কয়েক দশকের ব্যবধানে আমরা হারিয়ে ফেলেছি হাজারো স্মৃতিময় দিনগুলো । সেকাল আর একালে তফাৎ চোখে পড়ার মতো ।
আগে বাড়িতে টিভি থাকলেও ডিশের লাইন ছিল না তাই বাবা এন্টেনার ঘুরাতে ঘুরাতে বলত দেখ মা কোন চ্যানেল আইছে নাকি? আর শুক্রবার এলেই দুপুর ২:৩০ মিনিটে টিভির সামনে বসে সবাই মিলে বিটিভিতে সিনেমা দেখতাম আর এখন সবার ঘরে টিভি আর ডিশের লাইন থাকলেও কেউ আর স্বদেশী নাটক সিনেমা দেখতে আগ্রহী নয়। সবায় ব্যস্ত হিন্দি সিরিয়াল দেখতে ।
সত্যি সেকালের দিনগুলো অনেক ভালো ছিল তখন বাবাকে চুপিচুপি বলতাম অফিস থেকে ফেরার সময় আমার জন্য শনপাপড়ি আর খাজা আনতে। এখন দোকানে এগুলো পাওয়া মুশকিল । আর যখন বাড়ির পাশ দিয়ে ঘন্টা বাজিয়ে আইসক্রিম ওয়ালা মামা যেত আমি দৌড়ে গিয়ে মায়ের কাছে বায়না ধরতাম আমাকে একটা আইসক্রিম নিয়ে দেওার জন্যতখন আইসক্রিমের দাম ২ থেকে ৫ টাকা ছিল ।
তবুও মা আইসক্রিম নিয়ে দিতে চাইতো না ।তাই তখনি কান্না করতে লাগতাম , যতক্ষণ অব্দি না মা আইসক্রিম দিয়ে দিত ততক্ষণ কান্না থামাতাম না।আর এখন রাস্তার অলিগলিতে খুঁজলেও কখনো সেই আইসক্রিম ওয়ালা মামাদের দেখতে পাওয়া যায় না ।
আর বিকেল হলেই মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাঠে গিয়ে কানামাছি, লুকোচুরি খেলতাম তখন মাঠের অভাব ছিল না এখন দালানকোঠার ভিড়ে মাঠ খুঁজে পাওয়াই যায়না।আমার এখনো মনে আছে, একটা তারের দুই প্রান্তে দুটো ছোট বক্স লাগিয়ে আমি আর বোন টেলিফোন টেলিফোন খেলতাম আর মাথায় কলা গাছের পাতা দিয়ে চুল বানিয়ে পড়তাম ।
নারিকেল পাতা দিয়ে হাত ঘড়ি বানিয়ে পড়ার কথা কি মনে পড়ে?
তখন হয়তো ব্রান্ডের ঘড়ির প্রচলন ছিল না কিন্তু পাতার ঘড়ি পরেই সারাদিন ঘুরে বেড়াতাম ।আর একালের ছেলেমেয়েরা ঈদের সময় হরেক রকমের ঘড়ি কিনে ।সে সময় টিফিনের টাকা জমিয়ে পটেটো চিপস কিনতাম তখন চিপস এর সঙ্গে স্টিকার পাওয়া যেত ।আর কিছু পয়সা দিয়ে চকলেট কিনে নিতাম ।সেই কয়েক পয়সা দামি চকলেটের স্বাদ এখন পাওয়া যায় না।
একালের বন্ধুরা অনেক সামাজিক মাধ্যমে ভালোবাসা সহানুভূতি দেখায় কিন্তু অফলাইনে তাদেরকে খুঁজে পাওয়া যায় না আর আগে একদিন মাঠে খেলতে না গেলেই বন্ধুরা বাসায় এসে খোঁজ নিতো কি হয়েছে?সেসময় ল্যাপটপ স্মার্টফোন কিছুই ছিল না কিন্তু কাছে ছিল প্রিয় মানুষেরা আর এখন কোন দরকার হলে কাউকে কল করলেই বলে উঠে -আমি ব্যস্ত আছি তুই পরে কল কর।
সেকালের মায়েরা বোধহয় শিশুদের প্রতি অনেক যত্নশীল ছিল রাতে ঘুম পাড়ানি গান গেয়ে শিশুকে ঘুম পাড়াতো । আমি বলছিনা একালের মায়েরা শিশুদের যত্ন করে না ।মায়ের জন্যই আমরা পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছি কিন্তু মাঝেমধ্যে কিছু ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটে থাকে আজ কালের মায়েরা শিশুকে ইউটিউবে ভিডিও দেখিয়ে ঘুম পাড়ায় ।ভাবলে অবাক লাগে ,সেকালে প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা ছিল না কিন্তু একালে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমরা অনেক বদলে গেছি আর বদলে গেছে আমাদের মন মানসিকতা ।এখন দিনে রাতে ফেসবুকে ব্যস্ত থাকি কিন্তু আপনজনদের খোঁজখবর নেওয়ার সময় হয় না ।
এ কালে কিছু সাফল্য অর্জন করলেও হেরে গেছি আমরা নিজের কাছে ।তাই পুরনো দিনের কোন কিছুই আমরা ধরে রাখতে পারিনি ।এজন্য নতুন প্রজন্মকে সেকালের গল্প বলা ছাড়া আমাদের কাছে আর কিছু নেই ।এভাবেই দশকের পর দশক চলে যাবে কিন্তু সেই ফেলে আসা দিনগুলো আমরা কখনোই ফিরে পাবো না ।সেগুলো শুধু স্মৃতির পাতায় লেখা থাকবে । তাই চেষ্টা করব একালের ভালো-মন্দ স্মৃতিগুলো কে আঁকড়ে ধরতে যেন পরবর্তী প্রজন্ম একালের কথা স্মরণ করে ।
বেশ কিছুদিন ধরে আমি সেকালে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা মনে করছিলাম যেগুলো একালে খুঁজে পাওয়াই মুশকিল । তাই আজ আমি সেকাল আর একাল এর নিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি আমার মনে হয় আপনাদের ও সেকালের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে ।
কালের ব্যবধানে কত কিছু হারিয়ে যায় ..ছোটবেলায় আমিও নারকেল পাতার ঘরে চশমা বানিয়ে কত খেলেছি..
হ্যা সে সময় ছোট ছোট জিনিসেই আমরা আনন্দ খুজে পেতাম।
সময় পাল্টে দেয়া অনেক কিছু
সমাজ গতীশীল এটাই সমাজের নিয়ম।সময়ের সাথে সাথে তা পরিবর্তন হবে সেটাই স্বাভাবিক।কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে জনসংখ্যা এবং প্রযুক্তি চক্রবৃদ্ধিহারে বেড়েছে তাই হঠাৎ করে এই পরিবর্তন টা আমরা উপলব্ধি করতে পারি।আমাদের প্রতিনিয়ত যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন কিছু শিখতে হচ্ছে, চাইলেও না চাইলেও।
লেখাটা শেয়ার করবার জন্য ধন্যবাদ।অনেক কিছু মনে হয়, মনে পড়ে যায়।
কষ্ট করে লেখাটা পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
এখন সব কিছুই স্মৃতি। ২০০০ সালের পরে জন্ম নেওয়া ছোট ভাই বোনেরা হয়তো এসব বুঝবে না।
তা তো অবশ্যই।