অন্তহীন ভালবাসা

in BDCommunity4 years ago

টানা দুই বার এস এস সি পরীক্ষায় ফেল করেছি আমি। লজ্জায় আর তৃতীয় বার পরীক্ষা দিতে চাইনি। বাবা রাগ করে পড়া বাদ দিয়ে দোকানে বসতে বলছিলেন। আমাদের একটি স্টেশনারির দোকান ছিল। সেটার মাধ্যমেই আমাদের পরিবার চলতো। বাবার বয়স প্রায় ৭০। প্রায় অসুস্থ থাকেন। ইদানিং একটু বেশি অসুস্থ হয়েছেন। বাবার কথা মেনে নিয়ে দোকানে বসা শুরু করলাম।

pexelsphoto744667.jpeg

Image

রাশেদ ও আমি দু'জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমাদের শৈশবের খেলার সাথি ছিল হৃদিতা। পড়ালেখায় আমি তেমন ভালো ছিলাম না। তাই দু'বার ফেইল করে পড়ালেখাকে বিদায় দেই। কিন্তু তারা একসাথে একই কলেজে পড়ে। তাদের এইচএসসি পরীক্ষা হয়। দুজনে ভালো ফলাফল করে। আগে আমরা তিনজন একসাথে স্কুলে যেতাম। পড়ালেখা থেকে আমার ছিটকে পড়ার পর তারা দুজনে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যায়। হৃদিতা আমাদের দুজনের ভালো বন্ধু৷

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমি হৃদিতার বাসায় যেতাম। ছোট একটা অজুহাত বের করে হলেও তার সাথে দেখা করতে ভুল হতো না। তার সাথে দেখা করবো এবং একটু কথা বলবো। স্কুল জীবনে প্রায় চুপ চুপ করে ওকে চকলেট দিতাম। মাঝেমাঝে তার চুলের ঘ্রাণ নিতাম। কিভাবে যেনো তার প্রতি অনেক আসক্তি চেপে বসেছিল। বন্ধুত্বের সম্পর্ক কবে ভালবাসার সম্পর্কে পরিণত হয়েছে বুঝতেই পারিনি। শেক্সপিয়ার ঠিক বলেছিলেন, "নারী ও পুরুষের মাঝে কখনো কেবল বন্ধুত্ব থাকা অসম্ভব।"

আমি তাকে বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু ভেবেছিলাম। সে আমাকে বন্ধুর চেয়ে একটু বেশি ভেবেছিলো কি না তা আমি বুঝতে পারিনি। জানতেও চাই নি। আমি হৃদিতাকে পছন্দ করতাম এটা মা জানতেন। কিন্তু বাবার কারণে এই পছন্দের কথা মাটি চাপা দিয়ে রাখতে হয়েছিল। কারণ, হৃদিতার বাবার সাথে আমাদের আমাদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল।

হঠাৎ একদিন বাবা খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সেবার তাকে অনেক চেষ্টা করেও আর বাবাকে বাঁচাতে পারিনি আমরা। সংসারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার কাধে এসে পড়লো। বাবার জন্য মা অনেকটা ভেঙে পড়েছিলেন। তাই আমাকে যথেষ্ট শক্ত হতে হয়েছিল। ব্যবসার মাধ্যমে অনেক উন্নতি করতে পেরেছিলাম।

এখন রাশেদ ও হৃদিতা দুজনেই পড়ালেখা শেষ করেছে। রাশেদ একটি ব্যাংকে চাকরি করে। ভালো টাকা বেতন পায়। হৃদিতার সম্প্রতি চাকরি হয়েছে। এখন সে একটি স্কুলের শিক্ষক। আমি হৃদিতাকে পছন্দ করতাম এটা হৃদিতা কোনো এক সময় জানতে পেরেছিল। কারণ, আমি আমার আবেগের কারণে এমন কিছু আচরণ করেছিলাম যেটা প্রকাশ করে যে আমি হৃদিতাকে অনেক ভালবাসি। কিন্তু মুখ ফুটে আমি কোনোদিন বলতে পারিনি। সুপ্ত ছিল সেই ভালবাসা।

একদিন সকালে বিছানায় থাকা অবস্থায় মা আমার কক্ষে প্রবেশ করলেন। আমাকে ডাক দিলেন, বাবা একটু উঠো। কিছু কথা বলবো। আমি দ্রুত উঠলাম। জিজ্ঞেস করলাম, মা তোমার কিছু হয়েছে?

মা উত্তর দিলেন, না। আবার মাকে প্রশ্ন করলাম৷ কি হয়েছে মা? বলো আমাকে। মা বললেন, আজকে হৃদিতাদের বাসায় যাবো। তোর সাথে ওর বিয়ের বিষয়ে ওর বাবার সাথে কথা বলবো। এটা শুনে মনে এক প্রকার খুশি অনূভুত হয়েছিল। কিন্তু ভাবলাম হৃদিতা পড়ালেখা করা একজন শিক্ষিত মেয়ে, একটি স্কুলে চাকরি করে। তার বাবা আমার সাথে বিয়ে দিবেন কি? যেহেতু মায়ের ইচ্ছা তাই না করলাম না। নাহলে সকালবেলা মায়ের মন খারাপ করে দিতাম। বাবার মৃত্যুর পর মা অনেক কষ্টে নিজেকে ধরে রেখেছেন।

মা আমার মৌনসম্মতি পেয়ে সরাসরি চলে গেলেন হৃদিতাদের বাসায়। মা হৃদিতাদের বাড়িতে প্রবেশ মাত্রই দেখেন রাশেদ ও তার বাবা নাস্তার টেবিলে বসে আছেন। একপর্যায়ে মা জানতে লারলেন রাশেদ ও হৃদিতার বিয়ে দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী মাসেই তাদের বিয়ে।

ভরা মজলিসে মা আর কিছু বললেন না। রাশেদ ও তার বাবা চলে যাওয়ার পর হৃদিতার বাবা মাকে ডেকে বললেন, শুনো রায়হানের মা! আমি জানি তোমার ছেলে আমার মেয়েকে পছন্দ করতো। তোমাদের সাথে আমাদের পারিবারিক একটা দ্বন্দ্ব ছিল। তা স্বত্তেও আমি আমার মেয়েকে তোমার ছেলের সাথে বিয়ে দিতাম। কিন্তু তোমার ছেলে এসএসসি দুইবার ফেল করেছে। সামান্য একটা ব্যবসায় করে। আমার মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে এখন একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছে। আমার শিক্ষিত মেয়ে তোমার ছেলেকে বিয়ে করতে চায় নি। তাই আমি রাশেদের বাবাকে নিজেই বিয়ের প্তস্তাব দিয়েছি। ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে।

বিষন্ন মন নিয়ে মা ঘরে ফিরলেন। সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত শরীর নিয়ে আমি রাতে ঘরে ফিরলাম। মায়ের মুখের দিকে তাকাতেই কান্না চলে এলো৷ মা বলার আগেই আমি জানতে পেরেছিলাম হৃদিতা ও রাশেদের বিয়ের কথা। রাশেদ এসে জানিয়েছিলো। আমি এতটাই গোপনে ভালবেসেছিলাম যে, কাছের কোনো বন্ধুকেও বলতে পারিনি। তাই এটা রাশেদ পর্যন্ত জানিতে পারেনি।

মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, বাবা হৃদিতার চেয়ে সুন্দর মেয়ের সাথে তোকে বিয়ে দিবো। বুঝলাম, মা সন্তানের ব্যথায় ব্যথিত। আমি মাকে জড়ায় ধরে কাঁদলাম। আমি কষ্ট পেয়েছি তা আর মা'কে বুঝতে দিলাম না। কারণ, মা অনেক কষ্ট পাবে। শুধু এইটুকুই বললাম, হৃদিতা ও রাশেদের বিয়ে হলে আমার অনেক ভালো লাগবে মা!

হৃদিতা ও রাশেদ দুজন-ই আমার অনেক ভালো বন্ধু। তারা সুখে থাকবে, এটাই প্রত্যাশা করি। কাউকে ভালবাসলেই বিয়ে করতে হবে, এটা জরুরি না। বিয়ে না হলেও সেই মানুষকে ভালবাসা যায়। তাকে বিয়ের পরেও ভালবাসা যায়, যাকে বিয়ের আগে ভালবেসেছিলাম।

Sort:  

Congratulations @ohabrizvi! You have completed the following achievement on the Hive blockchain and have been rewarded with new badge(s) :

You published more than 20 posts. Your next target is to reach 30 posts.

You can view your badges on your board and compare yourself to others in the Ranking
If you no longer want to receive notifications, reply to this comment with the word STOP

Do not miss the last post from @hivebuzz:

Next Hive Power Up Day is November 1st 2020
Trick or Treat - Share your scariest story and get your Halloween badge

Hi @ohabrizvi, your post has been upvoted by @bdcommunity courtesy of @linco!


Support us by voting as a Hive Witness and/or by delegating HIVE POWER.

JOIN US ON