অসম্পূর্ণ মানুষ

in BDCommunity7 months ago

"এত ধোঁয়া কিসের?"

"ডোরিনী! ঠিকাছো তুমি?"
রুবাব নিজের বিছানায় বসেই চিৎকার করে উঠল। আবার ডোরিনীর কিছু হয়নি তো?

রুবাব ভাবছে উঠে এসে দেখবে কিনা। গত বছর গ্রীষ্মে ঢাকার তাপমাত্রা যখন ৫০ ডিগ্রী ছাড়িয়েছিল, ডোরিনীর সেবার খুব কষ্ট হয়েছিল। ওর ম্যানুফ্যাকচারার কোম্পানি তে যোগাযোগ করে ওর জন্য ওষুধ পথ্য কিনতে হয়েছিল রুবাবের। ডোরিনী গরম একদম সহ্য করতে পারে না।

রুবাব উঠে এল। ধোঁয়া টা আসছে কিচেন থেকে। কিচেনে রুবাব ছাড়া কেউ যায় না। ঘরে লোক বলতে ও আর ডোরিনী। কিচেনে তাহলে কে?

রুবাব কিচেনে চলে এল। ডোরিনী স্টোভ অন করে ঝুঁকে কি জানো করছে। সাদা কিছু দেখা যাচ্ছেস্টোভের উপর। ধোঁয়া ওখান থেকেই আসছে। "এ কি??! কী করছো?"

image.png
edited by canva

ডোরিনী ফিরে পিছনে তাকালো।

ডোরিনী রুবাবের স্ত্রী। ও একজন হিউম্যানয়েড রোবট। রুবাবের যখন পক্স হয়, তখন ওর ফ্ল্যাটে ওর দেখাশোনা করার জন্য ওর বন্ধুরা ডোরিনী কে এপয়েন্ট করে। একা নিঃসঙ্গ রুবাব ডোরিনীর কাজ ও সেবাযত্নে মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমে পড়ে। বাংলাদেশে তখনও 'যন্ত্রমানব বিবাহ নীতি' আইন প্রচলন ছিল না। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ডোরিনীকে স্ত্রী হিসেবে পেয়েছে সে।

"শুভ জন্মদিন প্রিয়তম। পৃথিবীর যা কিছু সুন্দর, নিষ্পাপ, পবিত্র সব তোমার হোক"।
এক নিঃশ্বাসে যান্ত্রিক গলায় বলে গেল ডোরিনী। ওর কথায় আনন্দের অনুভূতি বোঝা যায়।

"ধন্যবাদ প্রিয়তমা, কিন্তু আগে বলো তুমি কিচেনে কী করছো? তোমার না তাপের সামনে যাওয়া বারণ?" "আমি দুঃখিত, কিন্তু আজ তোমার জন্মদিন, একটি বিশেষ দিন। তুমি একসময় বলেছিলে তোমার শৈশবের জন্মদিন শুরু হতো তোমার মায়ের বানানো পায়েশ খেয়ে, আমি পায়েশ বানানোর চেষ্টা করছিলাম যাতে তোমার আজকের জন্মদিনটিকে স্পেশাল করে তুলতে পারি। প্রোগ্রাম টার্মিনেট হতে আরো ৩ মিনিট বাকি, আশা করছি এরপরই পায়েশ খেতে পারবে তুমি। বলো এটা কি দেখতে তোমার মায়ের বানানো পায়েশের মত হয়েছে?"

রুবাব হতভম্ব হয়ে গেল ডোরিনীর কথা শুনে। মায়ের হাতের পায়েশ খেয়ে জন্মদিন শুরু করার কথা সেই কবে বলেছে ডোরিনীকে। ও সাধারণত রাতে নিজের মেমোরি ক্লিন করে ব্যাটারী চার্জ করতে যায়। পায়েশের কথা টা ও মেমোরি তে সেভ করে রেখেছে!!!

রুবাবের চোখে জল চলে এল। তার মা মারা গিয়েছেন আরো ২০বছর আগে। গত ২০ বছরে নিজের জন্মদিনই

কখনো মনে রাখতে পারেনা রুবাব, পায়েশ খাওয়া তো দুরস্থ! রোবট স্ত্রীর থেকে শুধু বন্ধুত্ব আর যত্নই আশা করে সে, কিন্তু 'ভালোবাসা' বলেও কিছু যন্ত্রমানবদের মাঝে থাকে, এটা ও আশা করেনি।

"ডোরিনী, তুমি সত্যিই এত ভালোবাসো আমাকে?"

ভালোবাসা শব্দ টা ডোরিনীর মেমোরি তে সেভ নেই। ওর একটু সময় লাগল প্রসেস করতে।

"পৃথিবীর সকল ভালোবাসা তোমার জন্য।"

রুবাব দৌঁড়ে এসে জাপটে ধরল ডোরিনীকে।

৩ মিনিট হয়ে গিয়েছে। ডোরিনী পায়েশের প্যানের দিকে তার আঙ্গুল তাক করল। রুবাব ভীষণ খুশি। এক চামচ পায়েশ মুখে নিয়ে নিজেই বলে উঠল, "হ্যাপি বার্থডে রুবাব"।

"তোমার অফিসের সময় হয়ে গেলো।" -প্রিসেট প্রোগ্রাম। শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টায় ডোরিনী এই কথা

বলে এবং রুবাবের স্ন্যাকস টেবিলে এনে দেয়, ইউনিফর্ম আয়রন করে দেয়, জুতা পরিষ্কার করে দেয়।

আজ রুবাবের অফিস যেতে ইচ্ছা করছেনা।

ডোরিনীকে বলল, "আজকে অফিসে যাব না। চল আমরা গল্প করি আজকে সারাদিন।" ডোরিনীর নিজের কোনো

গল্প নেই। সে অসম্ভব ভালো শ্রোতা। রুবাব তার গল্প বলে, স্কুলে কোন বন্ধুর চিপসের প্যাকেট মেরে দিয়েছিল সেই গল্প, কলেজে কোন মেয়েকে প্রেমপত্র লিখত, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সারারাত জেগে কত নাটকের রিহার্সাল করত সেসব গল্প

Have a good day!!!

Thanks for reading my blog. Please share your valuable thoughts in the comment section. Happy reading.

image.png