিস পাওয়া যায়। এখন সবাই মার্কেটে যান তাই হয়ত এই ফেরিওয়ালারাও নেই। তাছাড়া সময়ের সাথে সাথে মানুষের পছন্দের তালিকাতে ও এসেছে আমুল পরিবর্তন। এখন আর কোন বাচ্চাও রঙিন ফিতা দিয়ে চুল বেনী করে না। তাই এ প্রজন্ম কখনো জানবেই না লেইসফিতা কি!
যাইহোক, মনে পড়ে গেল জেমসের সেই গান, "লেইসফিতা লেইস চুড়ি ফিতা, রঙিন সুতা, রঙিন করিবে মন। লেইসফিতা লেইস"