Inktober এর শেষের দশদিনের ছবি নিয়ে আজকের এই পোস্ট। সারা মাস জুড়ে, ঢাকার বাইরে তিন জায়গায় ঘুরতে গিয়েও ইংকটবেরটা শেষ করতে পেরেছিলাম বলে নিজেকে বাহবা দেই। তবে ইংকটবের শেষ হয়ে যাওয়ার পর কিছুটা মন খারাপ ছিল। মনে হচ্ছিল আরও কিছুদিন এভাবে আঁকতে পারলে ভালো লাগতো :P
Day 21
Theme: Rhinoceros
ছোটবেলায় আমার কলম সংগ্রহের শখ ছিল। পরিচিত কেউ দেশের বাইরে গেলেই ওইখানকার কলম নিয়ে আসতে বলতাম। আবার মামারাও রেগুলার বেসিসে কলম দিতো, এর মধ্যে থেকে যেগুলা খুব সুন্দর, ইউনিক সেগুলা কলমদানিতে সাজিয়ে রাখতাম। আমার টেবিলের উপর দুই তিনটা কলমদানি থাকতো। সবগুলাই ছিল নানা ধরণের কলম দিয়ে ভরা। আবার যেগুলো কলমদানিতে জায়গা হতো না সেগুলা থাকতো ড্রয়ারে।
আমার রুমে কোন মেহামান আসলে রংবেরঙের এই কলমগুলা দেখাতাম। এর মধ্যে একটা কলম ছিল যেটার পেছনে একটা মিনিয়েচার গন্ডার ছিল। গন্ডারটা খুবই নিখুঁত কাজ করে বানানো ছিল। মজার জিনিস হলো গন্ডারটা পেন থেকে আলাদা করলে এর নিচে সেই গন্ডারেরই একটা সিল দেখা যেতো। কাগজে ছাপ দিলে লাল রঙের কুটু গন্ডারটার একটা ছাপ্পা হয়ে যেতো। কলমটা নানিবাসায় কোন একটা মামার থেকেই নিয়েছিলাম।
তো একদিন একটা পিচ্চি ছেলে বাসায় আসলো। ওকেও অন্যদের মতন করে আমার কলমগুলা দেখাচ্ছিলাম। পরে জানলাম ওরও কলমের প্রতি অনেক আগ্রহ। ভালো কথা। তো ওরা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম আমার কলমদানির প্রায় সব কলমই গায়েব। টেবিলে, আশেপাশে কোথাও যখন কলমগুলা দেখলাম না তখন বুকটা ধক করে উঠলো। অনেক খুঁজেও কোন হদিস পেলাম না। পরে বুঝলাম কলমগুলা ওই পিচ্চিটা মেরে দিয়েছে। আমি যে কি পরিমাণ কষ্ট পেয়েছিলাম!! বছরের পর বছর একটা একটা করে সংগ্রহের জিনিস যখন দুম করে এভাবে হারিয়ে যায় তখন কতটা খারাপ লাগে বলে বুঝানো যায় না। প্রায় ১০/১২ বছর আগের হলেও এই কাহিনী এখনও মনে পড়লে মনটা খারাপ হয়ে যায়।
এরপর থেকে আমার পেন কালেক্ট করার আগ্রহ হারায় যায়। টেবিল ঘাটলে এখনও কিছু কলম পেলেও ওই পুরনোগুলাই চোখে ভাসে।
Day 22
Theme : Camp
ক্যাম্পিং করার শখ কার না আছে!! আমাদের দেশে সেরকম সুবিধা আর নিরাপত্তা না থাকায় ক্যাম্পিং করা হয়ে উঠে নাই। বিয়ের পর দেখি ওর আর আমার দুইজনেরই সেইম শখ :3 ও শুরুর দিকে প্রায়ই বলতো যে একটা টেন্ট কিনবো, কিনে কোথাও না যাওয়া হলেও ছাদে টানায় রাত কাটাবো 😄
ah, those days!
Day 23
Theme: Rust
দস্যুর গলার বেল্টের ঘন্টাটায় জং ধরে গেছে। অন্যান্য সময়ে বেল্ট একটু পুরোনো হয়ে গেলেই আমার বোন নতুন বেল্টের অর্ডার দিয়ে দিতো। আমি অলওয়েজ একটা পার্পেল কালার রাখতে বলতাম। যদিও দস্যুকে সব রঙেই মানাতো তবুও পার্পেলে ওকে বেশি এলিগেন্ট লাগতো।
দস্যু চলে যাওয়ার পর ওর পার্পেল কালারের বেল্টটা আমার কাছে নিয়ে আসি। এমন ভাবে বেল্টটা ধরার ট্রাই করি যাতে ঝুনঝুনির শব্দ না হয়। আওয়াজটা শুনলেই মনে হয় দস্যু হয়তো কোমরটা টেনে টেনে আমার পাশে চলে এসেছে, হাড্ডি বা মাছের কাটা খাওয়ার লোভে। এখনও মাঝে মাঝে হুট করে মনে হয়, ও হয়তো ডাইনিং রুমে বাঘের মতন থাবা মেরে বসে আমার দিকে তাকায় আছে। খাবার শেষে হাড্ডি ফেলে দিতে মায়া লাগে।
বাবা আম্মু ওর কবরের উপরে একটা ছোট নিম গাছের চারা লাগিয়ে দিয়েছে। যেখানে সবসময় আমার পায়ের কাছে এসে রাতে ঘুমাতো সেখানে এখন এত দূরে অন্ধকারের মধ্যে একলা কিভাবে ঘুমাচ্ছে ভাবি। ওকে শেষ বারের মতন আদর করতে না পারার আফসোসটা হয়তো সারাজীবনই থেকে যাবে!
Day 24
Theme : Expedition
দুইদিন আগে একটা মুভি দেখলাম, "Little Miss Sunshine". ফ্যামিলি-ড্রামা-কমেডি জনরা। খুবই wholesome একটা মুভি। ছোট মেয়ে child beauty pageant এ কমপিট করার সুযোগ পাওয়ায়, পুরো পরিবার মিলে বের হয় প্রোগ্রামে এটেন্ড করার উদ্দেশ্যে। মিনি ভ্যানে করে পাড়ি দেয় বিশাল পথ। আর এই জার্নিটাই মেইন সেটিং ছিল পুরো সিনেমা জুড়ে৷
মেইন মোটিভ হিসেবে দেখানো হয় - যত কিছুই হোক না কেন, পরিবার যদি পাশে থাকে তাহলে যেকোনো ধরণের সমস্যাই সামলে নেয়া যায়। ফ্যামিলির থেকে বড় সাপোর্ট অন্য কিছু দিয়ে আর হয় না!
যদি জিজ্ঞেসা করা হয় কোন পার্টটা আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে তাহলে বলবো ছোট মেয়েটার সাথে ওর দাদার একটা কনভারসেশন:
"Grandpa, I don’t want to be a loser.
Because daddy hates losers."
"You know what a loser is? A real loser is somebody that’s so afraid of not winning, they don’t even try.
Now, you’re trying, right? Well, then, you’re not a loser."
Day 25
Theme: Scarecrow
যখন প্রথম কাকতাড়ুয়া দেখেছিলাম তখন থেকেই এই জিনিসটার উপর একটা ভয় ঢুকে গিয়েছিল। ছোটবেলায় কোনো কারণ ছাড়াই এটাকে ক্ষেতের মধ্যে দেখলে ভয় ভয় লাগতো। কাক তাড়ানোর পাশাপাশি এ জিনিস আমাকেও তাড়া করে বেড়াতো!
একটু বড় হওয়ার পর আবার অন্য ভাবনা মাথায় আসতো। কাকতাড়ুয়ার গায়ের শার্ট বা যেই জামাটা থাকতো তার পিছনের গল্পটা কি? হয়তো এই শার্ট জমিটার মালিকের। পুরনো হয়ে গিয়েছিল বলে দিয়ে দিয়েছে। বা ক্ষেতে কাজ করা বর্গাচাষীটার নিজেরই। বছরে ১/২ টা জামা কেনা এই মানুষটার খুব পছন্দের শার্টটা হয়তো অতি ব্যবহারে ছিড়ে গেছে। কাকতাড়ুয়াটাকে পড়ায় দিতে হয়তো মায়াই লাগছিল! এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কাহিনী মনে মনে বানাতে ভালই লাগতো!
পুনশ্চ : বড় হয়ে দেখলাম হলিউডে হরর মুভির একটা এলিমেন্টই হলো এই scarecrow! আমি তাহলে একাই ভয় পাই না, big relief!
Day 26
Theme : Camera
আমরা জন্মের পর থেকেই বাসায় ক্যামেরা দেখছি। আর সেটা আম্মুর বদৌলতে। আম্মুর ছবি তোলা হলো খুব শখের একটা কাজ। আমার নানারও এই শখ ছিল। এই সুবাদে আমাদের ফ্যামিলি ছবির অ্যালবামের কালেকশন বিশাল! জন্মের পর থেকে আমাদের প্রতিটা স্টেজের ছবির আলাদা অ্যালবাম করা আছে।
আম্মুর তখন ছিল রিল টানা ক্যামেরা। আমাদের কারও জন্মদিন, স্কুলে ক্যালচারাল প্রোগ্রাম বা অন্য কোনো স্পেশাল অকেশন থাকলে আম্মু ফুজি ফিল্মের দোকান থেকে নতুন রিল নিয়ে আসতো। এক রিলে হয়তো ৩০/৪০ টার মতন ছবি তোলা যেতো। খারাপ লাগতো যখন রিলে কোন সমস্যা থাকার কারণে ৩/৪ টা ছবি নষ্ট হয়ে যেতো! আম্মু এই জন্য আমাদেরকে কখনোই ছবি তুলতে দিতো না, সব সময় নিজে তুলতো। প্রাইমারিতে থাকতে একবার কি দুইবার বিপদে পড়ে আমাকে ২/১ টা ছবি তুলে দিতে বলেছিল। তাও আবার ফ্রেম ঠিক করে ভালো মতন দেখায় দিয়েছিল। এতটাই সাবধানে ছবি ক্লিক করেছিলাম যে ওই মোমেন্টগুলা এখনও মনে আছে!
এরপর আমার হাই স্কুলে পড়ার সময়ে আম্মু ডিজিটাল ক্যামেরা কিনে। নীল রঙের চমৎকার শেডের একটা সনি ডিজিটাল ক্যামেরা। তখন থেকে ক্যামেরা আমাদেরও হাতে আসা শুরু করে। যেহেতু রিলসের ঝামেলা আর নাই তাই ইচ্ছা মতন ছবি আর ভিডিও করার সুযোগ পেতাম। আমাদের পিসির অর্ধেকেরও বেশি জায়গা দখল করে রেখেছে এই ছবিই! আর কপাল ভালো পিসি কয়েকবার নষ্ট হলেও ছবিগুলা রিমুভ হয় নাই।
ডিজিটাল ক্যামেরা আসার পর আম্মু আর আগের মতন ছবি ওয়াশ না করলেও স্পেশাল কিছু ছবি সিলেক্ট করে করতো। আমাদের নিজেদের বানানো কত মজার ভিডিও যে আছে, সেগুলা ভ্লগ হিসেবে আপ্লোড করলে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যাবো শিয়র!
এরপর স্মার্টফোনের যুগ চলে আসলো, ক্যামেরাটারও ব্যাটারি বার বার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ওটার ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। এখন আমার বোন ফোনে ওর কোন ছবি তুলতে হলে ও আম্মুকে ফ্রেম কিভাবে ধরতে হবে সেটা দেখায় দেয় 😄 দিন কিভাবে বদলায় গেলো!
পুনশ্চঃ আমাদের খুব ইচ্ছা ছিল একটা ডিএসএলার কেনার। সেই সুযোগ আর হয়ে উঠে নাই। তবে ইচ্ছা এখনও আছে! দেখা যাক সামনে কেনা হয় কিনা!
Day 27
Theme: Road
পঞ্চগড়ের সব থেকে যে জিনিসটা ভালো লেগেছে সেটা হলো রাস্তা! পঞ্চগড়-তেতুলিয়া-বাংলাবান্ধা কোনখানেই একটুও বাম্পি রোড ছিল না। কোথাও নেমে স্পট দেখার থেকে গাড়িতে করে জার্নিটাই ভালো লাগছিল। এটা যে শুধু স্মুদ রাস্তার জন্য তা না, যতদূর চোখ যায় রোডের দুপাশে খালি সবুজ! ধান ক্ষেতের পাশাপাশি প্রচুর আখের ক্ষেত ছিল, যেখানে আখের চারার চাষ করা হচ্ছিল। বুঝাই যাচ্ছিল দেশে আখের বড় একটা সাপ্লাই আসে এই পঞ্চগড় থেকে।
Day 28
Theme: Jumbo
এত সুন্দর "personal selfcare companion" সামনে থাকতে কি আর baymax কে লাগে!
Day 29
Theme: Navigator
দুইদিন আগে মিলিটারি মিউজিয়ামে গিয়েছিলাম। খুবই চমৎকার একটা জায়গা৷ আর্মিদের হাতে আছে বলেই হয়তো এত well decorated and organized museum. কারণ এমনিতে দেশের অন্যান্য যাদুঘরের সাথে তুলনা করলে আধুনিকতার দিক দিয়ে এটা সবগুলার থেকেই এগিয়ে।
underwater নিয়ে আমার fascination থাকায় নেভি আর মেরিন ফোর্সটা সবচেয়ে ভাল লেগেছে। আর এই সেকশনটা অন্যগুলার থেকে বেশি আকর্ষণীয় করে বানানো হয়েছে। গেলে সাবমেরিনের ভেতরে ঢুকার একধরণের লাইভ এক্সপেরিয়েন্সও আপনার হয়ে যাবে!
এই তিন ফোর্সের মধ্যে নেভির জন্য আমার একটু মন খারাপ হয়। ডিউটি থাকলে মাসের পর মাস এমনকি বছরও পার হয়ে যায়, ফ্যামিলির সাথে দেখা হওয়ার সুযোগ হয় না। তাদের পরিবারও হয়তো এমন পরিবেশের সাথে খাপ খেয়ে নেয়!
Day 30
Theme: violin
বেহালা শেখার সুপ্ত বাসনা অনেক দিন থেকে। এই মিউজিকাল ইন্সট্রুমেন্টটার সাউন্ড অন্য এক জগতে নিয়ে যেতে পারে! অনেক প্ল্যান করেও শেখার শখ বাদ দিয়েছিলাম কারণ এই জিনিস শেখা বেশ কঠিন!
অনেককেই দেখেছি খুব শখ করে কিনে শেষ পর্যন্ত হয় শোপিস হিসেবে রেখে দেয় না হলে সেল করে দেয়। এখন আমি গরিব মানুষ, এত টাকা দিয়ে কিনে ফেলে রাখার রিস্ক নিতে পারি নাই। সেকেন্ড হ্যান্ড ভায়োলিনও কিনতে চেয়েছিলাম বাট ভালো হবে কিনা ভেবে আর নিই নাই৷ এখন মাঝে মধ্যে আফসোস হয়, কারাতে কিডের পিচ্চি পারলে আমিও হয়তো পারতাম!
Day 31
Theme : landmark
লান্ডমার্ক হিসেবে দেশের শহীদ মিনারটাই বেশি আইকনিক লাগে। প্রথম শহীদ মিনারে যাওয়ার কাহিনী এখনও স্পষ্ট মনে আছে৷ ছোটবোন সেদিন কেবল হলো, ঢাকা মেডিকেলে। আমার তখন পাঁচ বছর। সকালে বড় ভাইয়া আর সেজ মামা আমাকে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছিল। যাবার আগে শাহবাগ থেকে আম্মুর জন্য একটা বড় দেখে ফুলের তোড়া নিয়ে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি আম্মুর পাশে একটা দুধের পোটলার মতন রঙের একটা পিচ্চি শুয়ে আছে। গায়ে নানির বানায় দেয়া নিমা!
হসপিটাল থেকে ফেরার পথে ভাইয়া আর মামা শহীদ মিনার দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল। ছোট ছিলাম বিধায় শহীদ মিনারটা আমার কাছে তখন বিশাল বড় লেগেছিল। সিড়ির কাছে ওখানে পা দুলায় বসেছিলাম।
এরপর শহীদ মিনারের আশপাশ দিয়ে কতবার যাওয়া আসা হলো, ক্যাম্পাস লাইফও কাটানো হয়ে গেলো কিন্তু এইভাবে পা দুলায় কারও সাথে বসার আর সুযোগ হয়ে উঠে নাই। যার জন্য টিকলির জন্মের দিনটাই এখনও স্পেশাল হয়ে আছে।