কয়েদি নম্বর-১১১

in BDCommunity4 years ago

দুদিন পরেই জেল থেকে ছাড়া পাবো। কিন্তু এই সংবাদে আনন্দিত নই আমি। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানেই কাটিয়ে দিলাম। কারাবন্দী জীবন অনেক কিছু শিখিয়েছে।

prison-553836_1280.webp
source

তখন ৬ বছর হবে হয়তো।আমার বন্ধু রাফির সাথে ঝগড়া হয়েছিল পরদিন শুনতে পেলাম ওকে কে জানি মেরে ফেলেছে। ওর বাবা বিকেলে পুলিশ নিয়ে আমাদের বাসায় আসে ছিলো। আমি কিছু বুঝতে পারার আগেই পুলিশ আমাকে ওদের সাথে করে নিয়ে যায়। আর বার বার জিজ্ঞেস করছিল কিভাবে আমি রাফিকে হত্যা করেছিলাম?

সেদিন বিকেলে রাফির সাথে ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আমি সন্ধ্যার আগেই বাড়িতে চলে এসেছিলাম ওকে কে হত্যা করছে সেই বিষয়ে আমার কোন ধারণা নাই। এদিকে দিনের পর দিন কেটে যায় কেউ আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে নি। শনিবার ১০ টার দিকে বাবা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। আমি বললাম তোমরা আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও । এখানে থাকতে আমার ভীষণ ভয় করে। বাবা বলল কিছু টাকা জোগাড় হলেই উকিল ধরে আমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাবে। বাবার কথা শুনে শান্তি পেলাম।

এখানে আমার মত অনেকেই আছে সারারাত ধরে তাদের জীবনের গল্প শুনেছিলাম। ভোর হতে এক পুলিশ এসে বলল আজ আমাকে কোর্টে নিয়ে যাবে। সকাল ৮ টায় ওনারা আমাকে গাড়িতে করে নিয়ে যায়। এদিকে মনে মনে ভাবছি আজই বাড়ি ফিরতে পারব। আমার নাম ডাকলে পুলিশ আমাকে জজের কাছে নিয়ে যায়।আমার পক্ষের কোনো উকিল না থাকায় আবার আমাকে জেলখানায় আসতে হয়।

তখন চোখে সবকিছুই ঝাপসা দেখছিলাম। বাড়িতে ছোট বোন আছে এখন কার সাথেই খেলছে, মা আমাকে কোনদিনই ভালোবাসতো না তবু কি আমার কথা মনে পড়ে না। সৎ ছেলে বলে কি আমায় এখানে দেখতেও আসেনা। কত কথাই মনে পড়ছিল, আমার কান্নার আওয়াজ কেউ শুনতে পাচ্ছে না। দুইটা রুটি খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। যখন কোন কয়েদির আত্মীয়-স্বজনরা দেখা করতে আসত এক লাফে দাঁড়িয়ে পড়তাম এই বুঝি আমার সাথে কেউ দেখা করতে এসেছে। মাসের পর মাস পেরিয়ে যাচ্ছে আর আমার মুক্তি পাবার আশাটাও ভেঙ্গে যাচ্ছে। এই কারাবন্দি জীবনকে ধীরে ধীরে মেনে নিতে শিখলাম।

নতুন জামা পেলাম সাথে নতুন পরিচয় কয়েদি নম্বর ১১১। কেউ ডাকলে কয়েদি নম্বর ১১১ বলেই ডাকে। আমি কিছু বেতের কাজ করতে লাগলাম অল্প টাকা পেলাম সেটা দিয়েই ভালোই দিন যাচ্ছিল। একদিন ডাক পড়ল কয়েদি নম্বর ১১১ আছে?
তোমার সাথে কেউ দেখা করতে এসেছে। আমি অবাক হয়েছিলাম এতবছর পর আমার কথা কার মনে পড়ল। যাইহোক দেখা করতে গেলাম আরে একটা মেয়ে মানুষ আসছে আমার সঙ্গে দেখা করতে। পরে বুঝতে পারি, এইটা আমার ছোট বোন আজ অনেক বড় হয়ে গেছে। আমারে দেখে কাঁদতে লাগছিল আমিও কষ্ট আড়াল করতে পারিনি।

বোন আমারে দেখেই জিজ্ঞেস করলো -আমি ভালো আছি কি না? আর বলল তিন বছর আগে বাবা মারা গেছে অনেক কষ্টে আমার খোঁজ নিয়ে এখানে এসেছে। আরও বলতে লাগলো আমি ছাড়া পেলে ওর জন্য একটা নতুন জামা কিনে নিয়ে যেতে হবে।এই মাসে আমরা একবারে মামা বাড়িতে চলে যাব। তুমি আমার সাথে ওখানে দেখা করতে আসবে। আমি বললাম আজ তুই যা তোর সাথে আমি অবশ্যই দেখা করতে যাব। চোখের পানি মুছে দুপুরে খেতে গেলাম।

এই ২০ বছরে শুধু বাবা আর ছোট বোন আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল। আজ যখন শুনলাম দুদিন পর আমি জেল থেকে ছাড়া পাব। আমার কয়দি বন্ধুরা খুশি হলেও আমার মনে খুশি লাগছে। দিন পরে ছাড়া পেয়ে কোথায় যাব? কার কাছে গিয়ে ঠাঁই পাব। সেগুলো চিন্তা করতে আর ভালো লাগছে না। এর থেকে ভালো শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এখানেই থেকে যাই।

আমি নিহা। বিবিএ ৩য় বর্ষে পরছি।লেখালেখি করতে ও ঘুরতে পছন্দ করি।

20200608_115836-3.gif

Sort:  

Congratulations @niha! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You got more than 50 replies. Your next target is to reach 100 replies.

You can view your badges on your board And compare to others on the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

To support your work, I also upvoted your post!

Support the HiveBuzz project. Vote for our proposal!

This post earned a total payout of 12.134$ and 6.067$ worth of author reward that was liquified using @likwid.
Learn more.

আমার লেখাটি যদিও কাল্পনিক কিন্তু এটাই সত্যি অনেক নিরিহ মানুষদের কষ্ট পেতে হয়