অক্টোবরে করা Inktober এর ছবিগুলো দেখে মনে হলো এখানে পোস্ট করা যায়। "Inktober" Ink+October দুইটো শব্দ মিলিয়ে তৈরি হয়েছে। এর মানে হলো অক্টোবর মাসের প্রতিটি দিন একটা করে ছবি ইংক দিয়ে আঁকতে হবে। আঁকার জন্য ইংকটবের টিম থেকে অফিসিয়াল ৩১ টি থিম ঠিক করে দেয়া হয়।
তো এভাবে আঁকতে গিয়ে প্রতিদিনের একেকটা থিম আমার সাথে আমার কোন গল্প থাকলে তা অ্যাড করে দেয়ার চেষ্টা করেছি। নিচে ডিটেইলসে দিচ্ছি!
Day : 01
Theme: Backpack
কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমি সবসময় backpack এ comfortable. দেশে হোক কিংবা বিদেশে, কোথাও গেলে ফ্যান্সি ব্যাগের বদলে আমার কাঁধে ব্যাকপ্যাকই থাকতো। কারণ একে তো প্রয়োজনীয় সব জিনিস এটে যায় আবার হাত দুইটাও ফ্রি থাকে৷ কোথাও নামতে, উঠতে, বাইতে এজন্য সমস্যা হতো না।
এই ছবিটা আঁকতে গিয়ে কত জায়গায় ঘুরার মেমোরি যে ফ্ল্যাশব্যাক হচ্ছে! সাথে তারেক অণুর একটা কথা বার বার মাথায় আসছে,
"কোথাও ঘুরতে গেলে আমরা যেই টাকা খরচ করি এটা আসলে খরচ নয়, জীবনের সেরা ইনভেস্টমেন্ট। কারণ এই ভ্রমণ স্মৃতিগুলা আমাদের সাথে আমৃত্যু থাকবে। এছাড়া ফিরে এসে আমাদের নয়টা পাঁচটার জীবনের যাতাকলে যখন এই কাহিনীগুলা মনে পড়বে তখন নিজে থেকেই মন চাঙ্গা হয়ে যাবে। দামি গাড়ি কিংবা গয়নার আনন্দ এতদিন থাকে না যতটা একটা ভ্রমণে থাকে।"
Day : 2
Theme : Discover
সারাদিন ভেবেও discover দিয়ে কোন বেটার থিম পাচ্ছিলাম না। পরে ভাবলাম এই বছর আমি নিজের ব্যাপারে কি আবিষ্কার করেছি? হুট করে কেন জানি মাথায় রান্নাটা সবার আগে আসলো৷ কারণ এক বছর আগেও আমি নাশতা-পানি বানানো ছাড়া রান্নার তেমন কিছুই জানতাম না। এই কয়েক মাসে এই জিনিসটা বেশ ভাল আয়ত্তে চলে এসেছে। রান্না edible থেকে level up হয়ে appetizing পর্যায়ে চলে এসেছে 😛 তাই এটাকে তো one kind of discovery ই বলা চলে!
যদিও আম্মু আজকেও বলেছে
-রাফার মতন অলস আর খাপছাড়া মেয়ে কিভাবে নিজের বাসায় রান্নাবান্না করে কে জানে! হয়তো জামাইকে দিয়েই হাফ কাজ করায়।
😑 কত বড় অপবাদ!
Day 03
Theme: Boot
Boots নিয়ে ফ্যাসিনেশন মেলা কাল থেকে। ফরেন মুভি দেখে বুট জুতার উপর একটা দুর্বলতা কাজ করতো। কিন্তু বাংলাদেশের আবহাওয়া বুট পড়ার উপযোগী না। কারণ একে তো শীত থাকে বছরে মাত্র দুই মাস, আবার ধুলা আর কাদাতে বুটের অবস্থা যা তা হয়ে যায়। এই ভয়ে কেনার কখনও সাহস হয় নাই। তাছাড়া দাম দিয়ে একটা জিনিস কিনে ফেলে রাখতেও মায়া লাগে।
তো গত বছর শীতে জুতা কিনতে গিয়ে দেখি এক জোড়া সুন্দর চকচকে বুট আমার দিকে তাকায় আছে। লোভ সামলাতে পারলাম না। ভাবলাম, না কিনি, ট্রায়াল তো দিয়ে দেখা যায়। আর তখনই কালটা হলো।
পায়ে দেয়ার সময় মনে হচ্ছিল সিনড্রেলার কাঁচের জুতাও মনে হয় না ওর পায়ে এত পারফেক্টলি লেগেছিল। এ জুতা কেম্নে এখন ফেলায় যাই! শেষ মেস "ইন্ডিয়া গিয়ে পড়বো" নিজেকে এই বুঝ দিয়ে সাহস করে কিনে ফেললাম :3 বাট কপাল এত পোড়া যে ভিসার জন্য ফর্ম ফিলআপ করার সময় ইন্ডিয়ান অ্যাম্বাসিই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছিল 😑 আমার নতুন চকচকে বুটটা এভাবে কতদিন পরে থাকে কে জানে 🙁
Day: 04
Theme: Exotic
আমার বোন সেদিন নতুন এক ডেজার্ট আবিষ্কার করেছে। chocolate muffin এর উপর butterscotch ice cream. আমার সামনে বসে পুরাটা খেয়ে দেয়ে শেষ করে বলতেসে -আরেএ কি যে মজার একটা জিনিস ছিল! কফির ফ্লেবারের সাথে চকলেট মাফিনের কম্বিনেশন এত জোশ! অথচ আমাকে একবারও সাধলো না! 😑 "তোমাকে আরেকদিন এনে খাওয়াবো নে" বলে বুঝ দিসিলো।
এক দুই সপ্তাহ পর আবার অবশ্য বানায় দিলো। আগে কখনও খাই নাই বলে একটু অদ্ভুতই লাগছিল। exotic food এর তালিকায় এটা আসবে কিনা জানিনা বাট আমার কাছে নতুন এক্সপেরিয়েন্স ছিল।
পরে নেট ঘেঁটে দেখলাম কেকের সাথে আইস্ক্রিমের কম্বিনেশন বাইরের দেশে খুবই কমন একটা জিনিস। আইস্ক্রিম পার্লারে যাওয়া হয় না বলে এই জিনিস সম্পর্কে অজ্ঞাত ছিলাম। যদিও সেদিন তাবাকে ব্রাউনি নেয়ার সময় এর উপর আইস্ক্রিম দিয়ে দিবে কিনা জিজ্ঞেসা করছিল। আমি না না বলে ভাবছিলাম ব্রাউনির সাথে আইস্ক্রিম আবার কে খায়! (দিন দিন বুমার হয়ে যাচ্ছি কিনা কে জানে!)
day 5
theme: binocular
আমার এক্সটেনডেট ফ্যামিলি বিশাল!! আম্মুর ফ্যামিলির দিক দিয়ে সবার বড় আর বাবার দিক দিয়ে ছোট হওয়ায় দুই পাশ থেকেই অনেক আদর পেয়ে এসেছি। মামা আর ভাইয়াদের থেকে গিফটের কোন অভাব ছিল না। আম্মু শৌখিন হওয়ায় ছোটবেলায় আমাদের জন্মদিনগুলাও প্রতিবার সেলিব্রিট করা হতো। আমার ৪ কিংবা ৫ বছরের জন্মদিনে, বড় ভাইয়া টিউশনির টাকা দিয়ে আমাকে সেই রকম সুন্দর একটা বাইনোকুলার গিফট করলো। জিনিসটা যে খুব ভালো মানের এটা দেখলেই বুঝা যেতো৷ গাছপালা, পাখি, দূরের কোয়ার্টার, ছাদের দড়িতে লেগে থাকা ঘুড়ি কত কিছু যে এটা দিয়ে দেখতাম তার হিসাব নাই!
বাসায় বাচ্চারা আসলে বুক ফুলায় বাইনোকুলারটা ওদের দেখতে দিতাম। আমার পর টিকলিও অনেক দিন ওটা ব্যবহার করেছিল। আমি এখনও কোনো টয় স্টোরে গেলে বাইনোকুলার পেলে নেড়ে চেড়ে দেখি, কিন্তু আমারটার মতন কোয়ালিটি কোথাও পাই না।
দুই মাস আগে বাসা বদলানোর সময় খাটের নিচে কার্টনে হটাৎ বাইনোকুলারটা পেলাম। মাঝখান দিয়ে ভাঙ্গা। চোখে লাগায় দূরের জিনিস দেখার চেষ্টা করলাম। কাচটা হালকা ঘোলাটে হয়ে গেছে। মুছে টুছে আবার কার্টনেই রেখে দিলাম। বুড়া হয়ে গেলে স্মৃতি হাতরানোর জন্য তো কিছু জিনিস লাগবে!
Day 6
Theme: Trek
হাটার জন্য সবথেকে ভালো লাগে মাটির রাস্তা। আঁকাবাকা সরু মেঠো পথ। মাটির রাস্তা ভালো লাগার কারণ কড়া রোদ বা বৃষ্টি প্রতিটা ওয়েদারে মাটির ঘ্রাণ একেক রকম হয়। যেই ঘ্রাণ প্রতিদিন নিলেও কখনও এক ঘেয়েমি লাগে না, বরং এই ঘ্রাণের নেশাই আমাকে সুযোগ পেলে টানে।
তবে গেলো বছর নতুন এক ধরণের যেই রাস্তা আমাকে টানতে পেরেছে সেটা হলো মেঘালয়ের ডাউকির পাহাড়ি রাস্তা। ট্রেকিং এর সুবিধার জন্য ওরা পাথর কেটে চমৎকার করে পাহাড়ের চারপাশ দিয়ে এমন সুন্দর রাস্তা বানিয়ে রেখেছে। দুই দিকের সবুজ আর নিচে বিশাল ঝরণার আওয়াজ। পুরাটাই স্বর্গীয় এক অনুভূতি! জায়গাটা এত পছন্দের যে কালার করার লোভ সামলাতে পারি নাই!
Day 7
Theme: passport
আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে অনেক ভোগান্তি হয় এটা সবারই কম বেশি জানা৷ কিন্তু এই ভোগান্তি যে কতটা acute এটা টের পাই কয়েক বছর আগে পাসপোর্ট রিনিউ করতে গিয়ে।
আমার এমনিতে উত্তরা পাসপোর্ট অফিসে যাওয়া হলেও, এবার কি দেখে ওয়েবসাইট থেকে অটোমেটিক আগারগাঁওতে ডেস্টিনেশন দিয়েছিল জানিনা। আগে থেকেই জানতাম যে আগারগাঁও অফিসে ভয়াবহ ভিড় হয়, তাই বাবা একদম সক্কাল সক্কাল নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এত সকালে গিয়েও লম্বা লাইন দেখে আমার দিশেহারা অবস্থা। তাও নিজেকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম যে ছেলেদের লাইনের থেকে তো অন্তত আমারটা ছোট! ওনারা সবাই আদোও সেদিন পাসপোর্ট পেয়েছিল কিনা সন্দেহ!
সেদিন লাইনে দাঁড়ায় কত ধরনের কাহিনী যে পাসপোর্ট অফিসে হয় তা দেখছিলাম। তিন জনের জায়গায় একজন স্টাফ কাজ করে, তাও আবার এক ঘন্টা পর পর তারা ব্রেকে যায়। ওইদিকে আবার সার্ভার স্লো। এরমধ্যে ভেতরে দালাল দিয়ে ভরা৷ প্রতিটা লাইনে আলাদা আলাদা বকশিশ দিলে আর দাঁড়ায় থাকতে হবে না। লাইন ভেঙ্গে আপনার কাগজ সবার আগে পৌঁছায় যাবে।
আমি তখন আবার নিজস্ব উচ্চমার্গীয় আদর্শে বিশ্বাসী, এসব দূর্নীতি করে পাসপোর্ট নিবো না :3 তো কি আর করার, দাঁড়ায় দাঁড়ায় মানুষের তামাশা দেখতে থাকলাম।
ওয়েট করতে করতে আমার পিছনের এক আন্টির সাথে সেই খাতির হয়ে গেলো। একদম সারাটা দিন দাঁড়ায় থাকতে হয়েছিল বলে আন্টির সাথে আমার ফুল লাইফ হিস্ট্রি আদান প্রদান হয়ে গিয়েছিল। আন্টির বুয়েট পড়ুয়া ছেলে, ছেলে-বৌ আর তাদের ছোট মেয়ে নিয়ে বাইরে সেটেল্ড। আন্টিও তাদের সাথে থাকার জন্য পাসপোর্ট রিনিউ করতে এসেছে। সেদিন আন্টির মতন ভালো মনের একজন মানুষের সাথে গল্প করার সুযোগ না পেলে হয়তো দিনটা সারভাইভ করতে পারতাম না! যাওয়ার সময় আন্টি নিজে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার আইডি চাইলো।
এখনও আন্টির নাতনির কুটু ফ্রক পড়া ছবি যখন মাঝে মাঝে ওয়ালে আসে দেখতেই ভালো লাগে!
Day 8
Theme: Hike
এখনও হাইকিং নিয়ে সেভাবে এক্সপেরিয়েন্স হয়নি, তবে One day, inshaAllah!
Day 9
Theme: Sun
বিয়ের পর আমাদের প্রথম ঘুরতে যাওয়া হয় বালিশিরা রিসোর্টে। প্রকৃতিপ্রেমী হওয়াতে এক দেখাতেই জায়গাটা আমাদের মনে ধরে যায়। কারণ প্রকৃতিকে ধ্বংস না করে বরং নেচারকে মূল এলিমেন্ট রেখেই ওরা রিসোর্টটাকে সাজানোর ট্রাই করেছে। বিশাল বড় জায়গার ভেতর নানা ধরণের গাছপালা। গাছগুলাকে দেখেই মনে হচ্ছিল খুব যত্ন নেয়া হয়।
একেকটা কটেজের নাম ছিল বিখ্যাত সব বাংলা বইয়ের নাম অনুসারে। যেমন আমাদের কটেজের নাম ছিল "এইসব দিনরাত্রী"। আমাদের রুমে হুমায়ূন আহমেদের এই বইটাও ছিল যেটার পেছনে সবাই তাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা লিখে যেতো। আমিও আসার সময় ছোট্ট করে লিখে এসেছিলাম। পারসোনাল পুল সহ রুম পেয়ে আমাদের অবস্থা ছিল সোনায় সোহাগা 😄
বালিশিরার ভেতর দিয়েই উঁচু টিলা বেয়ে ছোট একটা ঝিরিপথ নেমে গেছে। এর পাশেই একটা বাঁশের মাচা। আর এই জায়গাটাই ছিল আমার সবচেয়ে পছন্দের স্পট। ঝিরির কুলকুল পানির আওয়াজের সাথে বাঁশপাতায় বাতাসের শব্দ। শুনে মনে হতো স্বর্গে আছি!
এই জায়গারই পাশে একটা হ্যামক আর বিশাল বড় এক দোলনা ছিল। একদিন সকাল ৭ টার সময় উঠে হালকা রোদে বের হয়েছিলাম এখানটায় এসে বসার জন্য। নরম সুন্দর একটা মিষ্টি রোদ এত সুন্দর করে চারপাশে ছড়ায় পরছিল!
এরপর অনেকদিন হয়ে গেছে সূর্যের আলোকে এত আরাম করে উপভোগ করা হয় না! যদিও সূর্যকে ছবিটাতে আনতে পারি নাই কিন্তু সূর্যকে থিম ধরলে আমার এইদিনটার কথাই মাথায় আসে!
Day 10
Theme: Nomadic
"ইহার চেয়ে হতেম যদি
আরব বেদুয়িন!
চরণতলে বিশাল মরু
দিগন্তে বিলীন।"
ভাবছিলাম পুরো ইংকটবের ছবি এই পোস্টে দিয়ে দিবো।কিন্তু প্রথম ১০ দিনের ছবি দিয়েই ওয়ার্ড লিমিট ১৩০০+ হয়ে গেল। বাকি ছবি নিয়ে তাই পরের পোস্টে হাজির হচ্ছি!