১ম পর্ব : https://hive.blog/hive-190212/@munkasir.adib/5dxv7j
২য় পর্ব।।
নীলার সাথে প্রথমবারের মতো রাইয়ান এর কথা হয় ফেসবুক এর মাধ্যমে। রাইয়ান বাস্তবে যতটা লাজুক ভার্চুয়াল জগতে ঠিক তার উল্টো। সাবলীলভাবে সে নীলার সাথে রোজ কথা বলত। সে জানত নীলা তাকে অনেক বেশী ভালোবাসে। নীলা রাইয়ান কে সরাসরি অনেকবার ই বলেছে, "আমি তোমায় ভালোবাসি" । এর জবাবে রাইয়ান এর ও চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করতো "আমিও তোমায় ভালবাসি নীলা। বড্ড বেশী ভালোবাসি।" কিন্তু মুখ ফুটে কখনো এ কথাটি বলেনি সে। কারণ হলো একটাই নীলা কে হারানোর ভয়। কারণ তার মনের বধ্যমূল ধারণা ছিল ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ালে এক সময় না এক সময় সেই মধুর সম্পর্কটিও নষ্ট হয়ে যায় সাথে সুন্দর বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্কটিও। তাই সে নীলাকে ভালবাসলেও কখনো মুখ ফুটে বলেনি। এভাবেই ফেসবুক এ তাদের কথা চলতে থাকে। নীলার সাথে রাইয়ান এর কথা হয় তার স্কুল এর ছুটি চলাকালীন সময়ে। একসময় ছুটির দিনগুলো ফুরিয়ে আসে এবং রাইয়ান কে আবার ফিরে যেতে হয় তার আবাসিক স্কুল এ। কোনোবার ই ফেরার সময় তার মন খারাপ হতো না। এবার তার মন ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। বার বার মনে পড়ে নীলার কথা। যতো বেশিক্ষণ সম্ভব সে বাসায় থাকার চেষ্টা করে কারণ নীলার সাথে কথা বললে তার মধ্যে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করত। সে নীলার কাছ থেকে তার মা'র মোবাইল নম্বরটি নেয় এবং জীবনে প্রথমবার এর মতো মা ও বাবা ছাড়া অন্য করো নম্বর মুখস্ত করে ফেলে মাত্র ৫ মিনিট এ। এভাবে সে যখন চলে যায় নীলার মন ও বড্ড খারাপ হয়ে যায় । তার মনের নীল আকাশে যেখানে রাইয়ান কে নিয়ে তার দেখা স্বপ্নরা ছিল সেখানে বেদনার কালো মেঘেরা জমতে শুরু করে। রাইয়ান এর সাথে কথা বলতে না পারার বেদনা, রাইয়ান তাকে ভালোবাসেনা এই বেদনা। তারপরও সে মনকে শক্ত করে; :রাইয়ান একদিন আমার হবেই।" এই কথা ভাবতে থাকে।
এদিকে স্কুল এ যাওয়ার পর থেকে কোনো কাজ এই রাইয়ান এর মন বসে না। প্রতিটি মুহুর্ত তার কাটে নীলার কথা মনে করে। প্রতিটি ঘন্টায় সে মনে করে " নীলা হয়ত এখন এটা করছে। বাসায় থাকলে ও এতা জিগ্জ্ঞেস করত। ওকে আমি এটা বলতাম।" এভাবেই সে নিজের মনের মধ্যে এক কল্পনার জগত গড়ে তুলত নীলা কে নিয়ে এবং প্রায়ই পাগলের মতো আপন মনে হাসত। সে এই কথাগুলো তার খুব ই কাছের কিছু বন্ধুর সাথে শেয়ার করে। তাদের স্কুল এ সপ্তাহে ৩ দিন পরিবারের সাথে কথা বলতে দেয়া হতো তাও শুধুমাত্র ৫ মিনিট এর জন্য এবং স্যার রা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতেন কেউ কি অন্য কোথাও কথা বলে নাকি। এই ৫ মিনিট এর ২ মিনিট রাইয়ান বাসায় কথা বলত এবং বাকি ৩ মিনিট নীলার জন্য বরাদ্দ ছিল। কোনোদিন তাকে পেত কোনোদিন তার মা ধরত ঐদিন ছলে বলে কৌশলে রঙ নম্বর বলে এড়িয়ে যেত। যেদিন তাদের কথা হতো নীলা তার পুরো সপ্তাহের জমানো সব কথা একটার পর একটা বলতো রাইয়ান মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুধু শুনেই যেতো আর মিটিমিটি হাসত। এভাবেই চলত তাদের কথা। নীলা সময় করে সপ্তাহে ৩ দিন ঠিক সময়ে ফোন টা নিজের কাছে নিয়ে রাখত। তার মা'র কাছ থেকে লুকিয়ে সে কথা বলত রাইয়ান এর সাথে আর ভাবত, "ও কি আসলেই আমাকে ভালোবাসে?" এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজত সবসময়।
এভাবেই দুঃখ,কষ্ট, আনন্দ, বেদনা, লুকনো ভালোবাসা এসব নিয়েই রাইয়ান এর দিন কেটে যায়। আবার ছুটি এসে পড়ে। বাড়ি ফিরে আসে সে। স্কুল এ থাকা অবস্থায় তার জন্মদিন ছিল সেদিন নীলা তাকে শুভেচ্ছা জানায় তাতে সে অনেক খুশি হয়েছিল। সে বাড়িতে আসার পর নীলার স্কুল এর সামনে প্রায়ই যেতো। প্রায়ই দূর থেকে সে নীলাকে দেখত। সামনাসামনি যদিও কখনো তাদের কথা হয়নি। রাইয়ান এর একটা সাইকেল ছিল তা নিয়ে পিছু করতে করতে রাইয়ান নীলার বাসা খুঁজে পায় এবং সৌভাগ্যবসত তার বাসা রাইয়ান এর কোচিং এ যাওয়ার পথেই ছিল। রোজ সে যাওয়ার সময় একবার অসার সময় একবার তার বাসার সামনে দিয়ে ঘুরে ঘুরে যেত।
আমি আগেই বলেছিলাম রাইয়ান এর জন্মদিন চলে গিয়েছে। কিন্তু নীলা টাকা জমিয়ে তার জন্য একটা গিফট কেনে এবং প্রথমবারের মতো রাইয়ান কে দেখা করতে ডাকে বিকেলবেলায়। রাইয়ান অনেক কিছু ভেবে গিয়েছিল কি বলবে কি বলবেনা কিন্তু নীলার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তার দুনিয়াটা উল্টে যায়। তার মনে হচ্ছিল এই বুঝি সে মাথা ঘুরে পরে যাবে। নীলা তাকে গিফট তা নিতে বললে সে কোনোভাবেই নিতে চায়না। শেষমেষ নীলা রাস্তায় রেখেই চলে যায়। কিন্তু তাদের এই সুখকর সময়টা সুখের ছিলনা। নীলার সাথে ছিল তার বান্ধবী প্রিয়া। রাইয়ান ও নীলা কে দূর থেকে তাদেরই এক সহপাঠি কটকটি (হিন্দি সিরিয়াল এর দজ্জাল শাশুড়ির মতো হওয়ায় তার এ নাম আমি দিলাম) দেখে ফেলে। এবং সে এই ঘটনা ইনিয়ে বিনিয়ে তিল কে তাল করে নীলার মা'কে বলে। নীলা বাসায় যাওয়ার পরে তার মা তাকে জিজ্ঞেস করলে সে অস্বীকার করে। বলে যে রাইয়ান এর ব্যাগ তা নিচে পরে গিয়েছিল তাই তুলে দিয়েছি। এযাত্রায় তার উপর দিয়ে ঝড় টা হাল্কাভাবেই যায়। কিন্তু কটকটি বেচারি প্রিয়ার বাসায় ও ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কিছু বলে। বেচারি প্রিয়ার একটি মার ও সেদিন মাটিতে পড়েনি। এভাবেই বলা চলে তাদের প্রথম দেখা হয়।
সেই দেখার পরে আবার রাইয়ান এর চলে যেতে হয়। সেখান থেকে যথারীতি তাদের কথা চলতে থাকে। নীলা রাইয়ান কে অনেকবার জিজ্ঞেস করে সে কি আসলেই নীলা কে ভালবাসে নাকি না। আর বাসলেও কতটুকুই বা বাসে। প্রতিবারই রাইয়ান এর একই উত্তর, "জানিনা"। রাইয়ান এর জানিনা বলার পেছনে ছিল এক আশ্চর্য কারণ যেটা সে নিজেই নিজেকে বলতো নীলাকে কখনো বলেনি। সে মনে মনে নীলা কে বলত, "বুঝলে নীলা, জগতে মানুষের যে জিনিসটা জানা হয়ে যায় তার প্রতি মানুষের আর কোনো প্রকার ব্যাকুলতা কাজ করে না। কিন্তু যা মানুষের অজানা থেকে যায় তার প্রতি মানুষের থাকে এক প্রবল ব্যাকুলতা ও আকর্ষণ। তাই আমি জানতেও চাই না তোমাকে আমি আদৌ ভালবাসি বা কতোটুকু ভালবাসি। কারণ আমি চাই তোমার প্রতি আমার এই ব্যাকুলতা যাতে থাকে আজীবন, আমৃত্যু এবং এই জনমের পরেও।"
আপনি এখানে যে গল্পটা পাবলিশ করেছেন সেটা কি আপনার নিজের লেখা নাকি অন্যকারো?
লেখাটি বেশ ভালো হয়েছে।হ্যালো @munkasir.adib ব্রো,
গল্প টা একটা বন্ধু কে নিয়ে লেখা 😅। নাম গুলো ছদ্মনাম।
তাই নাকি,ওয়াও।
কন্টেন্ট সোর্স তাহলে এখানের লিখাটিও নিশ্চয় আপনার? উপযুক্ত প্রমাণ দিন অন্যথায় এটি প্ল্যাগারিজম, যা হাইভে নিষিদ্ধ।
Congratulations @munkasir.adib! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s):
Your next target is to reach 200 upvotes.
Your next target is to reach 50 comments.
You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word
STOP
Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!