( কিছু মানুষের জীবন গল্পের থেকেও বেশি কিছু হয়। নাটক, গল্পগুলো মানুষের জীবন থেকেই নেয়া। তেমন ই একজনের জীবনের অপূর্ণ ভালোবাসার গল্প শুনাবো আজ আপনাদের ।)
"এই গল্পের নাম নাহয় না-ই দিলাম"
ছেলেটা খুবই লাজুক। ছোটখাটো গড়ন, ফর্সা গায়ের রং, চেহারা ও সবাই বলে ভালো। তার ক্লাসের সবার তুলনায় দেখতে ছোট। নাম তার রাইয়ান। ছাত্র হিসেবে প্রথম সারির ই বলা চলে। মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে তাই পড়ালেখাকে গুরুত্ব দেয় বেশি। স্কুল, কোচিং, বাসা, টিভি, খাওয়া, ঘুম এ নিয়েই ছিল তার জীবন।
যখন ঘটনার সূত্রপাত তখন রাইয়ান পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। জীবনের প্রথম বোর্ড পরীক্ষা সামনে পরিবারের সবাই তার ফলাফলের দিকে তাকিয়ে। সেই চাপ মাথায় নিয়ে পড়ালেখা শুরু। ভালো ফলাফলের জন্য তার বাবা তাকে কোচিং এ দেন। ইংরেজির জন্য সে স্কুল এর এক স্যার এর কাছে ভর্তি হয়। কিন্তু সমস্যাটা হয় সময় নিয়ে। সে যেই সময় এ পড়তে যেতো সেটা ছিল মেয়েদের ব্যাচ কারণ ছেলেদের ব্যাচ এর সময় তার স্কুল এ ক্লাস চলত। গল্পের শুরুতেই বলেছিলাম ছেলেটা খুব ই লাজুক প্রকৃতির। বিশেষত মেয়েদের সামনে গেলেই তার শরীরে কাঁপুনি শুরু হয়ে যায়। এতো মেয়েদের মাঝখানে সে এবং তার সাথে শুধুমাত্র আর একটি ছেলে পড়ত। লজ্জায় সে পড়ায় মন বসাতে পারতো না। তার খালি মনে হতো মেয়েগুলো তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। এটাই যে তার জীবনে শাপে বর হয়ে আসবে সেটা তার জানা ছিল না।
সেই মেয়েদের মাঝেই ছিল আমাদের গল্পের দ্বিতীয় চরিত্র নীলা। নীলাও একই স্কুল এ পড়ত। রাইয়ান কেও সে প্রথম স্যার এর ব্যাচ এই দেখে।
এবং প্রথম দেখায় রাইয়ান কে তার ভালো লেগে যায়। ছোটখাটো পিচ্চি একটা ছেলে। তার লাজুক দিক টাই তার সবচেয়ে ভাল লাগত। স্যার যখনই রাইয়ান কে প্রশ্ন করতো এবং সবাই ওর দিকে তাকাতো তখন নীলা দেখত লজ্জায় বেচারার ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে। তার খুব হাসি পেত এটা দেখে। ছেলে মানুষ হয়েও এতো লজ্জা পেলে চলে নাকি? সে এটাই ভাবত। এবং মনে মনে ভাবত ছেলেটাকে যদি সে তার মনের কথা বলে তাহলে ছেলেটা কি বলবে।
অবশেষে নীলা তার বান্ধবীদের রাইয়ান কে ভালো লাগার কথা বলে। এবং এদিকে রাইয়ান ও বিষয়টা কিছুটা আঁচ করতে পারে। অবশেষে একদিন তাদের দেখা হয়, রাইয়ান জানত না বিষয়টা, নীলা প্ল্যান করে ওকে ধরিয়ে আনে। এদিকে নীলা কে দেখে রাইয়ান এর অবস্থা খুবই খারাপ। সে এতোটা বিব্রত হয় এবং লজ্জা পায় যে এক দৌড় এ বাসায় চলে যায়। এরপরে তাদের আর দেখা হয় না সামনাসামনি কথা বলা তো আরো দূরের কথা। আমাদের রাইয়ান এর ও যে নীলা কে ভালো লাগত শুরুর দিন থেকে এই কথাটা কেউ জানত না। মনের মধ্যে সে অনুভূতি গুলো কে পুষে রাখে।
এদিকে অনেক দিন পার হয়ে যায়। রাইয়ান ভেবেই নেয় যে তার প্রতি নীলার জে ভালোলাগা কাজ করেছিল তা নিতান্তই কৈশোরের কিছু বিচ্ছিন্ন আবেগ। তাদের দুজনের স্কুল পাশাপাশি ছিল এবং একই ক্লাসের হওয়ায় ছুটি ও হতো একই সময়। রোজ ছুটির পর সব মানুষের ভিড়ে তার চোখগুলো নীলা কেই খুঁজে বেড়াত। সে জানত না এর কারণ। তার চোখদুটো সবসময় বিফল হয়নি অনেকবার ই তার চোখের খাঁচায় নীলা ধরা পড়ে এবং নীলা কে দেখতেই তার মধ্যে কিছু একটা কাজ করত, সে অনুধাবন করতে পারত না কেনো এমনটা হয়। "এটাই কি ভালবাসা? না, হয়তোবা এটা এই বয়সের ভ্রম। না, বয়সের ভ্রম হলে তো এতদিনে নীলা কে আমার মনে থাকার কথা না। অনেক মেয়েই তো এর মাঝে আমাকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়। আমি কেনো গ্রহণ করি নি? নীলার জন্য? না না। নীলার তো আমাকে মনে নেই বোধ হয়।" এসব এ চলতে থাকে রাইয়ান এর মাথায়। নীলাও কিন্তু রাইয়ান কে ভুলে যায় নি। তার চোখ দুটোও হাজার মানুষের ভিড়ে রাইয়ান কে খুঁজে বেড়ায়।
এভাবেই তাদের মধ্যেকার দূরত্ব বেড়ে যায়। বহু বছর হয়ে যায় তাদের দেখা হয়না। সপ্তম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় রাইয়ান স্কুল ছেড়ে আবাসিক স্কুল এ চলে যায়। কিন্তু ছুটি তে যখন ই আসত তার নীলার কথা মনে পড়ে যেতো। বিভিন্ন বাহানায় সে আগের স্কুল এ যেতো এবং সেই শত মানুষের ভিড়ে নীলা কে খুঁজত। কিন্তু কেনো খুঁজত তা তার কাছেও অজানা ছিল। তাকে না পেয়ে সে বিষাদগ্রস্থ মনে বাড়ি ফিরে যেতো। আবার চলে যেতো সেই আবাসিক স্কুল এ। এভাবে সপ্তম শ্রেণী ও গেলো। ক্লাস ৮ এ এক ছুটিতে রাইয়ান তার অভ্যাসমতো আবারো যায় স্কুল এ। কিন্তু এবার তার চোখদুটো বিফল হয়নি সে নীলার দেখা পায় এবং নীলা কে দেখামাত্রই তার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। সেই একনজর দেখাতেই তার মনে হয় সময় যেন থমকে দাঁড়ায় এই দেখা যাতে এ জীবনে শেষ না হয়। কিন্তু তা কি আর হয়? তবুও এই স্মৃতি তার মনে গেথে যায় এক অমোচনীয় স্মৃতি হিসেবে।
এদিকে নীলা ও রাইয়ান এর কথা প্রায়ই ভুলতে বসে। ধরে নেয় ছোটবেলার আবেগ ই হয়তোবা।ভালোলাগা, ভালবাসা নয়। কিন্তু ক্লাস ৮ এ থাকতে যেদিন সে রাইয়ান কে দেখে সে আর চোখ ফিরাতে পারেনা তার দিক থেকে। যখন সে রাইয়ান এর পাশ দিয়ে যায় আচমকাই তার দুচোখ বেয়ে অশ্রুধারা পড়া শুরু হয়। এ যে ভালোলাগা নয়, এ তো ভালবাসার অশ্রু; সে বুঝে ফেলে। এরপর থেকে তার দুচোখ যেন আর তার বসে নেই। রাইয়ান এর কথা মনে পড়লেই তার দুচোখ অশ্রুসজল হয়ে পড়ে।
রাইয়ান দিনগুলো ও স্বাভাবিক ভাবে কাটতে থাকে। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ও সে তেমনটা ব্যবহার করত না। ক্লাস নাইনে থাকা অবস্থায় একদিন সে হটাত ফেসবুক এ দেখে এক মেয়ে তাকে একটা মেসেজ দিয়েছে, তার সাথে নাকি কিছু কথা আছে। রাইয়ান তার জবাব দিলে সে বলে সে নীলার বেস্ট ফ্রেন্ড এবং নীলা রাইয়ান কে ভালবাসে সেই প্রথম দেখা থেকেই তাই আজও তার অপেক্ষায় আছে নীলা। এটা শুনে রাইয়ান এর নীলার প্রতি ভালবাসা আরো বেড়ে যায় কিন্তু মন টাও একটু খারাপ হলো। কারণ সে প্রেমের সম্পর্কে জড়াতে চায় না কারণ তার ভাষ্যমতে প্রেমের সম্পর্কে সবসময় টানাপোড়ণ এর সৃষ্টি হয় এবং এ থেকেই সম্পর্কও নষ্ট হয় বন্ধুত্বও নষ্ট হয়। সে নীলা কে কোনোক্রমেই হারাতে চায় না। কিন্তু তার সাথে ভালবাসার সম্পর্কে জড়ানোর লোভটাকেও সে সংবরং করতে পারছিল না। কারণ এতদিন যাকে ভালোলাগার কথা সে বলতে পারেনি আজ সে যখন নিজ থেকে এসেছে কিভাবে সে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে?
-to be continued...
কন্টেন্ট সোর্স এখানের লিখাটিও যদি আপনার হয়ে থাকে তাহলে সেটির উপযুক্ত প্রমাণ দিলে ভালো হয়। অন্যথায় এটি প্ল্যাগারিজম, যা হাইভে নিষিদ্ধ।