শিশুদের আয়ের উৎস যাচাই অত্যন্ত জরুরি

in BDCommunity4 years ago

আমাদের সমাজে এমন অনেক চিত্র দেখা যায়, বাড়িতে ছোট ছেলেদের কেউ টাকা কিংবা অন্যান্য দামি খাবার নিয়ে এলে কেউ জিজ্ঞেস করতে চায় না, কোথা হতে এই খাবারগুলো নিয়ে এসেছে। টাকা আর খাবার দেখেই খুশি হয়ে যায়। কিন্তু এই টাকা সৎপথে উপার্জন করেছে নাকি অসৎ পথ অবলম্বন করে দামি খাবার এনেছে তা অনেকেই মাথায় আনতেই চায় না। এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে আমাদের বাড়িতে।
SAVE_20201107_104247.jpg

Image

গতকাল বাড়িতে প্রবেশ মাত্রই দেখি সবাই বিরিয়ানি খাচ্ছে। সবার মুখে হাসি। আমার বিরিয়ানি খুব পছন্দ। যদি কেউ বিরিয়ানি অফার করে আমি পেটভরা থাকলেও না বলি না। বিরিয়ানি খাওয়ার প্রতি আমি যথেষ্ট উদার। আমি সেই খাওয়ায় অংশগ্রহণ করবো। এই বলে ফ্রশ হতে যাই৷ যেতে প্রশ্ন করলাম, কে এনেছে বিরিয়ানি?

আপু বললো, তোর ভাগনা। আমার ভাগনার বয়স মাত্র ১২ বছর। ক্লাস সিক্সে পড়ে। পড়ালেখায় ভালো। ভুল কাজ করতে কম দেখেছি। একটু শাসনে রাখি৷ আপুর প্রশ্নের উত্তর শুনে ফ্রেশ হতে না গিয়েই ফিরে আসি। জিজ্ঞেস করলাম ভাগনাকে, " কোথা থেকে এনেছো বিরিয়ানি? টাকা কোথায় পেয়েছো?"

প্রশ্ন শুনে ভাগনা থতমত শুরু করলো৷ বললো, আমার বন্ধু নিয়ে দিয়েছে। আবার প্রশ্ন করলাম, তোমার বন্ধু এতো টাকার বিরিয়ানি কেনো নিয়ে দিয়েছে? উত্তরে বললো, ওর বাবা টাকা দিয়েছে। এভাবে প্রায় আট-দশটা প্রশ্ন করলাম। এক পর্যায়ে সে বললো, মামা! আসিফ (ভাগনার বন্ধু) আজকে অনেক টাকা লাভ করছে। তাই খুশি হয়ে আমরা বিরিয়ানি খেয়েছি। তিন প্যাকেট ওর নিজের বাড়ির জন্য আর আমাকে দুই প্যাকেট বিরিয়ানি বাড়ির জন্য নিয়ে দিয়েছে৷ চিন্তা করলাম, প্রায় হাজার টাকার খরচ। এতো টাকা কিভাবে লাভ করলো?

আসিফ আমাদের এলাকার ছেলে। প্রতিবেশী সম্পর্কে ভাইজতা হবে। আমি বাইরে বের হয়ে খোঁজ নিলাম। বেশ কয়েকজন জুনিয়রকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি সে 'আইপিএল' জুয়া খেলে। এটা শুনে আমার অনেক খারাপ লেগেছে৷ কারণ, আসিফ আমার কাছে ইংরেজি পড়তো৷ আচরণে তেমন অভদ্রতা দেখিনি। পরিবার ভালো তাদের। কিন্তু এ কি হলো?

বাসায় সবাইকে বুঝিয়ে বলে দিলাম, এরপর যদি কেউ খাবার নিয়ে আসে তাহলে প্রথনে অবশ্যই জিজ্ঞেস করে নিবেন। সে কোথা থেকে এবং কিভাবে টাকা পেয়েছে? আর আমি আগামীকাল শুনবো, এরা টাকা কই পেয়েছে। চুরি করবেনা এটা বিশ্বাস আছে।

পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই সরাসরি চলে যাই আসিফদের বাড়ি। শুনি সে এখনো ঘুমিয়ে আছে। ভাবিকে বললাম, তাকে উঠিয়ে দিতে। তার মা তাকে উঠিয়ে দিলো। তাকে নিয়ে গেলাম এলাকার একটি হোটেলে। খিচুড়ি পাওয়া যায় সেখানে। দুজনে মিলে খিচুড়ি খেলাম। খাওয়া শেষ করে খোলা মাঠে যাই আমরা।

সরাসরি প্রশ্ন করলাম, আসিফ কবে থেকে 'আইপিএল'এ টাকা বাজি ধরা শুরু করছো? এটা শুনে ওর মুখ লাল হয়ে গেলো। অস্বীকার করে বললো, না আঙ্কেল। আমি বাজি ধরি না। আমি বললাম, দেখো আসিফ আমি সব শুনেছি। এমন মানুষের কাছে তথ্য নিয়েছি যে আমাকে মিথ্যা বলবেনা। তোমাকে আমি বেশি কথা বলবো না। তুমি বাজি খেলা শুরু করছো, এটা সত্যি। তোমাকে আমি কখনোই এভাবে ডেকে এসব কথা বলতাম না। যদি না তুমি আমার ছাত্র এবং আমার ভাগনার বন্ধু হতে।

গতকাল পর্যন্ত কি করেছো তা নিয়ে আর কোনো কথা বলবো না। বলতেও চাই না। তুমি কাদের সংস্পর্শে এসে এসব খেলা শিখেছো সেটা জানতে চাই না। শুধু এতটুকু জানতে চাই, তুমি এসব খেলা বাদ দিতে পারবা কি না? এক কথায় আমাকে এখনি উত্তর দিবা।

ছেলেটি কাঁদোকাঁদো কণ্ঠে বললো, আঙ্কেল আমার ভুল হয়ে গেছো। আর এসব খেলবো না। প্রথমবার ১ হাজার টাকা বাজিতে জিতে লোভ ধরেছিলো। পরে টানা ৬ বার টাকা লস করার পর গতকাল আবার ২ হাজার টাকা জিতেছি। তাই বিরিয়ানি খেয়েছিলাম আমরা। আর এমন করবো না আঙ্কেল।

ঠিক আছে ধন্যবাদ আসিফ। তোমার কাছে আমি এমনটাই আশা করেছিলাম। যদি খুব বেশি টাকার প্রয়োজন হয়, তাহলে টাকা আমার কাছ থেকে চেয়ে নিবা। কিন্তু এসব কাজে কখনো জড়িত হবে না। নাহলে প্রথমত আমার ভাগনার সাথে তোমাকে মিশতে দিবো না। দ্বিতীয়ত তোমাকে আমি যতটা স্নেহের চোখে দেখতাম সেই জায়গাটা আর থাকবেনা। আশা করি তুমি তোমার কথা তোমার বাবার মতোই হারে হারে পালন করবে। এই বলে বিদায় দিলাম।

আমি চাইলে তাকে রাগ দেখিয়ে আমার ভাগনার সাথে তার দূরত্ব তৈরি করতে পারতাম। কিন্তু চিন্তা করেছি তাকে একবার শুধরানোর চেষ্টা করে দেখার জন্য, তাকে বুঝালে যদি সে বুঝে।