অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস এর গল্পে আমি!

in BDCommunity3 years ago

source


একটা মেয়ে বয়স খুব একটা বেশিনা।এই যে ধরেন ক্লাশ ফাইভে সবে মাত্র পা দিলো।আর বয়সটা ও সবেমাত্রই দশ বছর।তার পরিবার বলতে শুধু বাবা,মা,ছোট এক ভাই। এখন আরো এক ভাই, বোন হয়েছে তবে তখন ছিলোনা। মেয়েটার নামটা হলো নওরীন।নওরীন এর পরিবার ছোট হলেও জ্ঞান দেওয়ার মতো লোকের সংখ্যা ঢের! এদিকে গেলেও জ্ঞান, ওদিকে গেলেও জ্ঞান অর্থাৎ জ্ঞান দেওয়ার মানুষের কোনো শেষ নেই,অভাব ও নেই।তো এখন মূল গল্পে আসি,
নওরীন সবে মাত্র ক্লাশ ফাইভের নতুন বই নিয়ে বাসায় ঢুকলো।মনে খুব আনন্দ,এক্সাইটমেন্ট আর নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মেয়েটার মন খুশিতে হেলেদুলে উঠছে।ঠিক একটু পরেই এক আংকেল বাসায় ঢুকলো আর ঢুকেই বললো, " কিরে নওরীন!!ক্লাশ ফাইভের বই আনছো নাকি?আমার ছেলে তো এইবার সিক্সে উঠলো।জানই তো তোমার ভাইয়া ফাইভে এ প্লাস পাইছে।তুমি কি পাবা? কি মনে হয়?পাবা নাকি?ভাইয়াকে ফোন করিও,কেমনে পরছে জিজ্ঞেস করিও।এরপরের ডাকটা দিলো আম্মুকে," ভাবি নওরীনকে ভালো করে পরান। এতো সোজা না ফাইভে এপ্লাস পাওয়া। " ঠিক সেই মূহুর্তেই নওরীনের মনটা এই এতোটুকু ছোট হয়ে গেলো। বইটা হাতে নিয়েই মনে হলো " এতো কঠিন? " যে যাই হোক।ওই কাহিনী শেষ। এরপর আস্তে আস্তে ক্লাশ ফাইভের পিএসসি পরীক্ষা সামনে এগিয়ে আসছে আর নওরীনের ছোট মনের সঙ্কাটাও বাড়তে লাগলো।
পরীক্ষার আগে পর্যন্ত যে ই বাসায় ঢুকতো তার প্রথম কথাই ছিলো, " নওরীন না এবার পিএসসি দিবে?কি করবে আল্লাহ জানে, আমার অমুক তো এপ্লাস পাইছে।আমার তমুক তো এপ্লাস পাইছে।"আর ছোট নওরীনের পড়ার টেবিলে বসে মনে হতো "হয়তো আমি পারবো!!"এরপর আসলো পিএসসি পরীক্ষার আগের টেস্ট পরীক্ষা। আর তার ফলাফলটাও হলো খুব বেশি বাজে মানে অতিরিক্ত বাজে একদম। টেস্টে নওরীনের মার্কস ছিলো বাংলা তে এ প্লাস,ইংরেজিতে বি,অংকে এ, ধর্মে এ প্লাস,সমাজে এ+, বিজ্ঞানে সি!
বিজ্ঞানে সি গ্রেড!!অংকে এ গ্রেড!! এ কথাটা বা আকর্ষণিয় খবরটি নওরীনের পরিবারের চৌদ্দ গুষ্টি হতে চৌদ্দ মিনিটের বেশি হয়তো লাগেনি।
এরপর নওরীনের আম্মুর ফোনে আসতে থাকলো একের পর এক ফোন!কিছু কিছু উপদেশ আমি একটু লিখছি,

  • হেলোও,ভাবি।নওরীনকে এই বছর আর পিএসসি দেওয়াইয়েন না। এপ্লাস তো পাবে না।সামনের বছর পরীক্ষা দেওয়ান।
  • হেলোও মামি, নওরীন নাকি টেস্টে অনেক খারাপ রেজাল্ট করছে!সারাদিন কি পড়ালেখা করে না নাকি!আমার আপুর মেয়ে তো গত বছর বৃত্তি পাইলো।
  • হেলোও ভাবি।আগেই বলছিলাম ও পারবেনা। আরে খুব কঠিন তো পিএসসি।
    এরপর আরো অনেক অনেক অনেকি কিছু।এরপর নওরীনের আম্মু আস্তে করে নওরীনের রুমে ঢুকলো।নওরীন তখন বিছানায় শুয়ে বালিশে মাথা চাপ দিয়ে কান্না করছিলো তখন।নওরীনের আম্মু আস্তে করে এসে মেয়ের পাশে বসলো।নওরীনের মন তখন ভয়ে আকুঁপাকুঁ হয়ে আছে।ভাবতে থাকলো, " হয়তো আম্মু মনে হয় এখন অনেক মাইর দিবে! " আর সাথে সবার কথা গুলো মনে পড়ছে আর খুব কান্না করছে কারণ সবাই যথেষ্ট অপমান করেছে। কিন্তু তার আম্মু পাশে বসার একটু পর নওরীনের মাথায় হাত দিলো এরপর হাত দিয়ে বলতে লাগলো, " আম্মু কান্না করতেছ কেনো?কান্না করার কি আছে?এখনো অনেক সময় আছে তো পড়ার আর এইটা কি কোনো পরীক্ষা হইলো! আরে ধুরু,উঠো তো উঠো। নাইলে এখন মাইর দিবো।দেখি উঠো, এখন থেকে অনেক ভালো করে পড়বা কেমন?নওরীন বিছানায় উঠে বসে হাত উল্টিয়ে চোখ মুছে নিচের দিকে তাকিয়ে বললো , " হু "।
    নওরীনের আম্মুর কথাগুলো শুনার পর থেকে তার মাঝেও অদ্ভুতভাবে কোনো আত্মবিশ্বাস কাজ করতে লাগলো।মনে হতে লাগলো সে পারবে, অবশ্যই পারবে।এরপর এভাবে দিন কেটে যাচ্ছে আর সাথে পরীক্ষার দিন ও ঘনিয়ে আসতে লাগলো। এরপর যথা নিয়মে ও সময়ে পরীক্ষা হতে লাগলো।একদিন পরীক্ষা শেষ ও হয়ে গেলো।এরপর এলো রেজাল্টের দিন!!
    নওরীনের মনের অবস্থা তো খুব খারাপ।চিন্তায় তার মুখটা যেনো শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।অনেকে তার আম্মুকে ফোন দিয়ে বারবার রেজাল্ট জানতে চাচ্ছে আর বক্তব্য হিসেবে বলছে, " ভাবি মনে হয়না ও এপ্লাস পাবে। এর আগের রেজাল্ট যা খারাপ হইলো।" এরপর একটু পরেই রেজাল্ট দিলো।
    রেজাল্ট হলো,
    বাংলাতে এ প্লাস
    ইংরেজিতে এ প্লাস
    অংকে এ প্লাস
    বিজ্ঞানে এ প্লাস
    ধর্মে এ প্লাস
    সমাজে এ প্লাস
    সম্পূর্ণ স্কুলে দশম তম।

এরপর সবাই ফোন দিয়ে রেজাল্ট শুনে বলতে লাগলো,

  • সোজা তো পিএসসি!পড়লেই পারা যায়।
  • ও ভালো ভালো,এপ্লাস পাইছেনা আচ্ছা রাখি।
  • ও আচ্ছা ভালোই পাইছে।

আসলে মানুষের আত্মবিশ্বাসটা খুব বড় ব্যাপার।সেই ছোট মনের ছোট আত্মবিশ্বাসটার কথা এখনো মনে পরলে নওরীন মনে মনে হেসে উঠে আর ভাবে পৃথিবীর মানুষেরা খুব অদ্ভুত আর নওরীনের আত্মবিশ্বাসটাও তার কাছে অদ্ভুত।

এখানেই শেষ করছি গল্পটা।আর এটা গল্প হলেও সত্যি আর গল্পের ছোট নওরীনটাই এখনের বড় নওরীন মানে এই আমিই!
যদিও গল্পটা সামান্য তবে এর ভেতরকার উপলব্ধি বা ব্যাপারটা একদম ই স্পেশাল,আমার কাছে স্পেশাল।


দুঃখিত আমার চলমান গল্পের পর্ব আজ লিখিনি।একটু ব্রেক নিলাম আর ভাবলাম আমার জীবনের ছোট একটা গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
ধন্যবাদ সকলে আমার লেখাটি পড়ার জন্য।
লিখাঃ নূসুরা নূর।


Sort:  

Congratulations @nusuranur! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You published more than 50 posts.
Your next target is to reach 60 posts.

You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

To support your work, I also upvoted your post!

ঘটনাটি রিলেট করতে পারছি বেশ ভালোভাবেই। পিএসসি-জেএসসিতে আশেপাশের মানুষের প্রেশারের কারণে যতটুকু ইফোর্ট দিয়েছিলাম তা যদি সঠিক জায়গায় প্রয়োগ করতাম তাহলে আজ নিজের স্কিল, জ্ঞ্যানের ঝুলিতে আরো নতুন নতুন জিনিস যুক্ত হতো।

আসলেই ভাই।কি না কি ভাবতাম।
আশে পাশের এরাই এর কারণ
এখন বুঝি।