শিশুর প্রতি এ কেমন আচরণ, দেখে হচ্ছে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ!

in BDCommunity4 years ago (edited)

আজ চোখের সামনে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক একটি ঘটনা শেয়ার করবো। প্রতিদিনের ন্যায় আজকেও বের হয়েছি টিউশন পড়াতে। রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে এক বন্ধুর সাথে দেখা। একটা জরুরি বিষয়ে কথা বলতে কিছুক্ষণ দাড়ালাম। রাস্তার এক পাশে ছিল একটি হোটেল। হোটেল থেকে একটু দূরে বেঞ্চে বসে সম্ভভত পরাটা আর ডাল খাচ্ছিলো আঠারো বছর বয়সী দু'জন যুবক। দু'জনকে দেখে ভদ্র পরিবারের মনে হলো। তারা খাচ্ছে আর কথা বলছে।
pexelsjuanpabloserranoarenas827993.jpg

হঠাৎ একটি শিশু এসে তাদের কাছে হাত পেতে বললো, ভাইয়া একটু খেতে দিবেন! খুব ক্ষুধা লাগছে আমার। শিশুটির বয়স হবে আনুমানিক সাত বছর। শিশুটির পরনে ছিল একটা ছেঁড়া প্যান্ট ও হাপ হাতা গেঞ্জি। হাটুর দিকে পেন্টের হালকা ছেঁড়া অংশ। গায়ের কাপড়ে বেশ ময়লা ছিল। আমি আমার বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম আর শিশুটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম।

শিশুটি খেতে চাওয়ায় দু'জনের একজন একটা লাত্থি দিয়ে ফেলে দিলো শিশুটিকে৷ এটা দেখার পর আমার ভীষণ রাগ হলো কিন্তু দ্রুত টিউশনে যাবো তাই আর তাদের সাথে কথা বলতে চাইনি। কিন্তু তাদের মুখের ভাষা খুব বাজে ধরনের ছিল। লাত্থি তো দিলোই৷ সাথে আরো বললো, "তোদের মতো হারামজাদা ছেলেদেরকে তোদের মা জন্ম দিয়ে রাস্তায় ছেড়ে দেয় ভিক্ষা করে খাওয়ার জন্য। ব্যাটা ভাগ এখান থেকে নাহলে উঠলে তোকে অনেক পিটাবো।"

এসব শুনে আমার বন্ধু খুব রেগে গিয়ে ওদের মারতে চাইলো। আমি তাকে শান্ত করলাম। শিশুটিকে ডাকলাম। জিজ্ঞেস করলাম, "বাবু কি হয়েছে তোমার? তোমাকে মারছে কেনো?"

শিশুটি উত্তর দিলো, "আঙ্কেল আমি একটু খেতে চাইছি। তাই আমাকে মারছে। আঙ্কেল আমার অনেক ক্ষুধা লাগছে। কাল (গতকাল) দুপুরে খেয়েছি। আর খাইনি। বাসায় রান্নাও হয়নি।" মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

ছেলেটির নিকট জানতে পারলাম, তার বাবা একজন ভ্যানচালক। আমাদের শহরে ভ্যানে তেমন যাত্রী উঠে না। ভ্যানে উঠলে সম্ভবত ক্ষেত ভাববে এই জন্য হয়তো ভ্যানের পরিবর্তে রিক্সায় উঠতে বেশি পছন্দ করে মানুষ। তারপরেও ভালোই চলছিল তাদের জীবন। সারাদিন দু'বেলা দুমুঠো ভাত খেতে পারতো। সমস্যা হয়েছে অন্য জায়গায়।

সপ্তাহ খানেক আগে তার বাবার ভ্যানের সাথে একটি ইজিবাইকের এক্সিডেন্টে হয়। এতে তার বাবা পায়ে প্রচণ্ড আঘাত পায় এবং ভ্যানের অনেকাংশ ক্ষতি হয়। তাই একসপ্তাহ হতে কাজে যেতে পারেনি৷ গরীব মানুষ দিন আনে দিন খায়। জমা কিছু টাকা ছিল সেটা হয়তো এই ক'দিনে শেষ হয়ে গেছে।

শিশুটিকে জিজ্ঞেস করলাম, কি খাবা তুমি? বললো, পরাটা, ডাল খাবো। ভাবলাম শিশুটির হাতে টাকা দেই। আবার ভাবলাম যদি এই টাকা না খেয়ে নষ্ট করে ফেলে! তাই আর হাতে টাকা দিলাম না। চলো হোটেলে। আমিও নাস্তা খাইনি, একসাথে খাবো। বন্ধুকে বিদায় দিলাম।

শিশুটি বললো, আঙ্গেল আমি এখানে খাবো না। বাসায় আমার ছোট বোন আছে। সে-ও না খেয়ে আছে। আমার বোনের জন্য নিয়ে যাবো। আমাকে দুইটা কিনে দেন। এটা শুনে শিশুটির প্রতি খুব মায়া তৈরি হলো। এই বয়সে অনেক শিশু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে, আর এই শিশুটি ভাবছে তার ছোট বোনের কথা!

অন্যদিকে ভাবছি বেঞ্চে বসা দু'জন ছেলের কথা যারা নিজে খেয়ে ভুলে গেছে অন্যের কথা। যদি সুন্দরভাবে বলতো তাহলে শিশুটি আজ আর কষ্ট পেতো না। প্রথমত যুবক দুটি শিশুটিকে খেতে দিলো-ই না। তার উপর হারামজাদা, মা-বাবার দিকে ইঙ্গিত করে কিছু কটু কথা উপহার দিলো। এটাই কি ছিল তাদের পারিবারিক শিক্ষা?

তাদেরকে আর কিছু বললাম না৷ বাবা-মা, ও দুই ভাই-বোনের পর্যাপ্ত নাস্তা নিয়ে দিয়ে শিশুটিকে বাসায় যেতে বললাম। তারপর চলে যাই সোজা টিউশনে।

প্রতিবিছর বিয়ের অনুষ্ঠানে কত হাজার-হাজার টাকার খাবার নষ্ট করে মানুষ, ফেলে দিতে হয় অনেক খাবার। অবশ্য অনুষ্ঠানের বেচে যাওয়া খাবার অনেকেই পোশা প্রাণীদের খাওয়া দেন। এটা ভালো কাজ। এখানে অন্তত অপচয় হয় না। কিন্তু ডাস্টবিনে ফেলে দেয়ার পরিবর্তে পথশিশুদের ডেকে খেতে দেয়া হয় না। অনলাইন ডেইলি স্টার পোর্টালে দেখলাম, একদল লোক খিচুড়ি রান্না করে নদীকে উৎসর্গ করছে। এমন মূর্খতা আইয়্যামে জাহেলিয়াতকেও হার মানায়৷

আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা শিশুদের ধমক দিয়ে কথা বলে। শিশুর দ্বারা কষ্টসাধ্য শ্রম করিয়ে নেয়। একটু ভুল হলেই মারতে শুরু করে। আমাদের চোখের সামনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা দেখলেই মন খারাপ হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ আমরা চুপ থাকি।

সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছিলেন,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন, বাস্তবায়ন করার সুযোগ হয় নি তাঁর। মাত্র বাইশ বছর বয়সে জীবনের ইতি টেনেছেন। আমাদের সমাজে সুকান্তের মতো অগণিত তরুণ প্রয়োজন যারা তাঁর অঙ্গিকার বাস্তবায়ন করবে। বিশ্ব হবে শিশুদের বাসযোগ্য।

Photo is shared by www.pixel.com

Sort:  

Congratulations @ohabrizvi! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You published more than 10 posts. Your next target is to reach 20 posts.

You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP