যাকাতের টাকা নেশাখোরের পেটে

in BDCommunity23 days ago

মোবাইল ব্যাংকিং থেকে মেসেজ আসলো।মেসেজ চেক করে দেখি পাঁচ হাজার টাকা ক্যাশ ইন হয়েছে।ভাবছি কে দিলো টাকা!ঈদের সালামি নয়তো আবার!
এমন সময়ই আমার দিদি ফোন দিলো।ফোন দিয়ে বললো এই টাকাগুলো বাজার থেকে ক্যাশআউট করে এলাকার কিছু গরীব লোকদের কে ভাগ করে দিয়ে দিতে।এটা শুনে বেশ খুশিই হলাম।কারণ কাউকে কিছু নিজ হাতে দিলে বেশ ভালোই লাগে যদিও টাকাগুলো আমার না,তারপরও নিজ হাতেতো দিতে পারবো।

ইফতারের পর বাজার গেলাম সাইকেল দিয়ে।টাকাগুলো ক্যাশআউট করে মানিব্যাগে রাখলাম।আর কোনো কাজ ছিলো না তাই বাড়ির দিকে রওনা হলাম।বাজারের অদূরেই স্কুল।স্কুলের পিছনের দিকটা একটু অন্ধাকার।এখন সবাই বাজারে এই জায়গায় কোনো লোকজন নেই।

এখানে আসতেই ঘটলো বিপত্তি।তিনটি বখাটে ছেলে,লম্বাচওড়া স্বাস্থ্য ভালো,আমাকে দাঁড়াতে বললো।আমি তাদেরকে দেখেই বুঝে গেলাম আজ আর রক্ষে নেই।আমার পাঠকাটির মতো চেহারা আর ঐ বিশালদেহী ছেলে তিনটাকে দেখে ঘাবড়ে গেলাম।সাইকেল থামালাম,জিজ্ঞেস করলাম, কি চাও তোমরা।
তাদের থেকে সবচেয়ে বাহাদুর ছেলেটা বললো,একটু এইপাশে আসো কথা আছে।

-কি কথা?

-আসো এইদিকে কথা আছে একটা ঝামেলা হইছে।

আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না,মনে মনে ভাবলাম,যে ঝামেলাতো কিছু হয় নাই,তোমরাই ঝামেলা করবা।

সাইকেল থেকে নেমে রাস্তার এক পাশে দাঁড়ালাম।
তাদের মধ্যে থেকে সবচেয়ে বেয়াদব ছেলেটা এবার জিজ্ঞেস করলো,তোমার বাড়ি কই?

আমি বললাম,"কাজী পাড়া"

-না তোমার বাড়ি কাজী পাড়া না।তোমাকেতো কোনোদিন দেখি নাই।

-আরে আমার বাড়ি কাজী পাড়ায়ই,কিন্তু ঢাকায় থাকি।

-চাকরি করো?

-না পড়ালেখা করি।

এখন সে তার সুর বদলানো শুরু করলো।তার সহচরকে ডাক দিয়ে বললো,

দেখতো আসিফ এইটা সেই ছেলেনা যে ঝামেলা করছিলো,ঢাকায় পড়ালেখা করে?
এর মধ্যে একটা ছেলে আমার প্যান্টের পিছনের পকেটে হাত দিয়ে দেখলো মানিব্যাগ আছে কিনা।

আসিফ নামের ছেলেটা মানে ডাকাতটা একটু অভিনয় করে বললো,হ্যাঁ চেনা চেনা লাগতাছে,এই ছেলেই ঝামেলা করছিলো।

আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ।এই ধরনের কথার বেড়াজালের অত্যাচার আমার সহ্য হয় না।আমার শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগলো।কাঁপতে কাঁপতেই বললাম,থাক এতো প্যাচানোর দরকার নেই,তোমরা কি চাও সরাসরি বলো।

মানুষরূপী শয়তানটা এবার বিশ্রি হাসি দিয়ে বললো,গাঞ্জা খামু টেহা নাই,টেহা দেও।

IMG_20210508_201106.jpg

আমি বললাম,তোমাদের নেশা করার টাকা আমি দিবো কেনো,আর এখন আমার কাছে যে টাকা আছে তা যাকাতের টাকা,গরীব মানুষের হক।দয়া করে গরীবের হকে হাত দিও না,ছেড়ে দাও চলে যায়।
চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনি।
সে এবার রাগী গলায় বললো,নেশা করার ক্ষেত্রে আমরা কোনো বাচবিচার করি না,কে গরীব কে ধনী বা কে বাচ্চা আমাদের জানার দরকার নাই।এখন যদি আমরা তিনজন মিলে তোমাকে মেরে সাইকেল,মোবাইল নিয়ে নেয় তখন কি করবা।

আমি বললাম,পঞ্চাশ টাকা দেয় নিয়ে আমাকে ছেড়ে দাও।

তিনটাই হেসে বলে,আমাদের কি যাকাতের টাকা দিচ্ছো নাকি ফেতরার টাকা দিচ্ছো।পাঁচশো দাও।

আমি বুঝতে পারলাম,কিছু করার নেই,যা চাচ্ছে তা দিয়ে দেয়,না হলে আরো বড় ক্ষতি করতে পারে।

মানিব্যাগ বের করে পাঁচশো টাকার একটা নোট দিলাম।

মানিব্যাগ বের করার পরই তাদের লোভ আরো বেড়ে গেলে।একটাকে বললো,মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালাতে,মানিব্যাগ কতোটাকা আছে দেখতে।এতোটাকা দেখে টান মেরে মানিব্যাগ নিয়ে সবগুলো টাকা নিয়ে মানিব্যাগ ফেরত দিলো।

এই যুবক বিপথগামী তিনটা ছেলের কাছে আমি একা অসহায়,আমার কিছুই করার ছিলো না।যদি চিৎকার দেয় তাহলে হয়তো বড় কোনো ক্ষতি করে দিতে পারে,তাদের কাছে অস্ত্র থাকাটা স্বাভাবিক। এইভেবে আর চিৎকার দিলাম না,সাইকেলটা নিয়ে কাঁপাকাঁপা শরীর নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির দিকে রওনা হলাম।বুকের ভিতরটা জেনো জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে।কালকে দিদির কথা শুনে খুশি হয়েছিলাম,কয়েকটা অসহায় মানুষকে একটু সাহায্য করতে পারবো ভেবে।
কিন্তু আজকে এই অসহায় গরীব মানুষের টাকা দিয়ে এই অসভ্য ছেলেগুলি নেশা করবে,মাতাল হয়ে গিয়ে আবার অন্য কোনো অসহায়ের ক্ষতি করবে...